ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় বসতভিটার বিরোধে দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, নারীসহ আহত ২৪

মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া :: চকরিয়ায় বসতভিটের জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কলেজছাত্রী, বয়োবৃদ্ধ, নারীপুরুষ সহ অন্তত ২৪ জন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদেরকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তৎমধ্যে গুরুতর ৭ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) ও জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। খবর পেয়ে পুলিশ ও স্থানীয় চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) সকাল ৮ টার দিকে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড উত্তর পাড়া এলাকায় এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল আমিন সংঘর্ষের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের উত্তর পাড়া এলাকার মৃত মাষ্টার তমিম গোলালের ছেলে মোক্তার আহমদের সাথে একই এলাকার মৃত রৌশন আলীর ছেলে মোস্তাক আহমদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জায়গার সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এনিয়ে উভয় পক্ষের স্থানীয়ভাবে কয়েকদফা সালিশ বৈঠকও বসে। এছাড়াও জায়গার বিরোধ নিয়ে দুপক্ষের লোকজন বিভিন্ন আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

বুধবার সকালের দিকে বিরোধীয় জায়গায় মোক্তার আহমদের ছেলে কুতুব উদ্দিন দোকান নির্মাণ করতে খুটি স্থাপন করলে প্রতিপক্ষ মোস্তাক আহমদের লোকজন বাধা দেয়। এতে দুপক্ষের মধ্যের তর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিতর্কের একপর্যায়ে কথা কাটাকাটি নিয়ে দুপক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় তৈরি ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ওই হামলায় উভয় পক্ষের নারী-পুরুষ সহ অন্তত ২৪ জন আহত হয়। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

বিরোধীয় সংঘর্ষে আহতরা হলেন, ডুলাহাজারা উত্তরপাড়া এলাকার মৃত রৌশন আলীর ছেলে মজিবুর রহমান (৫০), তার মা আনুয়ারা বেগম (৫০), তার ছেলে মোঃ রাকিব (১৬), মোঃ সাগর (১৮), তার জেঠা মোস্তাক আহমদ (৫৯), তার ছেলে মোঃ আরাফাত (২০), মৃত করম আলীর স্ত্রী জুবাইদা খাতুন (৪৮) ও মোহাম্মদ কালুর স্ত্রী মমতাজ বেগম (৪৫)। আরো আহত হয়েছেন মৃত মাষ্টার তমিম গোলালের ছেলে বয়োবৃদ্ধ মোক্তার আহমদ (৭০), তার ছেলে কুতুব উদ্দিন (৪২), তার ভাই মোঃ বেলাল উদ্দিন (৩৫), গিয়াস উদ্দিন (৪৯), জসিম উদ্দিন (৫২), তার ছেলে বকতিয়ার উদ্দিন রিপন (২৮), তার চাচা নাছির উদ্দিন (৪৬), তার মেয়ে এইচএসসি পড়ুয়া ছাত্রী মেহেবুবা জন্নাত জেকী (১৯)। এছাড়াও ঘটনায় কমবেশি আরো ৮ জন আহত হয়। তৎমধ্যে গুরুতর ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাদেরকে কক্সবাজার জেলা সদর ও চমেক হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

আহত মোস্তাক আহমদ বলেন, বিরোধীয় জায়গায় আমার ক্রয়কৃত জায়গা রয়েছে। উক্ত জায়গায় আমি দীর্ঘ সময় ধরে ভোগদখলে আছি। প্রতিপক্ষের লোকজন সকালে আমাদের অজান্তে ওই জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ করতে গেলে আমরা বাধা দিই। এসময় তারা আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে সংঘবদ্ধ লোকজন দেশীয় তৈরি সশস্ত্রে হামলা চালায়। হামলায় আমার স্ত্রী সন্তান বড়ভাই নিকটাত্মীয় সহ অন্তত বার জনকে কুপিয়ে জখম করে। আহতদের গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এনিয়ে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে আহত কুতুব উদ্দিন বলেন, বিরোধীয় জায়গাটি দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পূর্ব থেকে ভোগদখল করে আসছি। আমার দখলীয় জায়গায় দোকান নির্মাণ করতে খুটি স্থাপন করলে প্রতিপক্ষ মোস্তাক আহমদ ও তার ছেলেরা বাধা প্রদান করে। এসময় তারা দেশীয় তৈরি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে বয়োবৃদ্ধ বাবা, চার ভাই, ভাইয়ের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ও ভাতিজাসহ আমাকে কুপিয়ে জখম করেছে। ঘটনার পরে আমার বসত বাড়িতে ফের দ্বিতীয় দফা হামলা চালায়। এনিয়ে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, বিরোধীয় এ জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এনিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করা হয়। কিন্তু কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না হওয়ায় অমীমাংসা অবস্থায় থেকে যায়। ঘটনারদিন সকালে দুপক্ষের লোকজন বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ২০-২৫ লোক গুরুতর আহত হয়েছে। খবর পেয়ে আমি আহতদের দেখতে দ্রুত ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে ছুটে যাই।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, জায়গা-জমির বিরোধ নিয়ে ডুলাহাজারায় দুপক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। থানার উপপরিদর্শক প্রিয় লাল ঘোষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোন পক্ষের লোকজন অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: