ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় মেয়র পদ ফিরে পেতে মরিয়া আ’লীগ

14-300x150ছোটন কান্তি নাথ :
গতবারের চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে হারানো মেয়র পদটি ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামীলীগ। তাছাড়া দলীয় ব্যানার এবং নৌকা প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় তফসিল ঘোষণার অনেক আগে থেকেই মনোনয়ন পেতে আওয়ামীলীগের ডজন খানেক সম্ভাব্য প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন কেন্দ্রে। শেষপর্যন্ত দলের প্রধান শেখ হাসিনা উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ায় কাদা ছোড়াছুড়ি ও দলাদলি ভুলে এককাতারে সামিল হয়েছেন সিনিয়র নেতারাও। এতে তৃণমূলেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে সিনিয়র সব নেতাকে একমঞ্চে দেখে। মনোনয়ন পত্র জমাদানের পর থেকেই একযোগে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সিনিয়র সকল নেতাই। উদ্দেশ্য একটাই, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে যে কোন মূল্যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমে বিজয়ী করে আনা।
চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির বলেন, ‘গতবারের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর চকরিয়া পৌরসভা কার্যালয়টি বিএনপি অফিসে পরিণত করেছিল নুরুল ইসলাম হায়দার। সেখান থেকেই আন্দোলনের নামে নানা নাশকতামূলক কর্মকা- সংঘটিত করেছে দলটি। তাই পৌরসভা কার্যালয়টি রাহুমুক্ত করতে যুবলীগের নেতাকর্মী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এ এম আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন মিঠু ও পৌরসভা ছাত্রলীগের আহবায়ক আবু ইউছুপ জয় বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে মেয়র পদটি অবশ্যই আওয়ামীলীগের দখলে আনতে হবে। এজন্য দিন-রাত সমানে নির্বাচনী গণসংযোগে মাঠে রয়েছে ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী।’
চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু ও সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘পৌরসভা এলাকাটি বলতে গেলে আওয়ামীলীগের ঘাঁটি। তাছাড়া যে কোন আন্দোলন-সংগ্রামেও পৌরশহর চিরিঙ্গা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। কিন্তু গতবারের নির্বাচনে পৌরসভার ভোটাররা ভুল করে নুরুল ইসলাম হায়দারকে মেয়র নির্বাচিত করেছিল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায়। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি নিজের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিলেন, বিপরীতে পৌরবাসীর কথা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলেন। এখন আবার যখন নির্বাচন এসেছে তিনি ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। তাই একের পর এক নাটক রচনা করে আবারো ভোটারদের অনুকম্পা পাওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তিনি। তবে এবার সেই সুযোগ আর দেবেন না পৌরবাসী। তারা অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য।’
চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হওয়া বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের একটি ‘খোলা চিঠি’ এখন ভোটারদের কাছে বিলি করছে বিএনপি। এসব খোলা চিঠিতে আর কাজ হবে না, সালাহউদ্দিনের সেই সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে অনেক আগেই। আন্দোলনের নামে পেট্রলবোমা ছুঁড়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার ঘটনার হুকুমদাতাদের মধ্যে অগ্রভাগে ছিলেন এই সালাহউদ্দিন। এ কারণে পৌরসভার সচেতন মানুষ তাকে হাঁড়ে হাঁড়ে চিনেছে। এখন আর তার কথায় ভোটারদের মন গলবে না। সকল শ্রেণি-পেশার ভোটারেরা অপেক্ষায় আছেন নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকা-কে ত্বরাণ্বিত করতে।’
আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘গণসংযোগ করতে যেখানে গিয়েছি, সেখানে ভোটারদের মুখে কয়েকটি কথাই শুনেছি। তন্মধ্যে পাঁচটি বছর পৌরবাসী অপেক্ষায় ছিল শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করে তাদেরকে প্রতিবছর বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি থেকে মুক্তি দেবে। এলাকার উন্নয়ন করবেন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি, উপরন্তু করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে সুদে-আসলে আদায় করে নিয়েছেন। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে ভূয়া প্রকল্প বানিয়ে তছরুপ করেছেন কোটি কোটি টাকা। এই অবস্থায় ভোট যখন একেবারে সন্নিকটে চলে এসেছে তখনই বিএনপি প্রার্থী হায়দার নিজেদের লোক দিয়ে নাটক সাজিয়ে আহত হওয়ার ভান করে হাসপাতালে শুয়ে আছেন ভোটারদের দৃষ্টি কাড়তে। তবে হায়দার যতই নাটক নাটক খেলা উপহার দিক না কেন, পৌরবাসী ভোটের দিন তাকে লালকার্ড দেখিয়ে বিদায় জানাবে। পৌরসভার মানুষ বুঝে গেছে সরকার দলের প্রার্থীকে ভোট দিলেই এলাকার উন্নয়ন হবে। আমারও প্রথম কাজ হবে নির্বাচিত হওয়ার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌরশহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণে হাত দেওয়া।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম  বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীকে জিতিয়ে আনা আমার এখন প্রধান চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত অবদি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের চিত্র তুলে ধরছি। ভোটারেরাও আমাকে কাছে পেয়ে আশ্বাস দিচ্ছেন এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে মেয়র পদে বসাবেন। আমার মতো একইভাবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিমসহ দলের সর্বস্তরের সিনিয়র ও জুনিয়র নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীর বিজয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।’
জাফর আলম আরো বলেন, ‘কুখ্যাত রাজাকার পুত্র হায়দার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচটি বছর কেটেছে আগুন সন্ত্রাসে নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে। এই সময় তিনি বান্দরবানের পাহাড়ে আত্মগোপনেও ছিলেন গ্রেপ্তারের ভয়ে। নির্বাচন যখন আবার ঘনিয়ে এসেছে তখন তো ভোটারদের কাছে যাওয়ার সেই সাহস নেই, তাই দলীয় কর্মীদের দিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করে ভোটারদের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা একেবারে বৃথা যাবে হায়দারের। ঠিকই ভোটাররা ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে জয়ী করবে উন্নয়নের স্বার্থে।

পাঠকের মতামত: