নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়া :চকরিয়া উপজেলা বরইতলি ইউনিয়নের সোনাইছড়ি ছড়া খালের উপর নির্মিত দুটি স্লুইসগেট অকেজো হয়ে পড়ে আছে । বিকল্প স্হানে মাটির বাঁধ নির্মাণে একটি মহল জটিলতা সৃষ্টির ফলে এলাকার কয়েক হাজার একর জমির বরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে । এতে এলাকার কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
গত শুক্রবার( ৬ ডিসেম্বর) সকালেরর সরেজমিনে পরিদর্শন কালে দেখা যায়, বরইতলী ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহীত‘সোনাইছড়ি’ ছড়াখালের বরইতলী অংশে প্রায় ২০ বছর পূর্বে নির্মিত দুটি স্লুইস গেট রয়েছে। এ সব স্লুইস গেটের মাধ্যমে শুস্ক মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা মিঠা পানি আটকিয়ে এলাকার কৃষকরা কয়েক হাজার একর জমিতে বোরোধান সহ বিভিন্ন রবি ফসলের চাষ করে আসছিল দীর্ঘ সময় ধরে । বর্ষার মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানির তোড়ে ছাড়ার গতি পরিবর্তন হয়ে পড়ায় এ স্লুইস গেট দুটি অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে।
এলাকার কৃষকরা জানান, এ স্লুইস গেট দুটি দীর্ঘ সময় ধরে অঁকেজো হয়ে পড়ার এ সুযোগে ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় স্লুইস গেট অংশে মাটির বাঁধ নির্মাণ করে এলেকার কৃষকদেরকে আর্থিকভাবে শোষণ করে আসছিল বিগত স্বৈরাচারী সরকারের রাজনৈতিক দলের একটি চক্র । তবে দেশে পট-পরিবর্তনের পরেও এ ছড়া খালের উপর মাটির বাঁধ নির্মাণ করে সেচ খরচ বা খাজনা আদায়ের নামে অনৈতিক সুবিধা নিতে মরিয়া হয়ে উঠছ দলীয় প্রভাবশালী একটি চক্র। তারা এ মাটির বাঁধ নির্মাণে জটিলতা সৃষ্টি করে আসছে বলে স্হানীয় কৃষকদের অভিযোগে জানা যায় ।
এলাকার কৃষকরা জানান, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নিজেদের অর্থায়নে এ অস্থায়ী মাটির বাঁধ নির্মাণ করে প্রায় ৫ শত একর জমির চাষাবাদ নিশ্চিত করতে চায় । এতে করে কৃষকদের অনেক আর্থিক সাশ্রয় হবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী একটি চক্র পূর্বের ন্যায় কৃষকদেরকে জিম্মি করে অতিরিক্ত খরচ আদায়ের জন্য কৃষকদেরকে বাদ দিয়ে দলীয় লোকজন এ বাঁধ নির্মাণে উঠেপড়ে লেগেছে। তাছাড়া এ চক্রটি দ্বিতীয় স্লুইস গেট পয়েন্টে মাটির বাঁধ নির্মাণের জন্য তোড়জোড় চালাচ্ছেন। এজন্য ছড়াটির উভয় তীরে লাল পতাকা উঁচিয়ে রেখেছেন। যাতে ইচ্ছেমতো কৃষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারেন।
এ ব্যাপারে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান জানান, বিগত সরকারের সময়ে রাজনৈতিক দলের প্রভাব কাঠিয়ে একটি চক্র নিজেদের ইচ্ছেমতো সোনাইছড়ি খালে মাটির বাঁধ দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে হয়রানি করা হতো। দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন হলেও আগেকার মতোই আরেকটি চক্র সেখানে বাঁধ নির্মাণ করে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অপচেষ্টা শুরু করেছেন। তিনি আরও বলেন, এলাকার প্রকৃত প্রান্তিক কৃষক, জমির মালিক ও সচেতন লোকজনের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। যে কমিটি কৃষক-শ্রমিকদের সমন্বয়ে এ মাটির বাঁধ নির্মাণ করবে। যাতে মিঠা পানির সেচ সুবিধার নামে কৃষকের কাছ থেকে মনগড়া টাকা আদায় করতে নাপারে। এ
দিকে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বাঁধ নির্মাণের অনুমতি চেয়ে ইতিমধ্যে আবেদন করা হয়েছে বলে গঠিত কমিটির সভাপতি ও জমির মালিক আবদুল লতিফ এবং সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সালাহউদ্দিন আহমদ জানান। তারা আরও বলেন, ‘একইভাবে আরেকটি প্রভাবশালী চক্র অতীতের মতোই কৃষকদের শোষণ করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন। তাই এলাকার সকল কৃষক ও জমির মালিক মিলে উক্ত বাঁধ নির্মাণ করে মিঠা পানির সেচ সমস্যা দূর করতে সক্ষম হবে । তাই উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ প্রান্তিক কৃষকদের কথা বিবেচনায় নেবেন বলে তারা মনে করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, প্রান্তিক কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সরজমিন গিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান ।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘বরইতলী ইউনিয়নের সোনাইছড়ি খালের অঁকেজো স্লুইস গেট সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী মাটির বাঁধ দেওয়া নিয়ে করা আবেদনটি কৃষি কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে, এর মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্হা নয়া হব বলে তিনি জানান।
পাঠকের মতামত: