ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

জেলার ৪টি আসনে ইবরাহিমের প্রথম, আশেক-কমলের হ্যাটট্রিক, বদি ম্যাজিকে পুনরায় স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :: ৭জানুয়ারী/২৪, রোববার অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নিবাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন বাদে বর্তমান তিন সংসদ সদস্য পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমের কাছে ধরাশয়ী হলেন দাম্ভিক জাফর আলম। যদিও জাফর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নিয়েছিলেন।

বেসরকারিভাবে জয়ী বর্তমান তিন সংসদ সদস্যের মধ্যে সরকারের উন্নয়নকে পুঁজি করে কক্সবাজার-২ মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় হ্যাটট্রিক জয় পেয়েছেন আশেক উল্লাহ রফিক। কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনে ভোটারেরা বুঝিয়ে দিয়েছেন সাইমুম সরওয়ার কমলই এ আসনে যোগ্য। তিনিও পেলেন তৃতীয় বারের মতো জয়।

অপরদিকে সবচেয়ে আলোচিত কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে সাবেক দুই বারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির কারিশমায় আবারো দ্বিতীয় বারের মতো মসনদে বসতে যাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী শাহীন আকতার।

এর আগে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই কক্সবাজার জেলার চার সংসদীয় আসনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে বিজয়ীদের ঘোষণা করেন রিটানিং কর্মকর্তা।

যদিও ভোট গ্রহণের শেষ মুহুর্তে অনিয়মের অভিযোগ তুলে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। একইভাবে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন সদর-রামু-ঈদগাঁও আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ, উখিয়া-টেকনাফ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর ও জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন সিকদার। এছাড়া গণ্ডগোলের কারণে চকরিয়া-পেকুয়ায় তিন কেন্দ্রের ফল স্থগিত রাখা হয়েছে।

এদিকে রোববার রাত ১টা পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলের তথ্য অনুযায়ী,

কক্সবাজার-১, (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক।

তিনি দুই উপজেলার ১৫৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫৫টি কেন্দ্রের ফলাফলে হাতঘড়ি প্রতীক নিয়ে ৮১৯৫৫ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম (ট্রাক প্রতীক) পেয়েছেন ৫২৮৯৬ ভোট। তাদের ভোটের ব্যবধান ২৯০৫৯ ভোট।

এই আসনে গোলযোগের কারণে তিন কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে ফলাফল পাওয়া ১৫৫টি কেন্দ্রের ব্যবধান থাকা ভোটের সমপরিমান স্থগিত তিনটি কেন্দ্রের ভোট না থাকায় সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এ আসনে ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ৫জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে হ্যাট্টিক জয় পেয়েছেন আশেক উল্লাহ রফিক। বেসরকারি ফলাফলে ১১৮টি কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ৯৭৩৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম মনোনীত প্রাথী নোঙর প্রতীক আলহাজ্ব মো. শরীফ বাদশা পেয়েছেন ৩৪৪৯৬ ভোট। তাদের ভোটের ব্যবধান ৬২৯০২ হাজার।

ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী মহেশখালী উপজেলায় আশেক উল্লাহ রফিক পেয়েছেন ৬২৯৮০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আলহাজ্ব মো. শরীফ বাদশা পেয়েছেন, ৩১৫৩৮ ভোট। এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ খাইরুল আমিন (একতারা) ১১৭ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী জে,এইচ.এম ইউনুছ (মিনার) ২৩৯ ভোট, ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (চেয়ার) ১৬১ ভোট, ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি’র (এনপিপি) প্রার্থী মাহাবুবুল আলম (আম) ১১৬ ভোট পেয়েছেন। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোটে অংশগ্রহণকারী ৬ প্রাথীর মধ্যে চার জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে মহেশখালীতে ৮১ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৬০৪ জন। অপরদিকে কুতুবদিয়ার ৩৭ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৯৫ হাজার ৫২৩ জন।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনে বেসরকারিভাবে নিবাচিত হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। তিনি ১৭৬টি কেন্দ্রে ১৬৭০২৯ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ (ঈগল প্রতীক) পেয়েছেন ২১৯৪৬ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬১০ জন। ফলাফলে ১৪৫০৮৩ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন সাইমুম সরওয়ার কমল।

রামু উপজেলায় ৬৪টি কেন্দ্রে সাইমুম সরওয়ার কমল পেয়েছেন ৮৬ হাজার ২৪৯ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিজান সাঈদ পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৪৯ ভোট।

এই আসনের অন্যান প্রাথীরা হলেন, জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির শামীম আহসান ভুলু (কুঁড়েঘর), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন)।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আকতার। এ নিয়ে টানা চারবার আসনটি দখলে রেখেছেন স্বামী-স্ত্রী।
বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে শাহীন আকতার পেয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮০ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর পেয়েছেন ৩১ হাজার ৭০৭ ভোট।

এ আসনে সাতজন প্রার্থী ভোটে মাঠে ছিলেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো পেয়েছেন ১ হাজার ৭৫৮ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) প্রার্থী ফরিদ আলম আম প্রতীকে পেয়েছেন ৩২৭ ভোট, তৃনমুল বিএনপি প্রার্থী মুজিবুল হক মুজিব সোনালী আঁশ প্রতীকে পেয়েছেন ২৪৬ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোটের ওসমান গনি চৌধুরী মিনার প্রতীক নিয়ে ৮২৫ ভোট এবং বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী মোহাম্মদ ইসমাইল ডাব প্রতীকে ২৪৭ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৪৯.০৫ শতাংশ।

এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৭১ জন। এর মধ্যে উখিয়া উপজেলায় ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩১২ জন এবং টেকনাফে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৯ জন । ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, উখিয়ায় ভোট দিয়েছেন ৭৪ হাজার ৪৯৭ জন ভোটার। অন্যদিকে টেকনাফে ৮৫ হাজার ৬৪৬ জন ভোটার নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান করেছেন।
প্রসঙ্গত, ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম, জাল ভোট প্রদান ও নির্বাচনী এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর বিকেল তিনটার দিকে ও জাতীয় পার্টি প্রার্থী নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো বিকাল দুইটার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘কক্সবাজার চার সংসদীয় আসনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন শেষ করতে পেরেছি।‘

পাঠকের মতামত: