এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
চকরিয়া উপজেলার বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনেবিশ সমিতির প্রকল্প ইজারাসহ প্রশাসনিক কার্যক্রমে দূর্নীতির মহোৎসব চলছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সমিতির কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বর্তমানে বিএনপির বিভিন্ন পদপদবীতে দায়িত্বে রয়েছেন। এ অবস্থার কারনে সমিতি লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে বিষয়টি নিয়ে সমিতির সভ্য ও পোষ্যদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
সমিতির সভ্য ও পোষ্যরা জানিয়েছেন, বদরখালী সমিতির প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিএনপির পদ-পদবীধারী সমিতির কয়েকজন কর্মকর্তা ও দুয়েকজন কর্মচারীর নিয়ন্ত্রনে বর্তমানে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সমিতির সাধারণ সভ্যরা। বিশেষ করে সমিতির মালিকানাধীন ১নং ব্লক লবণ মাঠ চিংড়ি প্রকল্পটি নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে চলছে অনিয়মের ষোলকলা। অভিযোগ উঠেছে, গতবারের কমিটির কিছু কুচক্রী মহলের ওই প্রকল্পের ফাঁতানো ইজারা কার্যক্রম ঠেকাতে গিয়ে সমিতির সভ্য স্থানীয় ইজ্জত আলীর ছেলে নুরুল হোছাইন ২০১৫-১৬ সালের জন্য পুর্বের নিলামের চারগুন বৃদ্দিতে প্রকল্পটি ইজারা গ্রহন করেন।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যার তান্ডবে প্রকল্পটি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ইজারাদার নুরুল হোছাইনের প্রতি সমিতির সংশ্লিষ্টরা অমানবিক আচরণ করেন। এরই প্রেক্ষিতে নুরুল হোছাইন সমবায় বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে গেলে পুর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিএনপি পন্থি কিছু লোককে ওই প্রকল্পটি অনৈতিক পন্থায় প্রকল্পটি পাইয়ে দেয়ার কুটকৌশলে মামলা জট লাগিয়ে দেয়ার পথও সুগম করে দেন সমিতির সুবিধাভোগী এসব কর্মকর্তারা।
অভিযোগ রয়েছে, ইজারাদার নুরুল হোছাইনকে ঠেকানোর জন্য প্রকল্পের পানি নিস্কাশনের স্লইটটি বুলডোজার দিয়ে বন্ধ করে প্রকল্পটিকে মৎস্য চাষের অযোগ্য করে রাখেন। এতে ২০১৭ সালে প্রকল্পটি চাষহীন অবস্থায় চলে যায়। এ অবস্থার কারনে সমিতি লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয় বলে অভিযোগ করেছেন সমিতির সাধারণ সভ্য ও পোষ্যরা। এসব ঘটনার নৈপথ্য রয়েছে সমিতির বিএনপি ঘরনার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পছন্দের লোককে প্রকল্পটি সুকৌশলে পাইয়ে দিতে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রকল্পটি ২০১৮-১৯ সালের জন্য ইজারা দেয়ার জন্য বর্তমান কমিটির সংশ্লিষ্টরা কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু অতি গোপনে তাঁরা প্যাকেজ ডিলের মাধ্যমে প্রকল্পটি নিজেদের লোককে পাইয়ে দিতে সব ধরণের অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে। তবে ওইসময় বিষয়টি জানাজানি হলে নিজেদের অপর্কম ঢাকতে সংশ্লিষ্টরা ফের ৩ জানুয়ারী প্রকল্পটি নিলামের উদ্যোগ নেন। ওইদিনের নিলামে তিনজন অংশগ্রহন করে নিলাম প্রদর্শিত হলে সর্বোচ্চ ডাককারী ৯লাখ টাকায় প্রকল্পটি দুইবছরের জন্য ইজারা নিতে প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু সেইদিন নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়। পরে ১০ জানুয়ারী পুনরায় প্রকল্পটি নিলামের জন্য আহবান করা হয়। এতে সমিতির কর্মকর্তাদের পক্ষের লোকজনের বাইরে স্থানীয় বাসিন্দা মৃত আবদুস ছাত্তারের ছেলে সমিতির সভ্য আকবর আহমদ ওইদিনের নিলামে অংশগ্রহন করেন।
অভিযোগ উঠেছে, আকবর আহমদ নামের ওইব্যক্তি নিলামে অংশ নেয়ায় সমিতির অভিযুক্ত কর্মকর্তারা তাদের গোপনীয় পরিকল্পিনা বাস্তবায়ন না হবে নিশ্চিত হয়ে ওইদিনও নিলাম কার্যক্রম কৌশলে স্থগিত করে দেন।
এদিকে বারবার নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করার ঘটনায় অংশ নেয়া ইজারাদার ও সমিতির সাধারণ সদস্যদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও উত্তেজনা দেখা দিলে বাধ্য হয়ে সমিতির এসব কর্মকর্তারা প্রকল্পটি নিলামের জন্য নতুন করে ১৮ জানুয়ারী দিন ধার্য্য করেন। ওই নিলামেও আকবর আহমদ অংশ নেন। সেইদিনও কৃত্রিম অজুহাত তৈরী করে সমিতির অভিযুক্ত কর্মকর্তারা নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। একই সাথে প্রকল্পটির নিলামের তারিখ নিয়ে পরবর্তী সময়ে সকলকে জানানো হবে বলে আশ^াস দেন।
সমিতির সভ্যরা অভিযোগ তুলেছেন, বারবার নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করার পরও সর্বশেষ সমিতির এক নম্বর ওয়ার্ডের পরিচালক আবদুল আজিজ ইতোমধ্যে সমিতির কতিপয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রকল্পটি পাইয়ে দেয়ার নামে স্থানীয় শফিউল আলম নামের একজনের কাছ থেকে ৫৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। বিনিময়ে তাকে প্রকল্পটি দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্ততিও নিয়েছেন।
এদিকে সমিতির কতিপয় কর্মকর্তাদের ফাতাঁনো অনৈতিক ইজারা কার্যক্রমকে বাস্তবায়ন ও বৈধতা দেয়ার জন্য ২৯ জানুয়ারী জেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে চুক্তি ভিত্তিক প্রকল্পটি ইজারা দেয়ার জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে সমিতির সভাপতি একটি আবেদন জমা দিয়েছেন। কিন্তু জেলা সমবায় কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা তাদের আবেদনটি নাকচ করে দিয়ে সমিতির বৃহত্তর স্বার্থে উপ-আইনের ৪১ ধারা মতে প্রকল্পটি প্রকাশ্যে ইজারা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। সমবায় কর্মকর্তাদের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ১২ ফেব্রুয়ারী প্রকল্পটি পুনরায় নিলামের আওতায় আনা হয়। এতে তিনজন ডাককারী থাকলেও একজনকে আইনের কলাকৌশল দেখিয়ে নিলাম কার্যক্রম থেকে বিরত রাখেন। অপর দুইজন থাকার পরও সমিতির অভিযুক্ত কর্মকর্তারা তাদের সাজানো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই আবারও নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। এ ঘটনার পর সমিতির সাধারণ সভ্য ও পোষ্যদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্ঠি হয়েছে।
বিক্ষুদ্ধ ইজারাদার প্রার্থী এবং সমিতির সভ্য ও পোষ্যরা অনিয়মের মাধ্যমে যাতে সমিতির অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তারা গোপনে এ প্রকল্পটি ইজারা দিতে না পারে সেইজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা সমবায় কর্মকর্তা, চকরিয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। #
পাঠকের মতামত: