শাহীন মাহমুদ রাসেল ::
বাঙালি জাতির এক আবেগের নাম ক্রিকেট। তবে এক ধরনের অসাধু চক্র ক্রিকেটে প্রতিনিয়তই হাজার হাজার টাকার ফলাফল বাজি, ওভার বাজি, রান বাজিসহ বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলছে। জুয়াবাজির ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকেই। প্রকাশ্য দিবালোকেই জুয়াবাজি চলছে রাস্তার মোড়ের দোকানসহ কক্সবাজারের আনাচে-কানাচে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ক্রিকেট চলছে ঢাকা, চট্টগ্রামে। আর চলতি এই ক্রিকেট লীগে সরব কক্সবাজার শহর, সদর ও রামু উপজেলার বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পাড়ার মোড়ের টং দোকান।
রবিবার দুপুরে কলাতলী পর্যটন এলাকার সুগন্ধা বীচ সংলগ্ন চায়ের দোকানের টেলিভিশনে চলছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস বনাম বরিশাল বুলসের মধ্যেকার বিপিএল ক্রিকেট ম্যাচ। অনেক মানুষের জটলা। এর মধ্যে জনৈক যুবক হাক ছাড়ছেন, এই ওভারে ছক্কা হবে, কারা পক্ষে এবং বিপক্ষে বাজি ধরবেন? আর উপস্থিত বাজিকররা নির্দিষ্ট অংকের বাজি (জুয়া) ধরছেন। এই ক্রিকেট বাজিকরদের সুবাদে কক্সবাজার শহর এখন জুয়ার নগরী।
এখানে বিপিএল ক্রিকেট জ্বরে ভুগছে কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত। তবে এই জুয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কোনো নজরধারী এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
জানা যায়, স্থানীয়ভাবে যারা এই ক্রিকেট জুয়ার সাথে জড়িত তাদের সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততা ও বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অথবা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ নিয়ে। আর স্থানীয়দের ক্রিকেট জ্ঞান দেখে মনে হয় তারা কোনো বড় মাপের ক্রিকেট বিশারদ। দেশের কিংবা দেশের বাহিরের কোনো ক্রিকেট লিজেন্ডের হয়তো জানা নেই বিশ্বের কোন দেশে কোন ক্রিকেট লীগ চলছে। অথচ স্থানীয় এই ক্রিকেট বাজিকররা জানেন বিশ্বের কোনো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্রিকেটলীগের কথাও। তারা যে শুধু ক্রিকেট নিয়ে পড়ে আছে তা কিন্তু নয়। তারা ব্যস্ত সময় কাটান ফুটবলের কোনো আসর বা লীগ নিয়েও।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলতি এই বিপিএল ঘিরে যে বাজি বা জুয়ার আসর চলছে, তাদের মধ্যে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষই বেশি। বাজির অর্থ লাভের আশায় সারাদিনের কাজকর্ম ফেলে ক্রিকেট জুয়া খেলায় বসেন। খেলা শেষে কেউ ফেরেন হাসি মুখে আর কেউ ফিরে নিঃস্ব হয়ে। এছাড়াও এই নিম্ন মধ্যবিত্তের বাইরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি অংশ বিপিএল ক্রিকেট জুয়ায় মেতেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামু উপজেলার চৌমুহনী, তেচ্ছিপুল, জোয়ারিয়া নালা, কলঘর, ফকিরা বাজার, তেমুহনী, পান্জেখানা, পানির ছড়া, মিঠাছড়ি, গর্জনিয়া, এছাড়া সদরের খরুলিয়া, পিএমখালী, খুরুশকুল, বৃহত্তর ঈদঁগাও, ভারুয়া খালী, শুধু তাই নয়, শহরের অলি-গলি হোটেল, রেস্টুরেন্ট, চায়ের দোকানগুলোতে ক্রিকেট বাজিকরদের বাজি (জুয়া) ধরার প্রবণতা বেশি।
স্থানীয় ক্রিকেট বাজিকরদের বাজি ধরার পদ্ধতিটা খুবই চমকপ্রদ। টেলিভিশনে খেলা শুরু হওয়ার আগেই জয়-পরাজয়ের পক্ষে-বিপক্ষে দু’টি বাজিকরের দল দু’ভাগে বিভক্ত হয়। প্রথমে কে জয়ী হবে তার পক্ষে-বিপক্ষে বাজি ধরা হয়। বাজির এই অর্থ সর্বনিম্ন ২শ টাকা থেকে শুরু করে ৪০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। তবে এর বাহিরেও চলে খুচরা বাজি। এই ওভারে উইকেট পড়বে কিনা? এই ওভারে ছক্কা বা চার হবে কিনা? হলে কয়টি হবে? ওভারে কোনো ওয়াইড বা নো বল হবে কিনা? এসব নিয়েই প্রতি ওভারে চলে খুচরা বাজির বাণিজ্য। এছাড়াও বাজি ধরা হয়, অমুক দল কত রান করবে? তমুক বোলার কত উইকেট নিবে? অমুক ব্যাটসম্যান কত রান করবে? বা তিনি ফিফটি/সেঞ্চুরী করতে পারবে কিনা?
একাধিক সূত্র জানায়, স্থানীয় এসব বেকারদের ক্রিকেট বাজির (জুয়া) কারণে অনেকেই নিঃস্ব হচ্ছেন। কিন্তু তারপরও ছাড়ছেনা এই জুয়ার পথ। ক্রিকেটের এই বাজির টাকা জোগান দিতে তারা স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। আর এসব কারণে কক্সবাজারের প্রতিটি অঞ্চলে বাড়ছে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড।
স্থানীয়দের ধারণা এখনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে শহরে এবং উপজেলায় অপরাধমূলক কর্মকান্ড বাড়বে। আর এসব কারণে ক্রিকেট জুয়ার সাথে জড়িতদের অভিভাবকরাও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তাদের সন্তানদের নিয়ে।
এ ব্যাপারে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, এটা জুয়া না ক্রিকেট খেলা দেখতে বসেছে বোঝার কোনো উপায় নাই। এছাড়া জনসম্মূখে টাকা-পয়সা লেনদেনও করে না।
পাঠকের মতামত: