অনলাইন ডেস্ক :::
বেলা ১১টা। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সিগাল পয়েন্ট। পর্যটকের ভিড়ে ঠাসাঠাসি অবস্থা। তিল ধারণেরও যেন জায়গা নেই। বেশির ভাগ পর্যটকই সমুদ্রের পানিতে দাপাদাপিতে ব্যস্ত। কেউ কোমরসমান পানিতে, কেউ আরও দূরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। অথচ সৈকতের বালুচরে তখন উড়ছে লাল পতাকা। এর অর্থ—‘এখন সমুদ্রে নামা বিপজ্জনক’। কিন্তু কেউই মানছেন না এই সতর্কবার্তা। ঝুঁকি নিয়েই গোসলে নামছেন অনেকেই ।
ভেসে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত সি-সেইফ লাইফগার্ডের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলী ও লাবণী পয়েন্টের তিন কিলোমিটার অংশে গোসলে নেমে কোনো পর্যটক ভেসে গেলে উদ্ধারের জন্য সেখানে লাইফগার্ড সদস্যরা আছেন। অন্য কোনো সৈকতে তা নেই। অরক্ষিত সৈকতে নেমে অনেকে বিপদে পড়ছেন।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অন্তত এক লাখ পর্যটক সমুদ্রে গোসলে নেমেছেন। আগের দিন মঙ্গলবার এ সংখ্যা ছিল আরও বেশি। এই বিপুলসংখ্যক পর্যটক সামাল দিতে তাঁর ৩০ জন লাইফগার্ড কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবককে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার সকালে সৈকতের সিগাল পয়েন্টে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন ঢাকার একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত দে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর সন্ধান মেলেনি। গত তিন দিনে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়ার সময় বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অন্তত ৩৪ জন পর্যটককে উদ্ধার করেছেন বলে জানান লাইফগার্ড কর্মীরা।
সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও বালুচরে লাল পতাকা উড়ছে। লাইফগার্ড কর্মীরা ভাটার সময় পর্যটকদের সৈকতে না নামার জন্য বাঁশি বাজাচ্ছেন। কিন্তু পর্যটকেরা তা আমলে নিচ্ছেন না।
কলাতলী পয়েন্টে কথা হয় ঢাকার কমলাপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী কামাল আহমদের (৪২) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এত দূর থেকে এসেছি সমুদ্রে গোসল করার জন্য। এখন বাধা-নিষেধ মানতে ইচ্ছে করছে না। তা ছাড়া আমাদের সাঁতার জানা আছে। আশা করি সমস্যা হবে না।’
সিলেটের হরিপুর থেকে আসা পর্যটক মুহিতুল আলম (৩৫) বলেন, ‘কোমরসমান পানিতে শরীরটা ভিজিয়ে উঠে যাব। বেশি দূরে যাব না। তাই নিষেধ মানছি না।’
কলাতলী পয়েন্টে পর্যটকদের নজরদারি করছেন সি-সেইফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার ও সার্ফার সাইফুল্লাহ সিফাত। তাঁর সঙ্গে আছেন আরও ছয়জন কর্মী। সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, লাল পতাকা থাকলে সমুদ্রে নামা যাবে না। ওই সময় থাকে ভাটা। সমুদ্রে নামা যাবে সবুজ পতাকা উড়লে। তখন জোয়ার থাকে।
বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এখন লাখো পর্যটকের ঢল নেমেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিশাল সৈকত ভরপুর থাকছে পর্যটকের পদভারে। হোটেল মালিকেরা জানান, ঈদের দ্বিতীয় দিন (২৭ জুন) সৈকতের লাবণী পয়েন্টের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন অন্তত এক লাখ পর্যটক।
গতকাল এ সংখ্যা ৪০-৫০ হাজার বেড়ে দেড় লাখে পৌঁছেছে। আগামী ২ জুলাই পর্যন্ত পর্যটকের এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টের হোটেল কল্লোল-এর মহাব্যবস্থাপক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন শহরের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও কটেজের অধিকাংশ কক্ষ খালি নেই। সামনে বৃহস্পতি ও শুক্রবার হওয়ায় পর্যটকের চাপ আরও বাড়তে পারে।
পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী বলেন, কয়েক লাখ পর্যটককে নিরাপত্তা দিতে ১২১ জন টুরিস্ট পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত একজন পর্যটক নিখোঁজ ছাড়া সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলছে।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, পর্যটক হয়রানি রোধে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছেন। অতিরিক্ত কক্ষভাড়া ও খাবারের অতিরিক্ত দাম আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: