কক্সবাজার পরিবহন সেক্টর নিয়ে মাসে অর্ধ-কোটি টাকারও বেশি চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। রিক্সা, টমটম, মটর সাইকেল, সিএনজি, মাহিন্দ্রা, ডাম্পার ও ডিজেল চালিত অটো রিক্সা, বাস-মিনিবাস, মাইক্রো-হাইয়েচ, ট্রাক-মিনিট্রাক ও বিভিন্ন ফিটনেস বিহীন লক্কর ঝক্কর গাড়ী থেকে এই চাঁদা আদায় করা হয় বলে বিশ^স্থ সূত্রে জানা গেছে। তবে তাদের নিয়োগকৃত চাঁদা আদায়কারির পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারাই সরাসরি এ চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এই চাঁদাবাজির ফলে নিজেরা লাভবান হলেও একদিকে বাড়ছে অবৈধ গাড়ীর সংখ্যা আবার অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বিশাল অংকের রাজস্ব। তবে সব মিলিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা। ধারাবাহিকভাবে চলে আসা এমন অনিয়ম দুর্নীতির আবসান চান ভোক্তভুগী পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সব মহল। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, কক্সবাজার শহরকে কেন্দ্র করে জেলাব্যাপি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ সহ অধশতাধি অবৈধ যানবাহন। এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে টমটম, মটর সাইকেল, সিএনজি, মাহিন্দ্রা, ডাম্পার ও ডিজেল চালিত অটো রিক্সা, বাস, ট্রাক, মাইক্রো ও মেয়াদ উত্তীর্ন ফিটনেস বিহীন গাড়ী। এসব গাড়ীর কোনটিরও ফিটনেস সার্টিফিকেট অথবা রোড পারমিট নেই। মূলত নাই শব্দটিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে ট্রাফিক পুলিশ প্রতিনিয়ত পরিবহন সেক্টর থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র না থাকলে পুলিশ গাড়ীর বিরুদ্ধে মামলা করবে এবং ব্যাংকোর মাধ্যমে জরিমানা আদায় করবে এটাই আইন। কিন্তু পুলিশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওই সব অবৈধ গাড়ীকে জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ লাইন কিংবা ট্রাফিক পুলিশের অফিসের পেছনের মাঠে। পরে কোন ধরনের মামলা না দিয়ে ২/৩ হাজার থেকে শুরু করে ২০/৩০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেয় আইন রক্ষাকারি ভক্ষকরা। এক কথাই বলা চলে অবৈধ সব গাড়ীই তাদের উপরি আয়ের একমাত্র অবলম্বন। এছাড়াও বৈধ অবৈধ সব গাড়ী থেকে প্রতিমাসে আদায় করছে ৩শ থেকে ৬শ টাকা। এই অবৈধ মাসিক মাসোহারা তুলার জন্য রয়েছে দুইটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের যারা প্রধান তাদের মধ্যে এক জন শহরের সমিতি পাড়ার অবসর প্রাপ্ত পুলিশ কনেস্টবল। অপর জন ট্রাফিক পুলিশে কর্মরত কনেস্টবল। অভিযোগ ওঠেছে, এই চাঁদা আদায়কারির গডফাদার হিসেবে গুরু দায়িত্ব পালন করেন ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ বিনয় কুমার বড়–য়া। মূলত তিনিই মাসিক চাঁদাবাজির পাশাপাশি প্রতিদিন আটককৃত পরিবহন এবং যানবাহন এর বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দমকি দিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গলাকাটা বাণিজ্য চালিয়ে যান। তবে তিনি চাঁদাবাজি, ধান্ধাবাজি বা মাসিক মাসোহারা আদায় যা করেন না কেন, মাসের শেষেই তা বিলিয়ে দেন উপর মহল থেকে নি¤œ স্তর পর্যন্ত। আবার তাতেও রয়েছে শতকরা হিসেব। সাধারণ মানুষের ঘাম ঝরানো অর্থ নিজের পকেটে ডুকিয়ে অফিস প্রধান থেকে শুরু করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের শতকরা হিসেবে পেলে নিখোত ভাবে ভাগবাটোয়ারা করে দেন। তবে উপরুক্ত বিষয়ের ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক বিনয় কুমার বড়–য়া জানান, আমি চাঁদাবাজির সাথে সম্পৃক্ত নয়। তবে যে সকল অবৈধ পরিবহন এবং যানবাহন আটক করি তা আপনাদের মতো সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধে ছেড়ে দিতে হয়। ছাড়ার সময় উৎকুচ নেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাবু আর কথা বলতে রাজি না। পাশাপাশি নিজস্ব লোক দিয়ে মাসিক ও দৈনিক পরিবহন সেক্টর থেকে মাসোহায়া আদায়ের বিষয়ও অস্বীকার করেন তিনি। তবে ডিসেম্বরে যে সকল যানবাহন ও পরিবহন আটক করে যে পরিমান অর্থ মালিক কিংবা চালকের কাছ থেকে আদায় হয়েছে তার সিংহভাগ সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। পাশাপাশি আছে মাসিক মাসোহার বিশাল অর্থও। তবে তিনি বলেন, শুধু আমাদের দিকে না থাকিয়ে হাইওয়ে ও থানা পুলিশ কি করে দেখেন। মাসোহারা শুধু আমরা নিইনা। এদিকে ৯ জানুয়ারি কক্সবাজার ট্রাফিক অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাফিক কর্তা বিনয় বাবুর কান্ড। রাজার হালে চেয়ারে বসে আছে বিনয় বাবু। আর সামনে আছে ১০/১২ জন টমটম চালক। চলছে চরম দরকসাকসি। পরক্ষনে শহরের টেকপাড়ার কালাম নামে এক টমটম চালক চাবি নিয়ে ট্রাফিক অফিস থেকে গালমন্ধ করে বের হতে দেখা যায়। বিষয়টি জানতে চাইলে চালক জানায়, কাগজপত্র থাকার সর্ত্তেও অর্নতক ২ হাজার ২শত টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। তবে থাকে জরিমানার কোন কাগজ দেয়নি উক্ত কর্তা। যা নগদ নারায়নে শেষ। ৯ জানুয়ারি সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আটক হয় প্রায় ২৫টি টমটম। যা রাত সাড়ে ৯টার সময় বেচা-বিক্রি করে অবশিষ্ঠ থাকে ৭টি। এভাবেই নগদে চলছে বাণিজ্য। অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কোন মালিক কিংবা চালককে জরিমানার অর্থ জমা দেয়ার জন্য ব্যাংকে যেতে হচ্ছেনা। বিনয় বাবুর ক্যাশেই সব হিসেব নিকেশ শেষ। ১১৬৫ নম্বারের লাইসেন্স এর টমটম মালিক জানায়, ট্রাফিক পুলিশ মূলত ধান্ধাবাজি করার জন্য আমাদের গাড়ি গুলি ধরে নিয়ে আসে। একই ভাবে ২৩৪০ নাম্বার লাইসেন্স এর মালিক আবদুল হালিম জানায়, সব কিছু পরিপূর্ণ থাকার পরও নগদ টাকা আদায়ের জন্য আমার গাড়িটি ট্রাফিক পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তারা কোন প্রকার জরিমানার কাগজ দেয়না। নগদ টাকা নিয়েই ছেড়ে দেয়। এদের পাশাপাশি অফিসের ভেতর বিনয় বাবুর কাছে এক ফরিয়াদির কান্ড দেখে অভাক উপস্থিত লোকজন। ফরিয়াদির নাম আলম। তার আকুল আকুতি, “গত পরশু আড়াই হাজার টাকা আপনাকে দিয়ে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। আজ আবার নিয়ে আসা হয়েছে। আমি গরীব মানুষ, আমাকে একটু ছাড় দিন স্যার। এই গাড়ীটি চালাতে না পারলে বৌ বাচ্চা উপোস করবে।” বেচারা টমটম মালিকের এমন করুণ আকুতিতেও মন ভরলোনা ট্রাফিক ওসি’র। চোখ রাঙিয়ে বললেন ওসি,“ আড়াই হাজার টাকার এক টাকাও কম হবেনা, যান বেরিয়ে যান, টাকা নিয়ে আসেন।” পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন এভাবে অর্ধ-শতাধিক টমটম ধরে এনে জরিমানার নামে চাঁদা আদায় করছে ট্রাফিকের এই বড় কর্তা। অর্ধ-শতাধিক টমটম থেকে আড়াই হাজার করে নিলে কত টাকা হয় পাঠকের বুঝতে বাকি থাকেনা। আলমের মতো শতশত ফরিয়াদি টমটম চালক মাথা টুকছে ট্রাফিক অফিসে। ফরিয়াদিরা ট্রাফিকের রুমে ঢুকছেন টাকা নিয়ে, জমা নিচ্ছেন নিজেই বা ইউনুচ। দরজায় উঁিক দিয়ে দেখা যায়, ওসি’ বিনয় বাবুর পাশে বসে আছে টিআই আনোয়ার হোসেন ও কামরুজ্জামান। তারাও একই পথের প্রতীক। এই অফিসের কার্যক্রম দেখে মনে হবে রীতিমতো যেন টাকার হাট বসেছে। সরকারী খাতে জরিমানা আদায়ের রশিদ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সিএনজি, মাহিন্দ্রা, ডাম্পার, রিক্সা ও টমটমের ক্ষেত্রে তা মোটেই মানা হচ্ছেনা। জরিমানার বিপুল টাকা যাচ্ছে অফিসারদের পকেটে। সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব। এদিকে টমটম চালকের ন্যায় ৯ জানুয়ারি বিকেলে মোটরসাইকেল ছাড়িয়ে নিতে আসা নাঈমুল নামে এক যুবক রশিদ ছাড়া টাকা দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, ভাই তর্কাতর্কি করে লাভ কি। আকাশের যত তারা ট্রাফিক পুলিশের তত ধারা। যেমন গাড়ীর কাগজ পত্র ঠিক থাকলে বলবে ড্রাইভিং লাইসেন্স ভূঁয়া! অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক থাকলে বলবে, ইঞ্জিন ত্রুটিপূর্ণ। কোন দোষ খুঁজে না পেলে বলবে বেপরোয়া গাড়ী চালানোর অভিযোগ! কথা একটা গাড়ী দাঁড় করালেই সেলামি বা “হ্যান্ডশেক” করতেই হবে। সার্জেন্টদের ৩০০ টাকার কম দিলে মাইন্ড করে। টাকার রেইটও নাকি সর্ব নিম্ম ২০০ টাকা। এর কম দিলে বলে,“ ফকিন্নির পোলা—- ভিক্ষা চাইছি নাকি?”। এভাবে দেদারছে চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে ট্রাফিক অফিসের পাশাপাশি গোটা কক্সবাজারের প্রধান সড়কসহ উপ সড়ক গুলিতেও। এছাড়া অভিযোগ আছে, সারাদিন বিভিন্ন স্পট থেকে জরিমানা করা যানবাহনের মালিকদের সঙ্গে প্রসিকিউশন শাখায় মধ্যস্ততা করা হয়। আদায়কৃত টাকার তৎসামান্য কোষাগারে জমা হলেও বাকি টাকা ভাগভাটোয়ারা হয় নিজেদের মাঝে। নিমিষেই পাল্টে যায় মামলার কাগজপত্র। একটি ছিড়ে আরেকটি তৈরি। ৫টি ধারায় মামলা হলেও জরিমানা আদায়ের পর ধারা থাকে ১টি। আর একটির ধারায় জরিমানা জমা হয় সরকারি কোষাগারে। এভাবেই চলছে বিনয় বাবুর তেলেশমাতি কান্ড। তবে সব কিছু হিসেব নিকেশের ক্ষেত্রে পাক্কা সহকারি পুলিশ সুপারও। তিনি আবার কম কষ্টে বেশি ভাগ নেয়ার কারনে তাকে নিয়েও চলছে স্নায়ু যুদ্ধ। যা পাঠক অবাক হওয়ার মত।
প্রকাশ:
২০১৭-০১-১৪ ১৩:৩৩:৫২
আপডেট:২০১৭-০১-১৪ ১৩:৩৩:৫২
- পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট, চিকিৎসা সেবা ব্যাহত
- চকরিয়ায় সেনাবাহিনীর হাতে নারীসহ তিনজন গ্রেফতার
- মেরিন ড্রাইভ সড়কে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক নিহত
- চকরিয়ায় সাবেক এমপি জাফর সাঈদি সহ আওয়ামী লীগের ২৮৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় নতুন মামলা
- চকরিয়ায় যাত্রীবাহী বাস থেকে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার, বিক্রেতা গ্রেফতার
- দুর্নীতির আখড়ায় কক্সবাজার সিটি কলেজ
- চকরিয়ায় ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ছিনতাই
- বদরখালী সমিতির ১১টি মৎস্য প্রকল্পের নিলাম নিয়ে বিরোধ
- রামুতে আপন ভাতিজিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি
- রামুতে ল্যাপটপ পেলেন ৮০ নারী ফ্রিল্যান্সার
- চকরিয়ায় আওয়ামিললীগ ক্যাডার নজরুল সিণ্ডিকেটের দখলে ৩০ একর বনভুমি:
- চকরিয়া সদরের বক্স রোড সম্প্রসারণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ
- বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে গেলেন পদত্যাগ করা বিতর্কিত অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম
- চকরয়ার ঠিকাদার মিজান গ্রেফতার, কোটি টাকার ঋণের জেল-জরিমানার দায়ে
- কক্সবাজার আবাসিক হোটেলে ৭০ ইউপি সদস্যের ‘গোপন বৈঠক’, আটক ১৯
- চকরিয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ২টি ডাম্পার ও স্কেভেটর জব্দ
- চকরিয়ার রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় : কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
- ঈদগাঁও’র নবাগত ইউএনও বিমল চাকমা
- চকরিয়ার সাবেক এমপি জাফর আলম, সালাহউদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের ৭৩৬ জন আসামী
- চকরিয়ায় ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ছিনতাই
- উত্তপ্ত রামু সরকারি কলেজ: অধ্যক্ষ মুজিবের অপসারনের দাবিতে কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনে তালা
- কুতুবদিয়ায় গর্তে ১০ লক্ষ মণ পুরাতন লবন,লোকসানের শংকা চাষীরা
পাঠকের মতামত: