ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ

মাহাবুবুর রহমান. কক্সবাজার :: চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। দৈনিক আয় কমে যাওয়া এবং নিত্যপণ্য সহ সব কিছুর দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার কারনে আয়ের সাথে ব্যায়ের সঙ্গতি ধরে রাখতে পারছে না মানুষ। তার উপর চিকিৎসা ব্যায়ে ব্যাপক হারে পরীক্ষা ফি বৃদ্ধি,ডাক্তারের ফি বৃদ্ধি এবং ঔষধের বাড়তি দামের কারনে চিকিৎসা ব্যায় মিটাতে পারছে না সাধারণ মানুষ। তার উপর চিকিৎসা করাতে নানান ধরনের হয়রানি সহ ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারনেও চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাই মৌলিক এই অধিকার বিষয়ে মানুষের মাঝে দিন দিন অসন্তোষ বাড়ছে।

শহরের টেকপাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী মোহাম্মদ আলী বলেন,আমি সৌদি আরব প্রবাসী সেখানে আমার পায়ু পথে একটি ফোড়া উঠায় সেটা অপরেশন করাতে দেশে এসেছি। পরে কক্সবাজারের একজন সিনিয়র সার্জারি ডাক্তারের পরামর্শে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে অপারেশন করিয়েছি। সেখানেও প্রায় ৪০ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। পরে দেখছি অপারেশন আর শুকাচ্ছে না। পরে আরো একজন ডাক্তার দেখালে তিনি বলেন,অপারেশনে ইনফেকশন হয়েছে আপনি ঢাকা বা চট্টগ্রাম চলে যান,বর্তমানে ঢাকাতে এসে আরো একজন ডাক্তার দেখিয়েছি তিনি বলেছেন আমার আগের অপারেশন ঠিক হয়নি। এখন আবার করাতে হবে। ৭০ হাজার টাকা দিয়ে আবার অপারেশন করিয়েছি,তিনি বলেছেন,ঢাকাতে ৩ মাস থাকতে হবে। প্রতিমাসে দেখতে হবে। সে জন্য ঢাকাতে ঘর ভাড়া নিয়েছি। হাজী পাড়া এলাকার সমাজ সেবক বশির আহামদ বলেন,আমি হৃদরোগ সহ বিভিন্ন কারন নিয়ে গত একমাস ধরে জেলা শহরের বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ব্যাপক আর্থিক এবং মানসিক হয়রানীর শিকার হয়েছি। তিনি জানান,ডাক্তার ফি দিতে হয়েছে ৭০০ টাকা,এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার পরীক্ষা করিয়েছি,আর ঔষধের কথা বাদই দিলাম। এভাবে হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে। টেকপাড়া এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গৃহীনি বলেন,আমি মহিলা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আজকে একমাসের বেশি সময় ধরে কস্ট পাচ্ছি। এ পর্যন্ত ৪ বার হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। প্রায় লাখ টাকার উপরে চলে গেছে। তবুও এখনো কোন সুরাহা হয়নি। খুরুশকুল এলাকার ফকির পাড়া এলাকার শাহাবুদ্দিন বলেন,আমার ছেলেন গায়ে জ¦র উঠেছে প্রায় ১ মাস ধরে এখন পর্যন্ত ৭/৮ বার ডাক্তার দেখিয়েছি বার বার এন্টিবায়টিক দিয়েছে কিছুতেই জ¦র কমছে না। পরে বর্তমানে চট্টগ্রামে এসেছি চিকিৎসা করাতে। এখানে একটি আলট্রাসনোগ্রাফি ২ হাজার টাকা,প্রতিটি পরীক্ষার দাম বেশি,ডাক্তার দেখাতে এক হাজার টাকা। কক্সবাজারেও সব কিছু দাম বাড়তি। এতে আমাদের মত গরীব মানুষ নি:স্ব হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কি করবো ধারকর্য করে ছেলের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। শহরের পেশকার পাড়ার মহিলা নাছিমা আক্তার বলেন,আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে ৩ বার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি,বার বার অপারেশনের সময় দেয় কিন্তু করেনা। কমপক্ষে ২০ বার একই পরীক্ষা করিয়েছে। প্রতিদিন শুধু পরীক্ষা দেয় এ পর্যন্ত ২ বার স্বর্ণ বিক্রি করেছি। আর কিছুই নাই যে বিক্রি করবো। জানিনা কি করবো। তার উপর সংসারে আয় করার মত আর কেউ নেই। ছেলেমেয়ে সবাই পড়ালেখা করে। আমার মতে গরীব মানুষের কোন চিকিৎসা নেই মৃত্যু হলেই যেন সব শেষ।

এদিকে জেলা সদরে ডাক্তারের ফি বৃদ্ধি,নামে বেনামে অতিরিক্ত পরীক্ষা দেওয়া আর প্রতিটি পরীক্ষা ফি বৃদ্দি একই সাথে ঔষধ খরচের কারনে চিকিৎসা করনো যেন এখন সাধারণ মানুষের আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে নাগরিক হিসাবে মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সেবা যেন দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানান সাধারণ মানুষ। এ ব্যপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সিনিয়র ডাক্তার বলেন,সব কিছুর অবস্থা খারাপ,আর সিস্টেমের বাইরে কিছুই নাই। সত্যি কথা হচ্ছে এখন সব কিছু বানিজ্যিক হয়ে গেছে। এটা সত্যি চিকিৎসা ব্যায় এখন অনেক গুণ বেড়েছে। তবে অনেক বড় শহরের চেয়ে এখানে অনেক ভাল আছে বলে দাবী করেন তারা।

পাঠকের মতামত: