নিজস্ব প্রতিবেদক ::
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মো. মনিরুজ্জামান ব্যবসায়িক কাজ সেরে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরের বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করছিলেন। সেই মুহূর্তে ১৯ বছরের এক যুবক নিজেকে আইনের লোক পরিচয়ে তার সঙ্গে যেতে বলেন মনিরুজ্জামানকে। কোথায় যেতে হবে জানতে চাওয়া মাত্রই আরো কয়েকজন সেখানে এসে দিগম্বর করে একটি নোয়া গাড়িতে তুলে ফেলেন তাকে। তারা সকলেই অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের সক্রিয় সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এ সময় চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হলে চারিদিক থেকে লোকজন জড়ো হয়। এমন সময় আইনের লোক পরিচয়ধারীরা জড়ো হওয়া লোকজনকে জানায় তাঁর (মনিরুজ্জামান) কাছ থেকে টাকা পাওনা আছেন। সেই টাকা উদ্ধারের জন্যই তাকে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে কেউ একজন এই ঘটনা পুলিশকে জানালে দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমারের নেতৃত্বে পুলিশদল। তখনই আইনের লোক পরিচয়ধারী একজনকে হাতেনাতে ধৃত করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তবে অন্য সহযোগীরা ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয়।
ততক্ষণে মনিরুজ্জামানের কাছে থাকা মোবাইল, নগদ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল ভর্তি কাঁধে ঝুলানো ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয় আইনের লোক পরিচয়ধারীরা। গত শুক্রবার রাতে চকরিয়া পৌরশহরের চিরিঙ্গা পুরাতন বাসস্টেশনের হানিফ কাউন্টারের সামনে সংঘটিত এই ঘটনার বর্ণনা থানার ওসিকে দিচ্ছিলেন ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামান।
তিনি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার তারাবুনিয়ার এক নম্বর গলির মৌবনের হাউজিং এলাকার মৃত আনিছুর রহমান বেপারীর পুত্র। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে গতকাল শনিবার চকরিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করেছেন। বিশেষ ক্ষমতা আইনে রুজুকৃত এই মামলার এজাহারে চারজনের নাম উল্লেখ এবং আরো অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনায় হাতেনাতে গ্রেপ্তারকৃত আইনের লোক পরিচয়ধারী ও অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের সদস্যের নাম নিশাতুল ইসলাম নিশাদ।
সে চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের দিগরপানখালী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। পরে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের নিশাতের দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে অন্য আসামিরা হলেন, একই গ্রামের শামসুর রহমানের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত রানা, ৪ নং ওয়ার্ডের উত্তর ঘুনিয়া গ্রামের আরাফাত ও ৫ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ ঘুনিয়ার মো. আইয়ুব।
ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী মনিরুজ্জামান জানান, তিনি ব্যবসায়িক কাজে বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের কুতুব উদ্দিন মেম্বারের কাছে এসেছিলেন। কাজ শেষে শুক্রবার রাতেই চকরিয়া পৌরশহরের পুরাতন বাস কাউন্টারে আসেন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে। এর পর এই ঘটনার মুখোমুখি হন তিনি। তিনি বলেন, যারা এই ঘটনা সংঘটিত করেছেন, তারা সংঘবদ্ধ।
মূলত মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যেই আমাকে জোরপূর্বক একটি নোয়া গাড়িতে তুলে অপহরণের চেষ্টা করছিলো। সাথে থাকা মোবাইল, নগদ টাকাসহ মালামাল কেড়ে নেয়। কিন্তু স্থানীয় জনতা এগিয়ে আসায় বড় ধরণের বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। পুলিশও তাৎক্ষণিক চলে আসায় প্রাণে বেঁচে যাই আমি।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, এই চক্রকে শনাক্তের চেষ্টায় ছিল পুলিশ। অবশেষে সেই চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এবার তাদের গডফাদার থেকে শুরু করে নিন্মস্তরের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এই ঘটনায় থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। হাতেনাতে গ্রেপ্তার নিশাতকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। চক্রটির ব্যাপারে আরো সবিস্তারে জানার জন্য আদালতে রিমাণ্ডের আবেদন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে।
পাঠকের মতামত: