ঢাকা,শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

দুর্নীতি-অনিয়মে হাবুডুবু কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল : কর্তৃপক্ষ নীরব

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ::

নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে ২৫০ শর্য্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল। দিনের পর দিন এমন অবস্থা চলতে থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই। সরকার পরিচালিত এ হাসপাতালটিতে রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা থাকলেও টাকা ছাড়া সেবা মেলে না। ‘দালাল’ ও পেকুয়া সমিতি নামে ‘সিন্ডিকেট’ চক্র জিম্মি করে রেখেছে পুরো ব্যবস্থাপনাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সিন্ডিকেট চক্রটি বেশ প্রভাবশালী। সাবেক চারদলীয় ঐক্যজোট সরকারের আমলে বাগানমালী, নিজ বেতন ও বিনা বেতনে চাকরী নেওয়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের আর্শীবাদপুষ্ট চক্রটির ক্ষমতা এতই শক্তিশালী যে তারা স্বাস্থ্য বিভাগ কিংবা সিভিল সার্জন অফিসের নির্দেশও মানে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘হাসপাতালটিতে সিন্ডিকেট চক্রের কারণে এমন অবস্থা হয়েছে যেন কুকুরে লেজ নয়, লেজই নাড়াচ্ছে কুকুরকে।’ কক্সবাজার জেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জেলা শহরের এ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। প্রথম দিকে ৫০ বেড থাকলেও বর্তমানে বেডের সংখ্যা ২৫০টি। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটিতে নানা ধরনের অনিয়ম আর দুর্নীতি চলে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। হাসপাতালটিতে বেশ কয়েকটি বিভাগ নামেমাত্র থাকলেও সেখানে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। দন্ত বিভাগে গিয়ে কেউ চিকিৎসা পেয়েছেন এমন নজির সাম্প্রতিক সময়ে নেই।
রোগীদের অভিযোগ, এ বিভাগে গেলে নানা অজুহাতে তাদের সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়। সুকৌশলে এ বিভাগের ডাক্তারের প্রাইভেট ক্লিনিকে দেখা করার কথা বলা হয়। বিভিন্ন সূত্রে আরও নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাসপাতালটিতে অত্যাধুনিক একটি ‘আলট্রাসনোগ্রাম’ মেশিন থাকলেও সেটি কার্যত অকেজো করে রাখা হয়েছে। ফলে রোগীদের বাইরে থেকে আলট্রাসনো করতে হচ্ছে। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালটিতে সবচেয়ে ভালো এক্স-রে মেশিন থাকলেও সেটি ‘নষ্ট’ কিংবা ‘এক্স-রে পেপার নেই’ বলা হয়। দালালদের মাধ্যমে বাইরে থেকে এক্স-রে করতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালে যে কয়টি বিভাগ রয়েছে তার মধ্যে এক্স-রে বিভাগটি বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। এ বিভাগে ডাঃ ওসমান নামের একজন নিয়োগপ্রাপ্ত থাকলেও বেশির ভাগ সময় তিনি অফিসে থাকেন না। সারা মাসই বাইরের এক ব্যক্তি এ বিভাগের সব কাজ করেন। তাকে টাকা না দিলে কোনো কাজ হয় না। এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাড়া চাকরি করার নজির সৃষ্টি করেছে এ হাসপাতাল। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগের পর অভিযোগ জমা হলেও সে অভিযোগের কোনো ফল মেলেনি।
অভিযোগ অনুযায়ী, অফিস সহকারী (বাগান মালী) মাঈন উদ্দিনকে ইন্টানী করা ডাক্তারদের পর্যন্ত স্যার বলতে হয়। এসব ডাক্তাররা বেতন ভাতা উত্তোলনের সময় স্যার না বললে হয়রানী করে অনেকে অভিযোগ করেন। এছাড়াও ‘স্যার’ না বললে তিনি রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। জনৈক রোগী অভিযোগ করে বলেন, বাগান মালী মাঈন উদ্দিনকে ভাই বলাতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাকে কেন স্যার বলা হয়নি এ জন্য তিনি রোগী ও তার স্বজনদের ধমকান।’
হাসপাতাল তত্ত্বাবধায় ডা. পুচনুকে মাসে মাসে মোটা অংকের টাকা দিয়ে এই বাগান মালী মাঈন উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে অফিস সহকারীর দায়িত্ব পালন করে হাসপাতালটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন হাসপাতাল কর্মচারী বলেন, বাগান মালীকে অফিস সহকারীর দায়িত্ব দেওয়ার কোন বিধান নেই। এরপরেও এখানে তা করা হয়েছে। যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা বিরোধী। এমন কি কোন নীতিমালা বা নিয়মও নেই বাগানমালীর পদোন্নতির।
তারা আরো জানান, সরকারী হাসপাতালের শোভাবর্ধনে বাগান পরিচর্যার জন্য মাঈন উদ্দিনকে হারবাল বিভাগ থেকে নিয়োগ দেওয়া হলেও সেখানে বাগানেরও কোন অস্তিত্ব নেই। বাগান মালির বেতন ভাতা নিলেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন অফিস সহকারী হিসেবে।
অভিযোগে আরো জানা যায়, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালটি নিয়ন্ত্রণ করছেন কথিত ‘পেকুয়া সমিতি’ নামে বিএনপি সমর্থিত একটি সিন্ডিকেট। সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের আর্শীবাদপুষ্ট ও চার দলীয় ঐক্য জোট আমলে নিয়োগ হওয়া এসব হাসপাতাল কর্মচারীরাই ওই সিন্ডিকেট সদস্য। তারা হাসপাতালে বসেই সরকার বিরোধী প্রচারণা ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালান।
হাসপাতালটিতে সিন্ডিকেট চক্র এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের কথার বাইরে কোনো কাজ হয় না। খাদ্য, ওষুধসহ যাবতীয় সাপ্লাইয়ের কাজ তারাই করে থাকেন। একই ভাবে বাগান মালী মাঈন উদ্দিনের আরেক তালাত ভাই যুবলীগের নেতা শহীদুল্লাহকে হাসপাতালের চাদর ধোলাইয়ের টেন্ডার সুবিধা দিয়েছেন। সম্প্রতি চাদর ধোলাইয়ের কাজ নিয়ে বড় ধরনের ঘাপলা করে এ চক্রটি। প্রতিদিন তারা ৭০০ থেকে ১০০০ চাদর ধোলাই করে বলে বিল করে।
হাসপাতালের খাবার সাপ্লাই নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। হাসপাতালে রোগীদের জন্য খাদ্য সরবরাহের ঠিকাদার নিয়োগ নিয়েও করেছে চরম অনিয়ম। বাগানমালী মাঈন উদ্দিনের তালাত ভাই যুবলীগ নেতা এশাদুল্লাহকে খাদ্য সরবরাহ ঠিকাদার পাইয়ে দিয়েছেন। খাদ্য সরবরাহ আর খাদ্য বিল পাশেও অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে মালী মাঈন উদ্দিন।
প্রতিদিন রোগীদের যে খাবার দেওয়া হয় তা একেবারেই নিম্নমানের। প্রতিদিন খাবার তালিকায় যা থাকার কথা তা দেওয়া হচ্ছে না রোগীদের।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে যে খাবার পরিবেশন করা হয় তা মুখে দেওয়া যায় না। বেশির ভাগ রোগীই বাইরের হোটেল অথবা বাড়ি থেকে খাবার এনে খান।
এছাড়াও প্রতিদিন রোগীদের জন্য খাদ্য বিতরণেও দুর্নীতি করছে বাগান মালী মাঈন উদ্দিন সিন্ডিকেট। দেশীয় রোগীর জন্য ২৪ ঘন্টায় ১২০ টাকার খাদ্য বরাদ্দ রোষ্টারে উল্লেখ আছে এবং কোন কোন দিন কোন কোন খাদ্য রোগীদের সরবরাহ দিবে তাও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু অনিয়ম আর দুর্নীতি করে রোষ্টারের কোন নীতি মানা হচ্ছে না এখানে। ফলে সঠিক খাদ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।
সুত্র জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা রোগীদের জন্য ২৮০ টাকার খাদ্য (২৪ ঘন্টায়) সরবরাহ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা করা হয় না। দেশীয় রোগির জন্য যে খাদ্য বরাদ্দ তা রোহিঙ্গাদেরও দেয়া হয়।
এই খাদ্যগুলোর অথ বরাদ্দ দেন ইউএনএইচসিআর। আর খাবার বরাদ্দের অর্থ দেখভাল করেন তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ পুচনু।
কিন্তু মাঈন উদ্দিন সিন্ডিকেট প্রতিমাসে অতিরিক্ত রোহিঙ্গা রোগী দেখিয়ে এবং দেশীয় রোগীদেও নি¤œমানের খাবার সরবরাহ দিয়ে প্রধান সহকারী তুষার এর সহযোগীতায় প্রতি মাসে খাদ্য তালিকা হতে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন। আর এই বিশাল অংকের টাকার একটি অংশ নেন ডাঃ পুচন, এমন অভিযোগ সবার মুখে মুখে।
এ ছাড়া হাসপাতাল থেকে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না। রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেওয়া তো দূরে থাক গজ-ব্যান্ডেজ আর তুলার মতো জিনিসও বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। তাদের আরও অভিযোগ, অপারেশন করতে হলে ওষুধের লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে অপ্রয়োজনীয় ওষুধও লিখে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ওইসব অব্যবহৃত ওষুধ বাইরের ফার্মেসিতে বিক্রি করা হয়। হাসপাতালের বাথরুমগুলোর অবস্থা যাচ্ছেতাই। বাতাসের জন্য পর্যাপ্ত ফ্যান নেই। নেই পর্যাপ্ত লাইট। ফলে রাতের বেলা একেবারে ভুতুরে পরিবেশ তৈরি হয় হাসপাতালে।১২টি কেবিন থাকলেও সেগুলো নামেমাত্র। কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেই সেখানে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালের ‘সিন্ডিকেট’ চক্র এসব ‘কেবিন’ নিজেদের দখলেই রাখেন। এ চক্রের হোতা বাগান মালী মাঈন উদ্দিন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করলেই মেলে কেবিন। হাসপাতালে সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। একটি মাত্র টিউবওয়েল থাকলেও সেই পানি খাবার অযোগ্য। ফলে বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনদের বাইরে থেকে পানি কিনে আনতে হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি ও ওষুধ কেনা হয়। এই কেনা নিয়েও রয়েছে বড় রকমের দুর্নীতি। টেন্ডারের শর্তাবলি অনুযায়ী যে ওষুধ সরবরাহ করার কথা, তা মেলে না। আবার হাসপাতালটিতে ডাক্তারের সংকট তেমন একটা না থাকলেও দিনের বেশির ভাগ সময় ডাক্তারদের খুঁজে পাওয়া যায় না। বেলা ১টার পর একজন ডাক্তারকেও পাওয়া যায় না। অথচ সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত হাসপাতালে ডাক্তার থাকার কথা।
জানা যায়, ডাক্তারদের প্রায় সবাই বিভিন্ন ক্লিনিকে কিংবা প্রাইভেট চেম্বারে বসেন। ফলে তাদের দিনের বেশির ভাগ সময়ই পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। হাসপাতালে ডাক্তার ও কর্মচারীদের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন স্থাপনের দাবীও দীর্ঘদিনের। ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন থাকলে তারা কখন আসেন, কখন বেরিয়ে যান, এমনটি রেকর্ড করা যেতো।
অভিযোগে আরো প্রকাশ, এই সরকারী হাসপাতালটিতে বর্তমানে নিজ বেতনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকুরী করছেন বাগান মালী (অফিস সহকারী) মাঈন উদ্দিনের বড় ভাই গোলাম মোর্শেদ। এছাড়াও এখানে তার ছোট ভাই মহি উদ্দিন বিনা বেতনে (বেসরকারী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ) টিকেট কাউন্টারে টিকেট বিক্রি করছেন।
ঘোর অভিযোগ উঠেছে, বাগান মালী থেকে অফিস সহকারী, আর নিজ বেতন ও বিনা বেতনের নামে একই সাথে তিন ভাই হাসপাতালে চাকরীর নামে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের নিয়ে বাণিজ্যে মেতেছে। সব ক্ষেত্রে সরকারী হাসপাতাটিকে জিম্মি করে রেখেছে।
বাগান মালী মাঈন উদ্দিনের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসপাতাল থেকে নাসিং বদলীর ফরোয়াডিং দিতে জনপ্রতি নার্স থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন তিনি। ডাক্তার (ইন্টানী ) অনারারি বেতন বিল থেকে ১০০ টাকা কর্তন করে রাখে মাঈন উদ্দিন।
অভিযোগ উঠেছে, জেলা সদর হাসপাতালে বেসরকারী নিম্ন শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগেও ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য করেছে মাঈন উদ্দিন সিন্ডিকেট। সুইপার ও ৪র্থ শ্রেণীর এ পর্যন্ত যেসব বেসরকারী কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেসব কর্মচারীদের কাছ থেকে বাগানমালী মাঈন উদ্দিন, ওয়ার্ড মাষ্টার নোমান, অফিস সহকারী এস্তাফিজুর রহমান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম মুর্শেদ মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিয়োগ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাগানমালী মাঈন উদ্দিনের তিন ভাই একই সাথে জেলা সদর হাসপাতালে চাকুরীর পাশাপাশি তার স্ত্রীকেও (ক্রাইম পুলিশের সুপার ভাইজার , ওয়ার্ড ৩য় তলা) এখানে চাকরী দেওয়া হয়েছে। সরকারী এই হাসপাতালে টিকেট বিক্রির টাকা নিয়েও রয়েছে বিরাট হেরফের। টিকেট কাউন্টার যত টিকেট বিক্রি হয় সেই সব টাকা মন চাইলে দেয়, না চাইলে দেয় না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্র জানান, হাসপাতালে প্রবেশ টিকেট (রোগীদের জন্য) শহরের বদর মোকাম মসজিদস্থ একটি ছাপাখানা থেকে টিকেট ছাপিয়ে ২০ টাকা হারে বিক্রি করেন। প্রতিদিন এই হাসপাতালে অন্তত ৩ শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। প্রতি মাসে অন্তত ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার টিকেট বিক্রি করা হয়। আর শুধু নামমাত্র মাসে ৩০ হাজার টাকা হাসপাতালকে দিয়ে অবশিষ্ট টাকা মাঈন উদিÍদন সিন্ডিকেট আত্মসাৎ করে আসছে ।
এই হাসপাতালে কার্ড ও টিকেট বিক্রির টাকাও লুটপাট করছে অফিস সহকারী এস্তাফিজ। কার্ড ও টিকেট বিক্রি হতে প্রাপ্ত টাকা হতে সামান্য কিছু টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেন বলে অভিযোগ। এছাড়াও পোষ্ট মর্টেন রিপোর্ট সরবরাহ করেন এস্তাফিজ ও আরএমও শাহীন মোহাম্মদ আবদুর রহমান।
অভিযোগ রয়েছে, পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট নিয়েও বাণিজ্য করেন এস্তাফিজ। যারা টাকা দিবে তারা রিপোর্ট সঠিক পিাবে। যত বেশি টাকা দিবে তার পক্ষে পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট দেন। একটি সুত্র জানান, পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে নুন্যতম ৫০ হাজার সবোর্”চ ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আদায় করেন এস্তাফিজ।
জখমী সনদ আর ভিকটিম রিপোর্ট নিয়েও এখানে চলে বিশাল বাণিজ্য। জখমী সনদ লিগ্যাল থাকলে ১২/১৩ হাজার টাকা নেন। আর আনলিগ্যাল কিংবা গুরুতর জখম (৩২৬ ধারা) রিপোর্ট আনলে ২০ হাজার থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ হাজার নেন বলে অভিযোগ।
নারী ধর্ষণের রিপোর্ট নিয়েও চলে এখানে বাণিজ্য। ভিকটিম রিপোর্ট (নারী ধর্ষণ) দিতে আরএমও শাহীন মো. আব্দুর রহমানের নাম ভাঙ্গিয়ে নরমাল রিপোর্ট ৫ হাজার টাকা, আর রিপোর্ট সঠিক (উচ্চ) নিতে হলে ৫০ হাজার টাকা থেকে কোন কোন ক্ষ্রেত্রে এক লাখ টাকা আদায় করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে হাসপাতালের কর্মচারীরা সংশ্লিষ্ট দপ্তর সহ দুদকে অভিযোগ দায়ের করেন। তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ পুচনু ও ওয়ার্ড মাষ্টার নোমানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বর্তমানে দুদকে তদন্ত আছে । অভিযোগ উঠে, সরকারী স্টাফকে রোষ্টার করলে ডাঃ পুচনু ও নোমানকে মাসিক ২/৩ হাজার টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে স্টাফদেরকে বিভিন্ন শাখায় বদলী করেন ডাঃ পুচনু।
বিভিন্ন ভাবে নিঘৃত সরকারী সমস্ত স্টাফরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ডাঃ পুচনু ও ওয়ার্ড মাস্টার নোমানের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ বিভাগীয় তদন্তও হয়। কিন্তু ডাঃ পুচনু কে ওয়ার্ড মাস্টার নোমান ৬০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে তা স্থগিত করে রাখেন বলে জানা গেছে।
একাধিক সুত্র জানিয়েছেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের আর্শীবাদ পোষ্ট কথিত পেকুয়া সমিতির সভাপতি প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমডি গোলাম মোর্শেদ (নিজ বেতনে) এসব অপকর্মের গডফাদার। তাকে ঘুষ সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির টাকা এনে দেন অফিস সহকারী এস্তাফিজ ও ওয়ার্ড মাস্টার নোমান।
জেলা সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী জানান, চতুর্থ শ্রেণির অফিস সহায়ক, পরিছন্নতা কর্মীর বেশ কিছু পদ খালি রয়েছে। এগুলো পূরণ হলে যে সমস্যাগুলো রয়েছে তার সমাধান হবে।

জেলা সদর হাসপাতালের বাগাল মালী (অফিস সহকারী) মালী মাঈন উদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি হারবাল এ্যাসিটেন্ট। আমি অফিস সহকারী নয়, তবে ডাঃ পুচনু স্যার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে বলেছে। এছাড়াও এখানে অফিস সহকারী রয়েছেন, গোলাম মোস্তফা ও এস্তাফিজুর রহমান।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সদ্য নিয়ুক্ত তত্ব্বাবধায়ক ডা: সোলতান আহম্মদ সিরাজী বলেন, ‘আগের তুলনায় হাসপাতালের অনিয়ম কমেছে।’ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যোগদানের আগে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ছিল। এখন সেগুলো নেই। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এটিকে ৩০০ বেডে উন্নীত করা হলে ভালো হয়।’

পাঠকের মতামত: