শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লাতুরীখোলা কৃষি নাল জমি, ঘনবসতি পূর্ণ এলাকা ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে রহস্য ঘেরা ইটভাটাটি ফের চালু করা হয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান এর নেতৃত্বে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানে গুড়িয়ে দেয়ার প্রায় দুই মাসের মাথায় ফের চালু নিয়ে জনমণে ক্ষোভ বাড়ছে দিনদিন। ঘনজনবসতি ও আবাদী জমিতে ইয়াবা গডফাদাররা কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা এই ইটভাটাটি আবারও উচ্ছেদের দাবী তুলেছেন এলাকাবাসি।
কয়েকজন সরকার বিরোধী ব্যক্তি ও ইয়াবার গডফাদার, পৃষ্ঠপোষক এবং চোরাচালানী লোকজন কর্তৃক কৃষি নাল জমি ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে অবৈধ ইটভাটা নিমার্ণ নিয়ে শুরু থেকেই জনমনে রহস্যেও শেষ নেই। ইটভাটাটি উচ্ছেদের জন্য এলাকাবাসির পক্ষ থেকে সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলাধীন হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের লাতুরীখোলা গ্রামের দক্ষিণ পাশে ঘনবসতি, কৃষি নাল জমি ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর স্থানীয় কতিপয় সরকার বিরোধী বিএনপিপন্থী ও ইয়াবার গডফাদার ও ইয়াবা ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতাকারী মিলে বিপুল পরিমাণ কাল টাকা বিনিয়োগ করে এই ইটভাটাটি স্থাপন করেন। এই ইট ভাটার কোন অনুমতি নেই। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, অবৈধ ইটভাটার বেশির ভাগ মালিকই ইয়াবা ব্যবসায়ী, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পৃষ্টপোষকতাকারী। অবৈধ ইটভাটা মালিকদের মধ্যে কবির আহম্মদ চৌধুরী, মো. কামাল উদ্দিন, আলী আকবর হাজি ও মোঃ আলম প্রকাশ মাতালম বলে জানা যায়।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, অবৈধ ইটভাটায় অর্থ যোগান দাতা টেকনাফ হোয়াইক্যং এর আমতলী এলাকার কবির আহমদ চৌধুরী। তার এক ছেলে ইয়াবাসহ আটক হয়ে বর্তমানে ঢাকা জেলে আছেন। ইয়াবার পৃষ্ঠপোষকতাকারী মো: কামাল উদ্দিন। তিনি টেকনাফ পৌরসভার একটি অভিজাত হোটেলের মালিক মানব পাচারকারী ও ইয়াবা চোরাচালানী দালাল হামিদের ছেলে এবং কবির চৌধুরীর মেয়ের জামাই। তিনি ইটভাটার অর্থ যোগানদাতা ও ইয়াবা চোরাচালানী। তিনি চট্টগ্রামে অবস্থান করেই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। কামাল উদ্দিন ও মাতাআলম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারী বলে সুত্রে প্রকাশ।
আরে অর্থ যোগানদাতা টেকনাফ হোয়াইক্যং বালুখালী এলাকার ইয়াবার গডফাদার আলী আকবর হাজী। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে আটক ছৈয়দের বাড়ির লাগোয়া পশ্চিম পার্শের বাড়ির মালিক আলী আকবর হাজী।এই আলী আকবর হাজী টেকনাফ হোয়াইক্যং মুলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারী মাতাআলম এর পৃষ্টপোষকতাকারী। যিনি দুই বছর আগেও রিক্সাচালক ছিল। ইয়াবার গডফাদার মাতালম বর্তমানে কারাগারে আছেন। ্এই মাতাআলমও ইটভাটার অর্থ যোগানদাতা বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারী টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান এর নেতৃত্বে ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে পরিচালিত অভিযানে স্কেবেটর দিয়ে উক্ত অবৈধ ইটভাটাার চিমুনি, কাচা ইট গুড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু অভিযানের পর মাস যেতে না যেতে অবৈধ ইটভাটা নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। ইটপোড়ানোর কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কওে এলাকার পরিবেশ দুষিত করছে। স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা পড়–য়া ছাত্র ছাত্রীরা ও এলাকাবাসি চরম বিপন্ন অবস্থার দিকে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,ইয়াবা ব্যবসার কালো টাকা সাদা করতেই এই ইটভাটা স্থাপন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, কৃষি নাল জমি ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর ইটভাটা স্থাপন বিধি নিষেধ রয়েছে। কিন্তু আইন না মেনেই ইয়াবার টাকায় অবৈধ ইটভাটা স্থাপন করে ইট পোড়ানো ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, কৃষি ভূমি, বন ও পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ ইয়াবা চোরাচালানী ব্যবসার টাকায় ইটভাটার পুনঃ নির্মাণ নিমার্ণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সাধারণ জন মনে প্রশ্ন, দেশের প্রচলিত আইন কোথায়? এই কোটি কোটি টাকার আয়ের উৎস কি? দূনীর্তি দমন কমিশন কি করছেন? বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) নিরব কেন ?।
এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান এর বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিকবার রিং করা হলেও তিনি মোইল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পাঠকের মতামত: