নিউজ ডেস্ক ::
সীমান্ত জনপদ টেকনাফের সেই রাজপ্রাসাদগুলো এখন ফাঁকা। ফটকে ঝুলছে তালা।
আর রাজারা লাপাত্তা। একসময়ের কুলি, ঠেলাগাড়ি চালক আর পিঠা বিক্রেতা— যারা ইয়াবা ব্যবসা করে টেকনাফের রাজা হয়েছিলেন, বন্দুকযুদ্ধে এমপি বদির বেয়াই আকতার কামাল নিহত হওয়ার পরই এরা পালাতে শুরু করেন। পুলিশ এসব বাড়িতে তল্লাশি চালায়।
উত্তর জালিয়াপাড়া গ্রামে ‘রাজপ্রাসাদের’ মতো বাড়ি বানিয়েছেন ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল বশর। এখন সেই বাড়িতে থাকেন না কেউ। হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা স্টেশনের পাশে নুরুল হুদার সুরম্য অট্টালিকাও এখন নীরব। তার স্ত্রী কামরুন নাহার দিনের বেলায় মাঝেমধ্যে এলেও বেশির ভাগ সময় তালা ঝোলে এ প্রাসাদে। মৌলভীপাড়া গ্রামে ঢুকতেই রয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ী আলী হোসেনের দৃষ্টিকাড়া কোটি টাকায় বানানো অট্টালিকা। কিন্তু সে বাড়িটিও সুনসান।
খবর বাংলাদেশ প্রতিদিনের
বন্দুকযুদ্ধের ভয়ে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী আলী হোসেনের ভাই মঞ্জুর আলমও তার বাড়ি ছেড়ে রাত কাটাচ্ছেন অন্যত্র।
টেকনাফে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে আতঙ্কিত হয়ে এখন ঘরছাড়া তালিকাভুক্ত ইয়াবার গডফাদাররা। এবার মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়ি, গাড়ি ও ব্যাংক ব্যালান্সের তথ্যও সংগ্রহ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাই সুরম্য অট্টালিকার মালিকরাই আতঙ্কে আছেন সবচেয়ে বেশি। মাদকের টাকায় টেকনাফের দক্ষিণ জালিয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, নীলা, ডেইলপাড়া, নেঙ্গরবিল, কুলালপাড়া ও লেদায় গড়ে উঠেছে এমন সুরম্য শতাধিক ভবন। এসব বাড়ি নিয়ে এখন বিপদে আছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। অভিযান এড়াতে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে এখন অন্যত্র বাস করছেন তারা। মাদকের টাকায় বানানো এসব সুরম্য ভবন পাহারা দিতে কেউ কেউ রেখে গেছেন গরিব কোনো নিকটাত্মীয়কে। জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই মুজিবুর রহমান, ফয়সাল ও শফিকের রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি রয়েছে টেকনাফের জালিয়াপাড়ায়। বদির আরেক ভাই আবদুস শুক্কুর বাড়ি বানিয়েছেন টেকনাফের অলিয়াবাদে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি মাদক ব্যবসায়ীদের নতুন ও পুরনো তালিকায় তাদের নাম রয়েছে। এ ছাড়া তালিকায় নাম রয়েছে, টেকনাফের নুরুল হুদা, মো. জোবাইয়ের, নুরুল বশর নুরশাদ, মো. সালমান, মো. হাসান আলী, বদির ফুফাতো ভাই কামরান হাসান রাসেল, নূর মোহাম্মদসহ অনেকের। ইয়াবা ব্যবসার কোটি কোটি টাকা দিয়ে বানানো তাদের বাড়িগুলো এখন শূন্য পড়ে আছে। জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিত্কুমার বড়ুয়া বলেন, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ায় তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদাররা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। ইয়াবার টাকায় যারা রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি বানিয়েছেন, তাদের বাড়ি, গাড়ি ও ব্যাংক ব্যালান্সের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে ঢুকতেই রয়েছে বিজিবির চেকপোস্ট। এর পাশেই বিশাল জায়গাজুড়ে নির্মাণাধীন পাঁচতলা আবাসিক কটেজ। তবে এখন কাজ বন্ধ। কারণ বাড়ির মালিক নূর মোহাম্মদ র্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। আবাসিক এই কটেজ পেরিয়ে আলিখালী রাস্তার মাথায় গোলাপি ও টিয়া রঙের দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল বাড়ি। একাধিক নিরাপত্তারক্ষীর পাশাপাশি ডজনখানেক সিসিটিভি ক্যামেরাও আছে এ ভবনের চারপাশে। কিন্তু সুরম্য এ প্রাসাদেও এখন থাকে না কোনো ‘ইয়াবা রাজা’। প্রাসাদ ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বাড়ির মালিক নূরুল কবির।
জানা গেছে, ইয়াবার টাকায় টেকনাফের লেদা, নেঙ্গরবিল, পৌরসভার চৌধুরীপাড়া, দক্ষিণ জালিয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, ডেইলপাড়া, শিলবনিয়াপাড়ায় রাজপ্রাসাদের মতো গড়ে উঠেছে সারি সারি বাড়ি। তবে এসব বাড়ি এখন খালি পড়ে আছে, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাড়ির মালিক মাদক ব্যবসায়ীরা। অভিযান এড়াতে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অন্যত্র বাস করছেন তারা। মাদকের টাকায় বানানো এই রাজপ্রাসাদ পাহারা দিতে তারা বসিয়েছেন সিসি ক্যামরা। আবার কেউ বাড়িতে রেখে গেছেন গরিব কোনো নিকটাত্মীয়কে।
সেই রাজারা কোথায় : টেকনাফে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের রাজপ্রাসাদে অভিযান চালান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু প্রাসাদের ভিতরে এসব অভিযান ছিল নিষ্ফল। সূত্র জানায়, মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারত ও ওমরাহ পালনের নামে সৌদি আরবে পালিয়ে গেছেন। অনেকে ট্রলারযোগে সমুদ্রপথে মিয়ানমার গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন।
নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে টেকনাফ সদরের মৌলভীপাড়া এলাকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী আবদুর রহমান, আবুল কালাম প্রকাশ কালা ও জাফর আলমের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তবে মাদক ব্যবসায়ীরা বাড়িতে না থাকায় তাদের কাউকেই আটক করা যায়নি।
পাঠকের মতামত: