সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার ১৩ মার্চ :::
কক্সবাজার শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে হবে গ্রামটি। বেড়িবাঁধের সাথেই লাগোয়া। পাশেই কক্সবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহী নদী বাকঁখালী। রাখাইন সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকা মগপাড়া। সেখানেই গ্রামটির শুরু। বিশাল এক বেড়িবাঁধ। তার পাড়ে সারিবদ্ধভাবে শুকানো হচ্ছে হ্নাপ্পি নামক এক ধরণের মাছ। মনে হয় মাছের রাজ্যে আছি। কিন্তু যাওয়ার পরে ধারনা বদলায়। সম্প্রতি সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের রাখাইন পলীতে গিয়ে কথা হয় তাদের সাথে। ছোট ছোট ঘরগৃহস্থলির ঘেরাটোপে কোনমতে টিকে আছেন রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন।
তবে এখন তাদের জীবনে বড়ই দুর্দিন। অনেকেই টিকতে না পেরে ছেড়েছেন পৈতৃকপেশা। জন্মভিটা ছেড়ে অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন অন্য জায়গায়। কারণ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার যোগসাজশে মিথ্যা দলিলের মাধ্যমে জায়াগা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি হরণ করা হচ্ছে রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহি জীবন জীবিকাও। যদিও সেখানে আজও কিছু পরিবার কোনোভাবে টিকে আছে।
গত ১০ মার্চ সকালে গ্রামটিতে গিয়ে কথা হয় স্থানীয রাখাইনদের সাথে। চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের রাখাইন পাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন ৬০টি পরিবারের প্রায় ১৫০০ মানুষ। আগে প্রায় শতাধিক পরিবার বাস করতেন। অনেকেই চলে গেছেন। নারী-পুরুষের মিলিত শ্রমে গড়া এই পেশাকে গ্রামটির অনেক পরিবারকে অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মাঝেও স্বচ্ছলতা না এলেও তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। আর তাদের আয়ের একমাত্র উৎস হ্নাপ্পি। স্থানীয় ভাষায় যা নাপ্পি নামে পরিচিত। সাগর থেকে ছোট ছোট চিংড়ি মাছ এনে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয় নাপ্পি ।
পরবর্তীতে যা পার্বত্য জেলা বান্দরবান,খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এই হ্নাপ্পি বিক্রির উপরই নির্ভর করে চলে তাদের সংসার। কিন্তু সেই রাখাইনদের জীবিকার প্রধান স্থান বেড়িবাঁধটি দিন দিন চলে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের দখলে। বাঁধ সংলগ্ন জায়গায় দখলরা নির্মাণ করছেন অবৈধ দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের বাধা ও কোন কাজে আসেনি। উল্টো বাধা উপেক্ষা করে নির্মাণ করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয় হ্নাপ্পি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা লামু রাখাইন বলেন, আগে প্রায় ৬ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই বাঁধেই হ্নাপ্পি মাছ শুকাতো রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদারদের লোলুপ দৃস্টি পড়ায় তা ২ থেকে ৩ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে তাদের পেশা বদলানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা।
সদর চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মংওয়েন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের সাগর সংলগ্ন ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া, মগপাড়া, জালিয়াপাড়া, মাঝরপাড়া,মধ্যমপাড়ায় হ্নাপ্পি মাছ শুকানো রাখাইন সম্প্রদায়ের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের কারণে এভাবে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যেতে থাকলে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবে না।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সাবিকুর রহমান চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের খতিয়ানভূক্ত ১০০৩ দাগের বেড়িবাঁধের জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা অপসারণে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান।
পাঠকের মতামত: