নুরুল আমিন হেলালী :::
ভারী ও টানা বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলের পানিতে ভাসছে সদরের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা ঈদগাঁও বাজার ও পাশর্^বর্তী কয়েকটি গ্রাম এবং চলাচলের রাস্তাঘাট। ফুলে ফেঁপে প্রমত্তা রূপ ধারণ করেছে বাঁকখালী, মাতমূহুরী, ঈদগাঁওসহ ছোট-বড় নদী। ফলে ঈদগাঁও, জালালাবাদ, ইসলামাবাদ, ইসলামপুর, চৌফলদন্ডী, পোকখালী, গোমাতলীসহ বিস্তীর্ণ এলাকা কোমর পানিতে নিমজ্জিত। বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার নারী-পুরুষ। পানিতে নিমজ্জিত এসব নি¤œাঞ্চলের সহ¯্রাধিক বাড়ীঘর, ভেসে গেছে গবাদি পশুসহ কষ্টার্জিত ক্ষেত খামারের ফসলাদি। ভেঙ্গে গেছে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রামের সড়ক যোগাযোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো ঈদগাঁও বাজারের কয়েকটি অংশ। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পালপাড়া, কানিয়াছড়া, ভোমরিয়াঘোনা, দরগাহপাড়া, শিয়াপাড়া, জাগিরপাড়া, সওদাগরপাড়া, হিন্দুপাড়া, বাঁশঘাটা, ছাতিপাড়া, বঙ্কিমবাজার, মাইজপাড়া, পালাকাটা, বটতলী পাড়া, লরাবাক, ফরাজী পাড়া, বাহারছড়া, পোকখালী, গোমাতলীর হাজার হাজার পরিবার। ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের পালপাড়া অংশের উপর দিয়ে প্রবল বেগে ঢলের পানি উপচে পড়ছে। এছাড়া ভোমরিয়া ঘোনার মন্ডল পাড়ার অংশের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি উপচে পড়ায় ঈদগড়-ঈদগাঁওর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অন্যদিকে ঈদগাঁও-দরগাহপাড়া সড়কের উপর নির্মিত কালভার্টের পূর্ব ও পশ্চিম অংশও ইতিমধ্যেই ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঈদগাঁও নদীর ঢলের পানি ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়কের উপর দিয়ে পালপাড়া বিল হয়ে মেহেরঘোনা জলনাশী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে জালালাবাদের রাবারড্যাম সংলগ্ন মনজুর মেম্বারের পাশর্^বর্তী বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে পাশর্^বর্তী কয়েকটি গ্রাম। এছাড়া রাজাখালী বিলের পানির স্রোতে ভেঙ্গে গেছে শিয়াপাড়া ও দরগাহপাড়া সড়কের কয়েকটি অংশ। ওই পানি জলনাশী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে তলিয়ে গেছে পশ্চিম ভাদিতলা, মেহেরঘোনা, উত্তর মাইজপাড়া, মধ্যম মাইজপাড়া ও জাগিরপাড়াসহ ঈদগাঁও’র নিম্নাঞ্চল। পালপাড়া-শিয়াপাড়া সড়ক ও ঈদগাঁও-দরগাহপাড়া সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ঈদগাঁও’র পাহাড় অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলের সাথে যাতায়াতে সীমাহিন দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
জানা যায়, ঈদগাঁও নদীর পাহাড়ী ঢলের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঈদগাঁও বাজার রক্ষাবাধেঁর উপর দিয়ে প্রবল বেগে ঢলের পানি উপচে পড়ে ঈদগাঁও বাজারের প্রধান সড়ক, ঈদগাহ হাইস্কুল মাঠ, তরকারি বাজার, বাঁশঘাটা রোড, হাসপাতাল রোডসহ তৎপার্শ্বস্থ এলাকাসমুহ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে ঈদগাহ হাই স্কুল, দারুল ফাতাহ একাডেমী, ঈদগাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাঁও ভূমি অফিস, জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ, ঈদগাঁও টিএন্ডটি অফিস, জালালাবাদ সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ঈদগাঁও কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি মন্দির, শহীদ মিনার, সরকারী খাদ্য গুদাম, ঈদগাঁও বাজারের বিপনী বিতান, মাছ বাজার, কাঁচা বাজারসহ ঈদগাঁও বাজারের বিভিন্ন অলিগলি ও আবাসিক ভবন।
বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ঈদগাঁও বাজারের শত শত দোকানপাট বন্ধ হয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকা মাইজপাড়ার বাসিন্দা ঈদগাঁও আওয়ামীলীগ সেক্রেটারী তারেক আজিজ জানান, এখানকার প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ঈদগাঁও বাজারের ছাগলের দোকান থেকে কবিরাজ সিটি সেন্টার পর্যন্ত ও বাজারের দক্ষিণ পাশর্^স্থ সওদাগর পাড়ার সম্মুখস্থল হতে সিএনজি স্টেশন পর্যন্ত ভাঙ্গা সড়কের উপর দিয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে যান ও জন চলাচলে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পণ্যবোঝাই ট্রাক, মিনিট্রাকগুলো পণ্যখালাসের অপেক্ষায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ঈদগাঁও ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড়ের মহিলা মেম্বার জাহানারা বেগম জানান, মেহেরঘোনা জলনাশীকে খনন করে দু’পাশে ১০-১৫ ফুট উচ্চতার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ঈদগাঁও নদী থেকে চৌফলদন্ডী খাল পর্যন্ত সংযুক্ত করে দিলে বন্যার অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের পাশাপাশি ওই অঞ্চলের জনগণ, হাজার হাজার একর আবাদি জমি, লবণ মাঠ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ এবং স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আরমান উদ্দীন জানান, জালালাবাদের কয়েকটি গ্রাম ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বসতবাড়ীর লোকজন বর্তমানে তীব্র খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটে পড়েছে। দ্রুত বন্যা কবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে খাদ্য, পানীয় ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
পাঠকের মতামত: