ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ভাসমান অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার

চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে ফেলে দিয়ে পানিতে চুবিয়ে শ্বাসরোধ করে সাবেক সেনা সদস্যকে হত্যা

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা ব্রীজের নিচে পানিতে ভাসমান অবস্থায় মহসিন ভুট্টো (৫০) নামের অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া পৌরশহরের জমজম হাসপাতালের নিকটস্থ মাতামুহুরী ব্রীজের উত্তর পাশে নদী থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহায়তায় মরদেহটি উদ্ধার করেন চকরিয়া থানা পুলিশ।
স্থানীয় লোকজন ধারণা করছেন, সংঘবদ্ধ দুবৃর্ত্তরা তাকে নদীতে ফেলে দিয়ে পানিতে চুবিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।

গতকাল সকালে নদী থেকে মরদেহ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে নিহতের চাচাতো ভাই চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী ও চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

নিহত মহসিন ভুট্টো চকরিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা সওদাগর পাড়া এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে। তিনি সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ছিলেন। কয়েক বছর আগে চাকরি থেকে অবসর নেন।

চকরিয়া থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, গতকাল বুধবার সকাল আনুমানিক আটটার দিকে পথচারী লোকজন মাতামুহুরী ব্রীজ সংলগ্ন উত্তর পাশে পানিতে ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে খবর দেয়। এই খববের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে চকরিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহায়তায় নদী থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেন। পরে ঘটনাস্থলে মরদেহের প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন পুলিশ।

পরিবারের দাবী, মহসিন ভুট্টোকে পিঠিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। বাম হাতের বাহু ভেঙ্গে গেছে। নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। পিঠে ও হাতে দুটি আঘাত রয়েছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ঘটনার সাথে জড়িত খুনিদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।

মহসিন ভুট্টোর মা খদিজা বেগম বলেন, তার ছেলে মহসিন ভুট্টো মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকাও নিয়েছেন। এরপর থেকে তার সাথে যোগাযোগ করেনি। তার ছেলেকে হত্যা করেছে বলে দাবী করেন তিনি।
ভুট্টোর ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, তার ভাই ভুট্টো শান্ত স্বভাবের ছিলো। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়ার পর বাড়িতে থাকতেন। মাতামুহুরী ব্রিজের নিচে কিছু জমি রয়েছে পরিবারের। দীর্ঘদিন ধরে ওইজমি নিয়ে বিরোধ ছিলো। মাঝে মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার কথা বলতেন তার ভাই ভুট্টো। মূলত তারাই ভুট্টোকে মেরে নদীতে ফেলে দিয়েছে। আমি এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করছি।
মহসিন ভুট্টোর চাচাতো ভাই চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী জানান, তার ভাই ভুট্টো সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ২০১১ সালের দিকে অবসরে আসেন। এরপর থেকে বাড়িতে থাকতেন। পরিবারিক জায়গা জমি দেখাশোনা করতেন তিনি। মাতামুহুরী ব্রিজের দক্ষিণ পাশে তাদের কিছু জমি রয়েছে। ওই জমির উপর মাতামুহুরী বিজ্রের নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্টা ইয়ার্ডকে ভাড়া দিয়েছেন। কিন্তু তাদের জায়গার উপর ওই প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালালেও কোন ভাড়া দিতো না। স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা নিজের জায়গা দাবী করে ভাড়ার টাকা নিয়ে নিতো। ওই জমি নিয়ে ভুট্টোকে একটি মহল প্রায় সময় হুমকি ধমকি দিতেন বলে জানান তিনি।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করা হয়। মহসিন ভূট্টো অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ছিলেন। তার বাম হাতের বাহু ভেঙ্গে গেছে। তার পিঠে ও হাতে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে লাশের ধরণ দেখে মনে হচ্ছে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ।

পাঠকের মতামত: