নিজস্ব প্রতিবেদক, মহেশখালী :: সাধারণত নভেম্বর মাস থেকে লবণ মৌসুম শুরু হয় । এখনো কাঙিক্ষত পরিমাণ লবণ চাষি মাঠে নামেনি। দাম নিয়ে রয়েছে হতাশা। আর যে সব প্রান্তিক লবণ চাষীরা মাঠে নামছেন তারাও কাজে তেমন মন দিচ্ছে না। কারণ লবণের দাম নাই। বর্তমান মাঠপর্যায়ে লবণ পানির দামে বিক্রি হচ্ছে।
মূলতঃ দুই কারণে এ বছর চাষিরা মাঠে নামতে দেরি হচ্ছে। প্রথমতঃ বাজারে লবণের ন্যায্য মূল্য নাই। মৌসুম শেষে লোকসান ও ধারদেনায় ঘরে ফিরতে হয় চাষিদের। দ্বিতীয়তঃ মৌসুমের শুরুতে ‘বড় জো’ তথা চাষযোগ্য মাঠে অধিক পানি ঢুকে পড়ায় সঠিক সময়ে মাঠ প্রস্তুুত করতে পারে নি।
অপরদিকে দেশের প্রধান লবণ উৎপাদন কেন্দ্র কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আকস্মিক লবণের দাম এ যাবৎকালের সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। মহেশখালী দ্বীপের মাঠ পর্যায়ে প্রতি মণ উৎপাদিত লবণের দাম মাত্র ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অনেক চাষিরা গত বছরের লবণ মজুদ রয়েছে। দাম কমে যাওয়ায় অনেকে লবণ বিক্রি করছেনা।
উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে লবণের দাম। লবণের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসায় মহেশখালী উপকূলের হাজার হাজার লবণ চাষির ঘরে রীতিমত আহাজারি শুরু হয়েছে। একর প্রতি চলতি মৌসুমের জন্য ৪৫ হাজার টাকায় বর্গা জমি নিয়ে এবার সেই টাকাও তুলতে পারবে না- চাষিরা এমন আশঙ্কায় মাঠে নামতে হিমছিম খাচ্ছে।
মহেশখালী উপজেলার নলবিলা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হক চকরিয়া নিউজকে জানান, বিগত ৪০ বছর ধরে তিনি লবণ চাষের সাথে জড়িত। লবণের দাম নানা থাকায় তিনি মাঠে নামতে হিমছিম খাচ্ছে।
তিনি জানান, ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানায় তিনি প্রতিমাসে লবণ সরবরাহ করতেন। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী তিনি লবণ জোগান দিতেন। গত ৩/৪ বছর ধরে ওই সব কারখানার মালিক তার কাছ থেকে লবণ কিনছেন না। কারণ তারা আমদানিকারকদের কাছ থেকেই লবণ কিনছেন।
বাংলাদেশ লবণ চাষি বাঁচাও পরিষদের আহ্বায়ক সাজেদুল করিম চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমি আমার পারিবারিক জমিতে লবণ উৎপাদন করে আসছি বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু এবার লবণের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলেও মজুরের দামসহ অন্যান্য কোনো কিছুরই দাম কমেনি। লবণের মূল্যে বৃদ্ধির জন্য মানববন্ধনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন দিয়েছেন বলেও জানান।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান চকরিয়া নিউজকে জানান, লবণ আমদানি বন্ধে সরকার বদ্ধপরিকর।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নিকট লিখেছে বিসিক। চাষিদের প্রণোদনা ও উৎসাহ যোগাতে ব্যাপক সভা করা হয়েছে। চাষিদের প্রতি একরে ৫০ হাজার টাকা করে ‘লবণ ঋণ’ দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। শীগগির কার্যক্রম শুরু হবে।
ডিজিএম জানান, চাষযোগ্য লবণজমির পরিমাণ ৫৭ হাজার ৭২২ একর। চাষির সংখ্যা ২৮ হাজার ৭৯১ জন। তবে, অভিযোগ হলো- ঢাকা কেন্দ্রিক আমদানিকারক সিন্ডিকেটের সাথে গোপন আঁতাত রয়েছে কিছু ভুঁইফোঁড় লবণমিল মালিকের। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা, যারা অপ্রয়োজন সত্ত্বেও লবণ আমদানির পক্ষে ভূমিকা রাখে। অসাধু ব্যবসায়ীরা ‘শিল্প লবণ’-এর আড়ালে দেদারছে সোডিয়াম সালফেট মিশ্রিত লবণ এনে ‘ভোজ্য’ হিসেবে বাজারজাত করে। তাদের কারণেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য পায় না চাষিরা।
পাঠকের মতামত: