ঢাকা,শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

জীবিকা নিয়ে আতঙ্কে শতাধিক মৎস্যজীবি পরিবার

চকরিয়ায় সরকারি উন্মুক্ত জলমহালে দাপুটে চক্রের থাবা, মাছ আহরণ বন্ধ

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নে এবার সরকারি উন্মুক্ত একটি জলমহালে থাবা দিয়েছেন স্থানীয় দাপুটে চক্র। স্থানীয় লোকজনের দাবি, গত ১৬ বছর আগে উপজেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে স্থানীয় মৎস্যজীবি সমিতির শতাধিক সদস্য সারাবছর ওই জলমহাল থেকে মাছ আহরণ পুর্বক পরিবার সদস্যদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
কিন্তু সম্প্রতি সময়ে স্থানীয় মৃত আবদুল খালেক এর ছেলে আক্কাস ও রফিক নামের দুইজনের নেতৃত্বে ১২/১৩ জনের একটি দাপুটে চক্র হঠাৎ করে জলমহালের মাঝখানে জাল বসিয়ে দিয়ে জেলে পরিবারের লোকজনকে মাছ আহরণে বাঁধা দিচ্ছেন। এই অবস্থার কারণে জীবিকার পথ বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে স্থানীয় মৎস্যজীবি লোকজনের।

এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবিদের পক্ষে কাকারা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বারআউলিয়া নগর এলাকার আবদুর রশিদ এর ছেলে মোহাম্মদ ইউনুস বাদি হয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

পরে লিখিত অভিযোগটি তদন্তের জন্য চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন ইউএনও। এরই প্রেক্ষিতে দুইদিন আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা। ওইসময় অবৈধভাবে সরকারি উন্মুক্ত জলমহালের মাঝখানে বসানো জাল তুলে নিয়ে যেতে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে জড়িতদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন মৎস্য কর্মকর্তা ফারহান তানজিম।

স্থানীয় সাকের মোহাম্মদচর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সদস্যরা জানান, আমাদের আবেদনের আলোকে ২০০৭ সালের ৩১ অক্টোবর তৎকালীন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.শাহ আলম তাঁর দাপ্তরিক আদেশে কাকারা ইউনিয়নের কাকারা মৌজার কাটাখালী- বড়জোর-নইল্যা ছড়া-পিয়ারীছড়া নামক ১নং খাসখতিয়ানের সরকারি উম্মুক্ত জলমহাল থেকে মাছ আহরণে অনুমতি দেন।
সেই থেকে স্থানীয় শতাধিক মৎস্যজীবি লোকজন সারাবছর ধরে ওই জলমহাল থেকে মাছ আহরণ করে পরিবার সদস্যদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, এতদিন তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবে জলমহালের সুফল পেয়ে আসলেও অতিসম্প্রতি কাকারা ইউনিয়নের বাসিন্দা আক্কাস ও রফিক নামের দুই বিএনপি নেতার নেতৃত্বে একটি চক্র সিন্ডিকেট করে জলমহালের মাঝখানে জাল বসিয়ে মাছ আহরণে বাঁধা দিচ্ছেন।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, সরকারি জলমহালে থাবা দিয়েছেন, জড়িত বেশিরভাগই এলাকায় সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। এ কারণে তাদেরকে বাঁধা দিতে যেমন সাহস পাচ্ছে না হতদরিদ্র মৎস্যজীবিরা। এমনকি দাপুটে চক্রের নানাবিধ ভয়ভীতি ও হুমকির মুখে জলমহালে নামতে পারছেনা তাঁরা।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি জেলে সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা ও কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি আশরাফ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সরকার জাল যার, জলা তার নীতি ঘোষণা করলেও বাস্তবে দেখছি সবজায়গায় হচ্ছে তাঁর উল্টো। এখন প্রকৃত মৎস্যজীবিরা সবস্থানে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
তিনি বলেন, কাকারা ইউনিয়নে সরকারি উন্মুক্ত জলমহালটি চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে এতদিন হতদরিদ্র মৎস্যজীবিরা মাছ আহরণ করে আসলেও এখন সেখানে দখলবাজ সবল মৎস্যজীবিরা হানা দিয়েছে। আমরা হতদরিদ্র মৎস্যজীবি মানুষের জীবন জীবিকার পথ সচল রাখতে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

পাঠকের মতামত: