নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়ার উপকুলীয় ৫টি ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে প্রবাহমান ২০০ একর বিশিষ্ট প্রায় ছয় মাইলের ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহালটি অন্তত ১০ বছর আগ পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এই জলমহালের মিঠা পানি ব্যবহার করে কক্সবাজারের চকরিয়ার উপকূলীয় পাঁচটি ইউনিয়নের হাজারো কৃষক তাদের জমিতে রকমারি ফসল ফলাতেন।
জলমহালটি ব্যবহার করছিলেন ১০টি গ্রামের লাখো মানুষ। এখান থেকে প্রতিদিন দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন শত শত জেলে পরিবার। পরে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা থেকে এই জলমহালটি কয়েকজনকে নির্দিষ্ট মেয়াদে লিজ দেওয়া হয়। এরপর সাধারণ মানুষ ওখানে প্রবেশ করতে পারেনি। জীবিকা হারিয়েছে শত শত জেলে পরিবার।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ তিন বছরের জন্য ২৭ লাখ টাকা রাজস্বে লিজ দেয়া হয়েছে। লিজের শর্ত ছিল এখানে লবণাক্ত পানি ঢোকানো যাবে না। কিন্তু সমুদ্র উপকূলের জলকপাট খুলে দিয়ে লবণ পানি ঢোকানো হয়। উদ্দেশ্য, লবণ পানির মৎস্য চাষ করে অধিক উপার্জন করা। এখন জলমহালের পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। লবণাক্ততার কারণে বিবর্ণ হয়ে গেছে জলমহালের কচুরিপানা।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, শর্ত ভঙ্গকারী লিজ গ্রহীতারা প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি হওয়ায় এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
এখন মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের হাজারো কৃষকের মাথায় হাত। বর্তমানে মিঠা পানির অভাবে চলতি শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ছয় হাজার একর জমিতে ইরি-বোরো চাষের আওতায় ধান, সবজিসহ রকমারি ফসলের আবাদ করতে পারছেন না তারা। অথচ এসব ইউনিয়ন হচ্ছে খাদ্য উৎপাদনের অন্যতম ভাণ্ডার।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র এবং স্থানীয় কৃষকেরা জানান, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগে লিজপ্রাপ্তরা জেলা প্রশাসনের শর্ত ভঙ্গ করে জলমহালে লবণ পানি ঢোকায়।
জানা গেছে, পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের উত্তরাংশ ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণাংশ হয়ে প্রায় ২০০ একর বিশিষ্ট ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহালটির অবস্থান। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ মাইল। কয়েকশ বছর ধরে পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, বিএমচর ও পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের প্রায় ছয় হাজার একর জমিতে জলমহালের পানি দিয়ে স্থানীয় কৃষকেরা শুষ্ক মৌসুমে ইরি-বোরোসহ রবিশস্যের চাষাবাদ করে আসছিলেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, এতদিন এই ধরনের অভিযোগ কেউ করেনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ চকরিয়া নিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে লিজ দেওয়া হয়েছে মিঠা পানির মৎস্য চাষের জন্য। যারা লিজের শর্ত ভঙ্গ করে জলমহালে লবণ পানি ঢুকিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক এবং সর্বসাধারণের স্বার্থে বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত: