মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া :: যৌতুকের টাকা প্রদানে অপারগতায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে তালাকনামা পাঠালেন স্বামী। স্ত্রীর সম্মানহানি করতে ফেসবুকে চালাচ্ছে অপপ্রচার। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ডুমখালী গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের ছেলে ইয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্ত্রী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল কক্সবাজারে মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে শেষের দিকে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ডুমখালী গ্রামের রফিকুল ইসলামের পুত্র ইয়ারুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয় খুটাখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেধা কচ্ছপিয়া এলাকার আমির হোছনের কন্যার সাথে। বিয়ের পর ছেলে পক্ষের ধার্য্যকৃত যৌতুকের ছয় লাখ টাকার জন্য বিরোধ সৃষ্টি হয়।
ঘটনারদিন ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখে স্ত্রীকে অমানুষিক মারধর করে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে স্ত্রীকে বাপের বাড়ি খুটাখালীতে পাঠিয়ে। অপরদিকে দাবীকৃত ছয় লক্ষ টাকা যৌতুক না দেওয়া পর্যন্ত স্বামী ইয়ারুল ও তার পরিবারের লোকজন স্ত্রীকে আনতে না যাওয়ার মনস্থির করে।
শেষমেশ কন্যা পক্ষ যৌতুকের টাকা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করলে চরিত্রহীনতার কারণ দেখিয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারী তারিখে খুটাখালী ও ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান বরাবরে একটি তালাকনামা প্রেরণ করে।
অভিযোগে জানা যায়, তালাক দেওয়ার কারণ হিসেবে স্ত্রীর ভগ্নিপতির সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকার কাহিনী তৈরি করে স্বামী ইয়ারুল ইসলাম। ওই ভগ্নিপতির নাম মোঃ রহিম উদ্দিন। সে ডুলাহাজারা উলুবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা হাজী আবদুল হকের পুত্র। তালাকনামা পাঠানোর অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে শুরু করে দেয় অপপ্রচার।
এনিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) স্বামী ইয়ারুল ইসলাম মালুমঘাট বার্তা নামের একটি ফেসবুক পেইজে নিজ স্ত্রী ও ভগ্নিপতি আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে পরকীয়া প্রেম সংক্রান্ত একটি কুরুচিপূর্ণ পোস্ট প্রকাশ করেন। যেটি ছিল তাদের স্বজন ও এলাকাবাসীর কাছে অত্যন্ত সম্মান হানিকর।
এ বিষয়ে স্ত্রীর ভগ্নিপতি আবদুর রহিম জানান, শালিকার সাথে তার কোনপ্রকার অবৈধ সম্পর্ক আগে ছিল না এবং এখনো নাই। এরকম কেউ সত্যতা প্রমাণ পেলে তিনি সকল প্রকার আইনী শাস্তি মাথা পেতে নিবেন। এ বিরোধের কারণ ছিল বিয়ের আগে ডিগ্রি পড়ুয়া শালিকাকে গার্মেন্টস শ্রমিকের সাথে বিয়ে দিতে নারাজ ছিল আবদুর রহিম। তাই সুযোগ বুঝে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে। এনিয়ে ইয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানহানি ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান আবদুর রহিম।
অপরদিকে তালাকনামা পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে স্বামী ইয়ারুল ইসলাম জানান, ভগ্নিপতির সাথে তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক ছিল। কোনপ্রকার প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছবি, ফোনালাপ ও ভিডিওচিত্র তার কাছে নেই। তবে স্ত্রীর আচার-আচরণ ও মানুষের কাছ থেকে শুনা কথায় সন্দেহ হওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এনিয়ে ফেসবুকে প্রচারণা ও যৌতুকের টাকার দাবীতে স্ত্রীকে মারধর সংক্রান্ত ঘাটনায় তার জড়িত থাকার বিষয় সত্য বলে দাবী করেন।
এ ব্যাপারে খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোঃ তারেকুল ইসলাম জানান, আমার ওয়ার্ডের আমির হোসেনের মেয়েকে মারধর করে শাশুড় বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে শুনেছি। মেয়ের স্বামী একটি তালাকনামা পরিষদে দিয়েছে। বিরোধের কারণ সম্পর্কে ছেলের পক্ষ থেকেও কেউ আমাকে জানায় নি। এ মেয়েটির বিরুদ্ধে আমার এলাকায় কোন অভিযোগ নেই। পরে স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালে একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানতে পারি।
পাঠকের মতামত: