ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন: ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহর

AL-3_1কক্মসবাজার প্রতিনিধি :: 

জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল ৩১ জানুয়ারী । আর এ সম্মেলন ও কাউন্সিলের প্রচারণা ঘিরে চায়ের কাপেও ঝড় ওঠেছে রীতিমতো।
রবিবার সকাল দশটায় শহরের পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ দৌলত ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল।
সম্মেলনকে ঘিরে জেলাজুড়ে নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্যতা সৃষ্টি হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় ধরে সম্মেলন না হওয়ায় এবারের সম্মেলনে আগ্রহের মাত্রা একটু বেশী লক্ষ্যণীয়। শহরের অলি-গলিতে শোভা পাচ্ছে বড় বড় তোরণ। কাউন্সিলরদের ঘরে ঘরে যাচ্ছে প্রার্থীরা।
সকাল-সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত অবধি এক ঘর থেকে অন্য ঘর যাচ্ছে পদপ্রত্যাশী নেতারা। সাথে কর্মীরাও পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে নিরলস সময় কাটাচ্ছে। মাঠে প্রচারণার পাশাপাশি অনেকে অনলাইনে জোরেশোরে চালাচ্ছে প্রচার কাজ। সক্রিয় রয়েছে ফেসবুকেও। কোন অংশে থেমে নেই প্রার্থীদের প্রচার প্রপাগান্ডা। মোট ৩০৫ জন কাউন্সিলরের ভোটে নির্বাচিত হবেন পর্যটন নগরীর নৌকার কান্ডারী।
তবে যে কাউন্সিলর তালিকার স্বচ্ছতার প্রশ্নে বারবার সম্মেলন স্থগিত থাকে সেই একই অভিযোগ আবারো মাঠে সাউর হয়ে গেছে। অভিযোগ ওঠেছে প্রাচীন ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে পছন্দের লোকজনকে কাউন্সিলর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার। এ কারণে অনেক নেতাকর্মী অসন্তুষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
মহেশখালীর কালারমারছরার প্রয়াত ওসমান চেয়ারম্যানের ছেলে এ্যাডভোকেট নোমান শরীফ অভিযোগ করে বলেন, গত কাউন্সিলর তালিকায় আমার নাম ছিল। কিন্তু এবারের তালিকায় আমাকে বাদ দিয়ে আমার স্থলে আমার বাবার খুনের মামলার ৩ নম্বর আসামী সেলিম চৌধুরীকে যোগ করা হয়েছে।
একইভাবে কাউন্সিলর তালিকা থেকে পরিকল্পিতভাবে বাদ দেয়া হয়েছে প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনচারুল করিম, মহেশখালীর সাবেক পৌর মেয়র পূর্ণচন্দ্র দেসহ আরো অনেককে। পদাধিকার বলে ইউনিয়ন সভাপতি কাউন্সিলর হওয়ার বিধান থাকলেও কালারমারছরা সভাপতি মাস্টার বশির আহমদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তিনি দুঃখ করেন বলেন, নেতাদের এমন আচরণে মনে হচ্ছে আমরা বিরোধীদলে আছি।
এবারের সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন এমপি। প্রধান বক্তা হিসাবে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া ডজনখানেক আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতা সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
জলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৩ সালের ২০ ডিসেম্বর। সেই সম্মেলনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সভাপতি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা একেএম মোজাম্মেল হক সভাপতি ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ সিআইপি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে একেএম মোজাম্মেল হক মারা গেলে প্রথমে সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং পরে ২০০৭ সালে এডভোকেট একে আহমদ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়ার পর থেকে টিমেতালে চলছিল জেলা আওয়ামীলীগের কার্যক্রম। সর্বশেষ সম্মেলনের পর প্রায় ১০/১২ বার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হলেও নানা কারণে সম্মেলন হয়নি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে সম্মেলনের বিষয়টি জোরালো ভাবে উঠে আসছে ৩১ জানুয়ারী সম্মেলনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। জেলা আওয়ামীলীগের আওতাধীন ৮টি উপজেলাসহ মোট ১১টি সাংগঠনিক উপজেলা শাখার সম্মেলন শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে কাউন্সিলর তালিকাও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
দলের তথ্যমতে, সভাপতি পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট একে আহমদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ সিআইপি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম-সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম ভোটারদের কাছে ভোট চেয়ে দিন-রাত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য রাশেদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাসেদুল হক রাশেদ, রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবচার এবং কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা রেজাউল করিম প্রচারণায় রয়েছেন।
তাছাড়া সম্প্রতি জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ত্যাগি নেতা এডভোকেট ফরিদুল আলম ও শহর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দু সাধারণ সম্পাদক পদে নিজেদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, পর্দার অন্তরালে নানা নাটকীয়তা চলছে। ওঠে আসছে প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা। চলছে একে অপরের দোষ অন্বেষণ। এ নাটকের শেষ দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত।

পাঠকের মতামত: