পুরনো বাঁশের কঞ্চি আর পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরেই দিন কাটছে রোয়ানুর আঘাতে ঘরহারা পেকুয়ার দুই হাজার পরিবারের। এর ওপর ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটার পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এতে দুর্ভোগের শেষ নেই দুর্গতদের। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ১২ দিন পেরিয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া, ষাটদুনিয়া পাড়া, টেকপাড়া, ফেরাসিংগাপাড়া, পেকুয়ার চর, নতুনঘোনা, মগনামা ইউনিয়নের ঘাট মাঝিরপাড়া, উত্তরপাড়া, পুরাতন বহদ্দারপাড়া, হারুন মাতবরপাড়া, বৃন্দারপাড়া, লালমিয়াপাড়া, হারঘরপাড়া, শরেঘানা, রাজাখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনা, বকশিয়াঘোনা, চরিপাড়া, মৌলভীপাড়া, আমিলাপাড়া, পালাকাটা, দশেরঘোনা, নতুনপাড়া, বদিউদ্দীনপাড়া, বামুলাপাড়া, সুন্দরীপাড়া, মাতবরপাড়া ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ছিরাদিয়া, বিলাহাচুরা, গোঁয়াখালী, জালিয়াখালী, হরিণাফাঁড়ি, নন্দীরপাড়াসহ চার ইউনিয়নের ৪০ গ্রামের মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই এখন এসব ঝুপড়ি ঘর।
উজানটিয়ার পেকুয়ার চর গ্রামের কুলছুমা বেগম দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবের সময় জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় আমার বসতবাড়িটি। ভেসে যায় ভেতরে থাকা আসবাবপত্রসহ সব মালামাল।’
কুলছুমার স্বামী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। সংসারে আছে তিন কন্যা ও এক ছেলে। দিনমজুরের কাজ করে কোনোমতে সংসার চালান তিনি। এই অবস্থায় নতুন করে কীভাবে বসতবাড়ি তৈরি করা যাবে সেই দুশ্চিন্তা ভর করছে তাঁকে। পাশের বাড়ি থেকে লবণ মাঠে ব্যবহৃত পলিথিন ও পুরনো বাঁশের কঞ্চি খুঁজে নিয়ে ঝুপড়ি ঘর বেঁধে দিন কাটাচ্ছে কুলছুমার পরিবার।
রাজাখালীর বকশীঘোনার বৃদ্ধ মোস্তাক আহমদ (৬০) নিজের ভিটে দেখিয়ে দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘এখানে সুন্দর একটা বাড়ি ছিল আমার। পরিবারের সব সদস্য অনায়াসে থাকতে পারত। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে সব ছারখার হয়ে গেছে। এখন পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে ভিটে ছেড়ে কোথাও যেতে না পারায় ঝুপড়ি ঘরে রাত কাটাচ্ছি।’
উজানটিয়ার কুলছুমা ও রাজাখালীর মোস্তাকের মতো চার ইউনিয়নের বসতবাড়ি হারানো বেশ কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ও ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে বসতবাড়ি হারিয়ে সবাই দিশেহারা। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে দিনে দুবার জোয়ার-ভাটার পানি ঢুকায় ভিটের ওপর নতুন করে বসতিও নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
ক্ষতিগ্রস্ত চার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মগনামার শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম, উজানটিয়ার শহীদুল ইসলাম, রাজাখালীর ছৈয়দ নূর ও পেকুয়া সদরের বাহাদুর শাহ দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, রোয়ানুর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া চার ইউনিয়নের সম্পূর্ণ বসতবাড়ি হারানো দুই হাজার পরিবারের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ কী দুর্বিষহ যন্ত্রণায় সময় পার করছে তা বুঝানো যাবে না। তাঁরা যাতে নতুন করে পুনর্বাসিত হন, সেজন্য সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়া উচিত। তবে এর আগে টেকসইভাবে মেরামত করতে হবে ভাঙা বেড়িবাঁধগুলো।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মারুফুর রশিদ খান দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘রোয়ানুতে বসতবাড়ি হারানো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নেওয়া হয়। এর পর সেই তালিকা পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যাতে বসতবাড়ি নির্মাণের মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়, সেজন্য আর্থিকভাবে সহায়তা দেওয়া হবে।’
পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ চৌধুরী রাজু দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারকে অবশ্যই পুনর্বাসন করতে হবে। তা না হলে দুর্গতরা আরো ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবেন। তাঁরা গত ১২ দিন ধরে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’
তবে এসব পরিবারকে পুনর্বাসনের পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাঙা বেড়িবাঁধ টেকসইভাবে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে হবে বলে মনে করেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত।
পাঠকের মতামত: