ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় মাঠে-গুদামে পড়ে আছে ১১ লক্ষ ৫৪ হাজার মে. টন লবণ জেলায়

ইমাম খাইর, কক্সবাজার :: কক্সবাজার জেলায় বিসিকের চাহিদার অতিরিক্ত ২৬ হাজার মে. টন বেশী লবণ উৎপাদন হয়েছে। সংকট দেখিয়ে আর কোন লবণ আমদানি করতে হবে না। দেশে উৎপাদিত লবণেই চলবে পুরো বছর।

তবে, মজুরি খরচও না ওঠায় মাঠে-গুদামে অবিক্রিত থেকে গেছে ১১ লক্ষ ৫৪ হাজার মে. টন। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে প্রতিমণ লবণের গড়মূল্য ১৫২ টাকা। সে হিসেবে কেজিতে পড়ে ৩ টাকা ৮০ পয়সা। অথচ ১ কেজি লবণ উৎপাদনে মজুরিসহ খরচ হয় প্রায় ৮ টাকা। অথচ গত বছর এই মৌসুমে গড় মূল্য ছিল ১৯৫ টাকা।

বিসিকের সুত্র মতে, গেল বছরের ৩ লক্ষ ৮৭ হাজার মে. টন উদ্বৃত্ত লবণ নিয়ে এ বছরের লবণ মৌসুম শুরু হয়।

১৮ লক্ষ ৪৯ হাজার মে. টন চাহিদার বিপরীতে গত ১৫ মে পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ১৮ লক্ষ ৭৫ হাজার মে. টন। যা চাহিদার চেয়ে ২৬ হাজার মে. টন বেশী।

তবে, কিছু কিছু এলাকায় এখনো লবণ উৎপাদন হচ্ছে, যা বিসিকের হিসেবের খাতায় যোগ হয় নি।

এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৮ লক্ষ ৫০ হাজার মে. টন।

এদিকে, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকার লবণ মাঠের মাটির নিচে বা গুদামে অবিক্রিত অবস্থায় ১১ লক্ষ ৫৪ হাজার মে. টন লবণ পড়ে আছে।

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন মিলের গুদামে আরো ২ লক্ষ ৫০ হাজার মে. টন লবণ মজুদ আছে।

সে হিসেবে ১৪ লাখ ০২ মে. টন লবণ মজুদ আছে। দেশের জমিতে উৎপাদিত লবণ দিয়ে বার্ষিক চাহিদা মেটানো যাবে। কোন আমদানি করতে হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় গত ২ মাস ধরে লবণ বিক্রি তেমন নেই। দালাল-ফঁড়িয়াদের নিকট জিম্মি প্রান্তিক চাষিরা। লবণ কিনেও টাকা দিচ্ছে না চাষিদের। ঢাকা-নারায়নগঞ্জ কেন্দ্রিক বড় মিলাররা সদরের ইসলামপুর থেকে কম দামে লবণ কিনে নিয়ে মজুদ গড়েছে। করোনার দুঃসময়েও প্রতিদিন শতশত ট্রাক লবণ নিয়েছে তারা। তেলার মাথায় তেল, কেবল বঞ্ছিত-অবহেলিত ‘দুর্ভাগা’ লবণচাষিরা।

বিসিক লবণশিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, দেশে প্রতিমাসে লবণের প্রয়োজন ১ লক্ষ ৫৪ হাজার মে. টন। বর্তমানে মজুদ ১৪ লক্ষ ২ হাজার মে. টন দিয়ে প্রায় ৯ মাসের চাহিদা পুরণ করা সম্ভব। কিন্তু আগামী মৌসুম শুরু হতে আর মাত্র ৬ মাস বাকি। অর্থাৎ দেশে লবণের কোন ঘাটতি নাই। ইতোমধ্যে করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ লবণ চাষীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৫০০ কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা/ঋণ সহায়তা পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

তিনি জানান, লবণ একটি বিকল্পবিহীন নিত্য ব্যবহার্য খাদ্য পণ্য এবং দেশের সর্ববৃহৎ শ্রম নিবিড় ক্ষুদ্র শিল্প। বাংলাদেশে শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ চাষ হয়, যা দিয়ে দেশের চাহিদা পুরণ করা হচ্ছে।

চলতি ২০১৯-২০২০ লবণ মৌসুমে ৫৭ হাজার ৭২২ একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছে। যেখানে লবণ চাষীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৭৯১ জন।

১৫ মে পর্যন্ত ১৪ লক্ষ ৮৮ হাজার মে. টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী আঘাত করা করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের বিভিন্ন শিল্পখাতের ন্যায় লবণ শিল্প খাতও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। সারাদেশে লকডাউনের কারণে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনায় লবণ চাষীগণ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে লবণ উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। ফলে কাঙ্খিত পরিমান লবণ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।

বিসিক জানিয়েছে, বিগত ২০১৮-১৯ মৌসুমে চাহিদার চেয়ে ১.৬৮ লক্ষ মে. টন বেশী লবণ উৎপাদন হয়েছিল এবং ২ লক্ষ ১৯ হাজার মে. টন লবণ আমদানী করা হয়। ফলে (১.৬৮+২.১৯)=৩ লক্ষ ৮৭ হাজার মে. টন লবণ উদ্বৃত্ত নিয়ে চলতি ২০১৯-২০২০ লবণ মৌসুমে ১৮ লক্ষ ৪৯ হাজার মে. টন লবণের চাহিদায় লবণ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়।

গত ১৫ মে পর্যন্ত ১৪ লক্ষ ৮৮ হাজার  মে.টন লবণ উৎপাদন হয়। গত বছরের উদ্বৃত্ত লবণসহ বর্তমানে (৩.৮৭+১৪.৮৮) ১৮ লক্ষ ৭৫ হাজার মে. টন লবণ জমা আছে। যা দিয়ে দেশীয় লবণের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

পাঠকের মতামত: