শহিদ রাসেল ::
জীবনের সাথে কর্মের সম্পর্কটা খুব গভীর। জীবনবোধকে জাগ্রত রাখতে হলে আপনাকে কাজ করতে হবে। কাজের দায়ভার সম্পূর্ণভাবেই কর্মীর উপর বর্তায়Ñ হোক তা ইচ্ছাকৃত বা আদেশকৃত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা আসেনা, কখনো কখনো ব্যর্থতা বা ভুলের মাশুল গুনতে হয়। আর হতাশা ঢেকে দিতে পারে জীবনের গতিপথ। তাই বলে থমকে যাওয়া যাবেনা। জীবন নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে আর প্রয়োজনে বারবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে। শপথ করা হয় তা ভঙ্গ হওয়ার দুশ্চিন্তা থেকেই। তাই শপথ নেয়ার পর তা রক্ষা বা পুনরায় দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করার মানসিকতা রাখতে হবে। উল্লেখ্য, ভুল মানে অপরাধ নয় বরং ইচ্ছাকৃতভাবে বারবার ভুল করাটা অবশ্যই দ-নীয় অপরাধ। তাই আমাদেরকে সচেতনভাবে কর্মসম্পদনে অংশগ্রহণ এবং সফলতার জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রচেষ্টারত থাকতে হবে।
আজকাল আমরা খুব অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। বিবেক-বুদ্ধির হিসেব না মিলিয়ে তাৎক্ষণিক দেয়া সিদ্ধান্ত আমাদেরকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। আর এই অবস্থার জন্য আমরা নিজেদের দোষারূপ না করে অন্যের দিকে আঙ্গুল তুলি। এই ধরনের হীন মানসিকতা যেন আমাদেরকে বিপথে নিয়ে যেতে পারে, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। দোষ স্বীকার করে নেয়ার মাঝেই অপেক্ষা করে পরবর্তী বিজয়গাথাঁ। ভুল / দোষ থেকে শিক্ষা নেয়ার মাধ্যমেই সঠিক / শুদ্ধতার পথে এগিয়ে যাওয়া যায়। আর অহংবোধ মানুষকে সাধারণ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমাদেরকে সাধারণের সাথেই মিশে থাকতে হবে, তবেই নিজের দাযিত্ববোধ ও অধ্যবসায়ের মাধ্যেমে একদিন অসাধারণ হওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে।
মনের জোর থাকলে যেকোনো কাজেই সফলতা আসে। তবে কর্ম ও কর্মীর মধ্যে ভারসাম্য থাকাটা অতীব জরুরী বিষয়। তাই কর্মসম্পাদনের পূর্বে অবশ্যই কর্তাব্যক্তির অবস্থান সুস্পষ্ট করতে হবে। অন্যায়, অবাধ্যতার বেলায় ইচ্ছের লাগামকে টেনে ধরতে হবে। এছাড়া পূর্ব প্রস্তুতি ব্যতিত কর্মক্ষেত্রে বিজয় আশা করা যাবেনা। সুষ্ঠুভাবে কাজের তদারকি করা না হলে খুব ক্ষুদ্র ইস্যুতেও ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের বিপত্তি। দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধবোধ ও কাজের প্রতি আন্তরিক হতে পারলে আমাদেরকে কেউ ‘দাবায়ে’ রাখতে পারবেনা। কতিপয় ব্যতিত অধিকাংশের মনে ‘কর্ম না করেই কর্মফল ভোগ করা’র মতো ছোট মানসিকতা বিরাজ করে। হয় তো এই মানসিকতার জন্য সভ্যতার এই ক্রমবিকশিত উন্নত যুগেও আমরা অসভ্য আচরণ করছি। এধরনের ক্ষুদ্রতা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বার বার পরাজিত হওয়ার পরও ধৈর্যশক্তি আর সৎসাহস মানুষকে বিজয়বার্তা এনে দেয়। অর্পিত দায়িত্বের প্রতি অটুট থাকতে পারলে কর্মস্বীকৃতি মিলবেই Ñ হোক তা কর্মজীবনের শুরুতে, মাঝে বা কর্মজীবনের শেষে। তাই কাজের ব্যর্থতায় হতাশ না হয়ে পুনরায় নবউদ্যমে কাজে মনোনিবেশ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ষড়যন্ত্র বা অপ্রাপ্তি মানুষকে বিভ্রান্তকর পরিস্থিতি ফেললেও ব্যক্তি তার অধ্যাবসায়, ধৈর্য ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। আর যারা অভ্যাসের দাসে পরিণত হয়ে নিজের সবকিছুই হারিয়ে ফেলে, তাদের জন্য করুণা ও সমবেদনা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা।
মানুষ তার বাস্তবজীবনের প্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের বুকে টিকে থাকতে তথা নিজেকে স্মরণীয়/কালজয়ীদের কাতারে দাঁড় করাতে অনেক অসাধ্যকেও সাধন করে থাকেন। বস্তুত: শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি নিয়মিত মনোসংযোগ বা নিরবচ্ছিন্ন সাধনাই কর্ত্যাক্তিকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেন। সকল প্রকার অহমিকা ঝেড়ে ফেলে, বিশাল মনের অধিকারী হতে হবে। ক্ষুদ্রতা, নীচুতা, কৃপণতা মানুষের ভিতর ঘুমিয়ে থাকা প্রতিভা/মেধার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। নিজের সর্বোচ্চটা দেয়ার সুযোগ/অনুকূল পরিবেশ না পেলে কোন ব্যক্তিই চমক দেখাতে পারেনা। পরিবেশের অবদানকে অস্বীকার করে কেউ প্রকৃতিকে জয় করতে পারেনা। প্রকৃতির ভাষাকে বুঝতে ও প্রাকৃতিক বিষয়াদি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে। দূষণ ও জালিয়াতি রোধ করতে না পারলে আমাদের বসবাস হবে চরম হুমকির সম্মুখীন। তবে যত বড় বাধা-বিপত্তিই আসুক না কেন (হোক তা প্রাকৃতিক/মনুষ্য সৃষ্ট) Ñ আমরা কখনোই ঘাবড়ে যাবোনা, পদভ্রষ্ট হবোনা। আমাদেরকে বারবার নবউদ্যমে জেগে উঠতে হবে। আর প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম উন্নত শিরে উড়াতে হবে ‘বিজয়ের পতাকা’। আমাদের প্রতিটি ঘরে বপিত হোক সফলতার বীজ মন্ত্র।
লেখক : শহিদ রাসেল,
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
পাঠকের মতামত: