টেকনাফ প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের বাস। নিত্য প্রয়োজনীয় কাজকর্ম, ব্যবসা বাণিজ্য এবং শিক্ষা-দীক্ষার জন্য উপজেলা শহর টেকনাফের ওপর নির্ভরশীল এই দ্বীপের মানুষ।
উপজেলা শহর টেকনাফে যাওয়ার একমাত্র সড়কটি ২০১২ সালে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমের বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেলে হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ উত্তর পাড়া পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে তখন থেকে ওই জনপদের মানুষের সড়ক পথে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। ভাঙা এই সড়কটি সাত বছরেও পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় দ্বীপের কয়েক লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এতে দ্বীপের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বৃদ্ধ, নারী ও শিশু, রোগী ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
২০১৭ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এই সড়কের বেহাল দশা দেখে তিনি রাস্তা সংস্কারের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু সেই আশ্বাস আজও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি।
দ্বীপের বাসিন্দা শিক্ষাবিদ মো. রফিক চকরিয়া নিউজকে জানান, জোয়ার ভাটার বৃত্তে বন্দী এই জনপদের মানুষ। জোয়ার থাকলে একমাত্র নৌকায় ভরসা। আর ভাটার সময় পুরো এলাকা শুকিয়ে গেলে এবং ভাঙা সড়কে গাড়ি চলাচল অসম্ভব হলে চার কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয়।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শাহপরীর দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ হওয়ায় সড়ক সংস্কারে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকছে না।
অন্যদিকে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে জাতীয় একনেক সভায় ৬৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশসহ শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। নানা জটিলতায় প্রকল্প অনুমোদনের দীর্ঘ এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। ফলে সড়ক সংস্কারের বড় প্রকল্প পাওয়ার পরও শাহপরীর দ্বীপবাসীকে আরও একটি বছর ভোগান্তিতে কাটাতে হবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা চকরিয়া নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে তারাও অবগত রয়েছেন। এ মাসেই প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হবে। বর্ষার পর সড়কটিতে মেরামতের কাজ শুরু করা হতে পারে।
শাহপরীর দ্বীপ ব্যবসায়-বাণিজ্য, মৎস্য ও লবণ শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ। এছাড়া মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানির করিডোরও। কিন্তু সড়কের বেহাল দশার কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ব্যয়ে করতে হচ্ছে।
জনস্বার্থে সড়কটি দ্রুত পুনর্নির্মাণ ও জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত উন্নয়নে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা বেশি সচেষ্ট হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শাহপরীর দ্বীপ জনপদের মানুষ।
পাঠকের মতামত: