ঢাকা,শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

টেকনাফ ওসি তদন্তের ৩ অভিযানে ৬ লাখ ইয়াবা গায়েব!

বিশেষ প্রতিবেদক:

টেকনাফ থানার ওসি তদন্তের সিন্ডিকেটের ইয়াবা গায়েব নিয়ে পুরো জেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে।

তিন অভিযানে ৬ লাখ ১০ হাজার ইয়াবা গায়েবসহ নগদ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি ইয়াবা আটকের সোর্সমানি আত্মসাৎয়ের অভিযোগে পুলিশের একাধিক অভিযানের (প্রকৃত তথ্য) মূল রহস্যসহ নানা অপকর্ম বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থানায় ওসি(তদন্ত) হিসেবে যোগদান করেন শেখ আশরাফুজ্জামান। যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে ইয়াবা গায়েব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকা ধরে ইয়াবা ব্যবসায়িদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়, মাদক ব্যবসায়ী ধরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে মোটা অংকের অর্থ আদায়সহ আরো হরেক রকম অভিযোগ লেগেই রয়েছে। তিনি ২০০৫ সালের তৎকালিন বিএনপির আমলে পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের পর থেকে এসব অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, ওসি তদন্ত আশরাফ পুলিশের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে মাসিক মাসোহারায় ম্যানেজ করে থানা পুলিশের মধ্যে নিজের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই মহেশখালী কিংবা কুতুবদিয়া থানায় শাস্তিমূলক বদলি হতে হয়। যা ইতিপূর্বে অনেকের কপালে জুটেছে। যে কারণে কোন অফিসার প্রতিবাদ করার সাহস পাইনা।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফের সাধারণ মানুষের মাঝে থানা পুলিশের স্নায়ুযুদ্ধ নিয়ে সমালোচনাসহ বিচার প্রার্থীদের মাঝে রশি টানাটানি চলছে। এছাড়াও ইয়াবা আটক করে সিংহভাগ গায়েব, বিত্তশালী লোকজনদের ইয়াবা মামলায় জড়িয়ে মোটা অংকের অর্থ আদায়সহ চার্জশীট বাণিজ্য নিয়ে ওসি তদন্তের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে টেকনাফবাসীর মাঝে।

Policdএদিকে সম্প্রতি ৩ অভিযান থেকে ৬ লাখ ১০ হাজার ইয়াবা গায়েব ও নগদ টাকা আদায়ের ঘটনায় পুরো জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২৮ ডিসেম্বর টেকনাফ সেন্ট্রাল রিসোর্টের সামনে ওসি (তদন্ত) শেখ আশরাফুজ্জামানের একক নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী মধ্যম জালিয়াপাড়ার নেজামকে ৩০ হাজার ইয়াবাসহ আটক করে। পরে কৌশলে তার কাছ থেকে নগদে ৫ লাখ টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠে ওসি তদন্তের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ওসি (তদন্ত) আশরাফুজ্জামান বলেন-আমি অভিযান পরিচালনা করিনি। ওই দিন এক সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে দেখা করার জন্য সেন্ট্রাল রিসোর্টে গিয়েছিলাম। সেখানে কোন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়নি।

একই ভাবে পুলিশের এক নির্ভযোগ্য সূত্র জানায়, ২৯ নভেম্বর বিকাল ৫টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের খোনকার পাড়াস্থ মেরিন ড্রাইভের পশ্চিম পাশের ডিঙ্গি নৌকার ঘাট থেকে টেকনাফ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) শেখ আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে এক অভিযান পরিচালিত হয়। সে অভিযানে ৬ লক্ষ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। কিন্তু থানায় এসে অভিযানে উদ্ধারকৃত সিংহভাগ ইয়াবা গায়েব করে নামমাত্র ১ লক্ষ ইয়াবা দেখিয়ে থানার পিএসআই নির্মলেন্দু চাকমাকে বাদী করে মামলা দায়ের করা হয়। যার এফ.আই আর নং-৫৮/৮৫৫, তারিখ-৩০ নভেম্বর, ধারা-১৯(১) এর ৯(খ)/২৫ ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন। আর এই মামলার তদন্তভার দেয়া হয় থানার উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ মহির উদ্দিন খানকে।

এতে আসামী করা হয় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের খোনকার পাড়ার মৃত আশরাফ উজ্জামানের পুত্র মোহাম্মদ রশিদ(৩৮), একই এলাকার মৃত সোনা আলীর পুত্র আবুল কালাম(২৯), আব্দুর হকের পুত্র মো: ইসমাইল প্রকাশ মেসি(২৫), ফরিদ আহমদের পুত্র আবছার উদ্দিন(২৮), মৃত অলি আহমদের পুত্র মোহাম্মদ ইসমাইল(৩২) ও টেকনাফ সদরের কচুবনিয়ার মৃত হাকিমের পুত্র বদিউর রহমানকে(৪০)।
সূত্র জানায়-ওই দিন ইয়াবার সাথে মূল আসামীকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু নগদ অর্থে দফারফা করে ঘটনাস্থল থেকেই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে মামলা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে নিয়ে ৬ জনকে আসামী করে মামলা রুজু করা হয়। সূত্রটি আরো জানায়-বর্তমানে মামলার আসামীদের চার্জশীট থেকে বাদ দেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ মহির উদ্দিন খান এর সাথে মোটা অংকের দর কষাকষি চলছে।

৬ লাখ ইয়াবা উদ্ধারের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টেকনাফ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ মহির উদ্দিন খানকে ফোন করা হলে তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবী করেন। পাশাপাশি আসামী আটক না করে চার্জশীট বাণিজ্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে দারোগা মহির ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

অন্যদিকে এই মামলার বাদী টেকনাফ থানার পিএসআই নির্মলেন্দু চাকমা জানান-অভিযানের সময় ওসি(তদন্ত) নিজেই উপস্থিত ছিলেন। আমাকে এক লাখ ইয়াবার মামলার বাদী হতে বলায় আমি এই মামলায় বাদী হয়েছি। সোর্সমানি কিংবা কি পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার হয়েছিল তা ওসি(তদন্ত) সাহেব বলতে পারবেন।

bbbbbbbbbbbb_82043নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক সোর্স জানান-মাদক উদ্ধারে জীবন বাজি রেখে আমরা কাজ করে থাকি। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে টেকনাফ থানার ওসি তদন্ত সোর্সমানি পর্যন্ত আত্মসাৎ করে নিজের পকেট ভারী করছে। যে কারনে আমরা পুলিশের ইয়াবা বাণিজ্য ও ধান্ধাবাজি সব জায়গায় খুলাশা করছি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে টেকনাফ মডেল থানার ওসি(তদন্ত)শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন, যে পরিমান ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে সেই পরিমান ইয়াবা দেখিয়ে মামলা দেয়া হয়েছে। এতে ইয়াবা গায়েবের প্রশ্নই আসে না। তিনি আরো বলেন, পুলিশ অভিযান চালিয়ে কোন ইয়াবার চালান ধরলে তা পরদিন লোকমুখে দ্বিগুণ হয়ে যায়।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাইন উদ্দিন খান বলেন, আমার অসুস্থতার কারনে ওই সময় আমি ছুটিতে ছিলেন। আমিও শুনেছি মাদক উদ্ধার হয়েছে। তবে কি পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে তা জানিনা। বিষয়টি নিয়ে ওসি তদন্তের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন থানার অফিসার ইনচার্জ মাইন উদ্দিন খান।

এদিকে প্রতিনিয়ত ইয়াবা গায়েবের ব্যাপারে কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, মাদকের ব্যাপারে আমার কাছে কোন ছাড় নেই সে পুলিশ হউক আর মাদক ব্যবসায়ি হউক। এসপি বলেন, আমি শুনেছিলাম কিছু বিয়ার আর ইয়াবা ধরেছিল। যদি ইয়াবা গায়েবের ঘটনা থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুত্র আমাদের সময়

পাঠকের মতামত: