এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :::
চকরিয়ায় টানা অবিরাম বর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমেছে পাহাড়ি ঢল। সোমবার বিকাল তিনটার দিকে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা ২৬ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ অবস্থার কারনে উপজেলা ও পৌরসভার বেশির ভাগ নীচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে পানিতে। এতে করে উপজেলার শতাধিক গ্রামের অন্তত লক্ষাধিক জনসাধারণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বড় ধরণের বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আজিমুল হক আজিম জানিয়েছেন, টানা ভারী বর্ষণের কারনে গতকাল সকালে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। পানির প্রবল ¯্রােতে তাঁর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। গতকাল দুপুর নাগাদ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চারভাগের তিনভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়ে স্থানীয় লোকজন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত ওসমান জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণের কারনে নদীতে ঢলের পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তাঁর ইউনিয়নে নদীর তীরবর্তী বেশির ভাগ এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে রাতের মধ্যে বড় ধরণের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢল নামার কারনে পৌরসভার একাধিক স্থানে বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। গতকাল দুপুর থেকে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত ২০ হাজার জনসাধারণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণের ফলে তাঁর ইউনিয়নের বেশিরভাগ নীচু এলাকা হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে উপজেলার চিংড়িজোনের হাজার হাজার মৎস্য প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে ঘের মালিক ও চাষীদের হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলার উপকুলীয় বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল বশর ও কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার জানিয়েছেন, মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢল নামার পর গতকাল দুপুর থেকে বিভিন্ন শাখাখাল ও স্লইচ গিয়ে দিয়ে তাদের ইউনিয়নে লোকালয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি। ইউনিয়নের অধিকাংশ নীচু এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। উপকুলের বিস্তর্ৃীণ মৎস্য প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদীতে ঢলের পানি গতি বাড়বে। এ অবস্থায় উপকুলের একাধিক বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ার পাশাপাশি মৎস্য প্রকল্প সমুহ পানিতে ভেসে যেতে পারে।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে তাঁর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, পহরচাঁদা অংশে বেড়িবাঁেধর ক্ষতিগ্রস্থ অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে ঢলের পানি। গতকাল দুপুর থেকে ইউনিয়নের বেশির ভাগ নীচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান গতকাল রাতে মুঠোফোনে বলেন, ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি প্রবাহ বেড়েছে চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে। গতকাল সোমবার বিকাল তিনটা নাগাদ নদীর পানি বিপদসীমা ২৬ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিনি বলেন, নদীতে ঢলের পানি নামলেও এখনো পর্যন্ত চকরিয়া উপজেলার কোন জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
পাঠকের মতামত: