আতিকুর রহমান মানিক :
কক্সবাজার জেলাব্যাপী উপকুলীয় এলাকার চিংড়ি প্রজেক্ট সমূহে এখন চলছে শেষ মুহুর্তের মাছ আহরণ। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী-কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া,টেকনাফ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন উপকূলীয় চিংড়িঘেরে এখন রাতদিন অবিরাম মাছ আহরণ করা হচ্ছে। লবণ উৎপাদন মৌসুম সমাগত হওয়ায় এখন লবণ চাষের জন্য ঘেরের পানি বের করে দিয়ে মাঠ শুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। তাই ঘের মৌসুমের সমাপনী পর্বে যাবতীয় মাছ ধরে ফেলছেন মালিক-শ্রমিকরা। প্রজেক্টের অপেক্ষাকৃত গভীর (কুম) এলাকায় পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি তুলে ফেলে মাছ ধরা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষীরা। প্রধান ফসল বাগদা চিংড়ি ছাড়াও বাটা, গুইল্যা, দাতিনা, ধুম, বিছাতারা, কামিলা, ভেটকি ও বাইলা মাছসহ রকমারী প্রজাতির মাছ আহরণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়াও বাগদা, লইল্যা, চাগা, ও চামা ইছাসহ রকমারী প্রজাতির চিংড়িও উঠে আসছে জালে। মাছ সহজপ্রাপ্য হওয়ায় শখ করে অনেকেই পরিচিত প্রজেক্ট মালিকদের ঘেরে যাচ্ছেন মাছ শিকার করতে। সদর উপজেলার গোমাতলীর চিংড়িঘের মালিক হান্নান মিয়া বলেন, পরিচিত, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের অনেকেই শখ করে মাছ ধরতে আসছেন। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মাছ ধরা পড়ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও দুর দুরান্তের বিভিন্ন হাটবাজারে এসব মাছ সরবরাহ করা হচ্ছে। বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকায় মাছের দামও অনেক কমে গেছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ অন্যন্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। আহরণের ২/১ঘন্টার মধ্যেই ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও ফর্মালিনমুক্ত টাটকা এসব মাছ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এবং ক্রেতারা আগ্রহ করে কিনে নিচ্ছেন। অনেক ক্রেতা সস্তায় মাছ কিনে বাড়ীতে শুকিয়ে শুটকি করে রাখছেন। জালালাবাদ পূর্ব ফরাজী পাড়ার গৃহীনি আয়েশা বলেন, এসব মাছের শুটকি খুব মুখরোচক। প্রজেক্ট মালিকরা জানান, সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সম্পূর্ণ শুকিয়ে ফেলা হবে ঘের। শুরু হবে লবণ চাষের প্রস্তুতি। প্রজেক্টে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছ তখন বাজারে আর পাওয়া যাবেনা। আবার ৭/৮মাস পরে ঘের মৌসুম শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত দুস্প্রাপ্য থাকবে উপরোক্ত প্রজাতির মাছ। তাই ক্রেতাদের আগ্রহের কমতি নেই।
এদিকে বাজারে মাছের সরবরাহ বেশী হওয়ায় ব্রয়লার মুরগী ও গরু-মহিষের মাংসের দাম এখন কিছুটা কমে গেছে। ইতিপূর্বে প্রতিকেজি ১৬০/১৭০ টাকার মুরগী এখন ১০০/১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে ও গরুর গোস্ত ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৩৫০/৪০০টাকায় নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। কমেছে ডিমের দামও। জেলার বিভিন্ন বাজারের কাঁচাবাজারস্থ মাছ বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চিংড়ি প্রজেক্ট থেকে আহরিত রকমারী প্রজাতির বিপুল পরিমাণ মাছের সমারোহ। বাজারে উঠা মাছের মধ্যে তাইল্যা মাছ প্রতি কেজি ১৫০, বাটা ২৫০, গুইল্যা ২৩০, দাতিনা ২০০, বিভিন্ন সাইজের কোরাল মাছ ২০০-৩৫০, ঘ-ঘ মাছ ১৫০-২০০, কেঁচকি ১০০-১৫০, লইল্যা চিংড়ি ৩২০-৩৫০, চাগা চিংড়ি (ভানামী) ৪০০-৫০০ ও বাগদা চিংড়ি আকারভেদে ৪০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঘের থেকে আহরনের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাজা এসব মাছ বাজারে তোলা হচ্ছে। ফরমালিনমুক্ত টাটকা এসব মাছ পেয়ে ক্রেতারা আগ্রহ ভরে কিনে নিচ্ছেন। অনেকে আবার বেশী পরিমানে কিনে ফ্রীজ ভর্তি করে রেখে দিচ্ছেন। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ( সদর) ডঃ মঈন উদ্দীন আহমদ জানান, জেলায় উপকূলীয় ৫১৮৮ টি ঘেরে মোট ৪১ হাজার ৩৬৭ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডঃ মোঃ আবদুল আলীম বলেন, চলতি বছর চিংড়ি উৎপাদন মৌসূম শুরু হওয়ার পর থেকে চাষীদের সার্বক্ষনিক প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালে জেলায় ২২ হাজার ৩০২ মেট্রিক টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পাঠকের মতামত: