এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: চকরিয়া পৌরসভার হালকাকারা মৌলভীরচর বিলের সবজি ক্ষেত দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে যে কারো। বিলজুড়ে গালিচা মেলেছে সবুজের সমারোহ। মাতামুহুরী নদীর একেবারে কিনারে নয়ন জুড়ানো এই বিল ঘিরে জড়িয়ে আছে কৃষকের স্বপ্ন। সারাবছর সবজি চাষ করে বাম্পার ফলনে এই জনপদের কৃষকরা ভালো লাভবান হচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেকে আর্থিকভাবেও হয়েছেন স্বাবলম্বি। তাদের একজন প্রান্তিক কৃষক বেলাল উদ্দিন। মৌলভীরচরে সবজি চাষ করছেন দুই যুগের বেশি সময় ধরে। প্রথমে অল্প জমিতে চাষ শুরু করলেও কৃষক বেলাল এখন বেশি পরিমাণ জমিতে করছেন রকমারি সবজি চাষ। তবে তিনি একা নন, তার মতো আরো কৃষক আছেন যারা সারাবছর এই বিলে সবজি চাষ করে নিজের পরিবারের স্বচ্ছলতা এনেছেন।
কৃষক বেলাল উদ্দিন জানালেন এবছর পরীক্ষামুলকভাবে শহীদ এগ্রো সীড ফার্মের নতুন হাইব্রিড জাতের টমেটো বিগ স্টোন চাষ করেছেন। মাত্র ২০ শতক জমিতে তিনি এ জাতের টমেটো চাষ করে ইতোমধ্যে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। জমির লাগিয়ত, বীজ কেনা, সার কীটনাশক প্রয়োগ ও শ্রমিক মুজুরিসহ মোট দশ হাজার টাকা খরচ পড়েছে তাঁর। ইতোমধ্যে তিনদফায় টমেটো বিক্রি করেছে। তিনমাসের সিজনে তিনি ২০ শতক জমি থেকে ৫০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি হবে এমন আশা দেখছেন।
কৃষক বেলাল উদ্দিনের মতে, নতুন জাতের বিগ স্টোন টমেটো বীজ অপেক্ষাকৃতভাবে অন্য বীজের তুলনায় উন্নতমানের। অন্য সবজির মতো বেশি পরিমাণ সার ও কীটনাশক দিতে লাগেনা। একটি গাছে কমপক্ষে ১০ কেজির বেশি টমেটো ফলন আসে। আর জমি থেকে ছেঁড়ার পরও টমেটো শুক্ত থাকে। তাতে একটু দেরীতে বাজারে নিলেও বিক্রি করতে বেগ পেতে হয়না।
শুক্রবার বিকালে মৌলভীরচর বিলে মের্সাস শহীদ এগ্রো সীডের আয়োজনে কৃষক মাঠ দিবস দেখতে এসেছেন চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের আদর্শ কৃষক শাহাব উদ্দিন। তিনি জানালেন, প্রায় ৩০বছর ধরে তিনি চাষাবাদে যুক্ত আছেন। আগে শহীদ এগ্রো সীডের অন্য জাতের টমেটো চাষ করলেও তিনি এবারই প্রথম নতুন জাতের বিগ স্টোন টমেটো চাষ করেছেন। তাঁর মতে, মৌলভীরচর বিলে কৃষক বেলাল উদ্দিনের তুলনায় তাঁর জমিতে সুপার বাম্পার ফলন হয়েছে বিগ স্টোন টমেটো। তিনি ইতোমধ্যে ৭০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। বাজারে এখনো টমেটোর ভালো দাম আছে জানিয়ে আদর্শ কৃষক শাহাব উদ্দিন বলেন, ভালো মানের বীজ রোপন করা গেলে অবশ্যই ফলনও ভালো হয়।
মাঠ দিবসে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফসয়াল মো.তৌহিদুল ইসলাম। তাঁর কর্মএলাকা পৌরসভার ১ ও ২নং ওয়ার্ড। তিনি জানালেন নতুন জাতের বিগ স্টোন টমেটো ক্ষেত পরিদর্শন করে দেখা গেছে, একটি গাছে কমপক্ষে ১০ কেজির বেশি ফলন আসে। একটি টমেটো ওজনে ১৮০ কিলো গ্রাম ওজন হয়। মাত্র ছয়টি টমেটো এক কেজি হয়ে যায়। তিনি বলেন, বিগ স্টোন টমেটো গাছ থেকে ছেঁড়ার পরও শক্ত থাকে। অন্য জাতের টমেটোর তুলনায় বিগ স্টোন জাতের টমেটো সহজে নরম হয়না। এই কারণে কৃষকরা এবছর নতুন জাতের এই টমেটো চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
নতুন জাতের বিগ স্টোন টমেটো বীজ বিক্রিতে এবছর ডিলারও দেখছেন চাঙ্গাভাব। সেইজন্য মাঠ দিবসে অনুভুতি জানাতে এসেছিলেন চকরিয়া বীজ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনামুল হক, কোষাধ্যক্ষ ওসমান গনি, চকরিয়া বীজঘর মালিক রফিকুল ইসলাম, নিউ সুপার সীড মালিক ফরিদুল ইসলাম, বেতুয়াবাজার আলতাফ সন্সের মালিক আলতাফ হোসেন, চকরিয়া কোয়ালিটি বীজ ভান্ডারের মালিক মাহবুবর রহমান। আর চকরিয়ার মৌলভীরচর বিলে কৃষক বেলাল উদ্দিনের নতুন জাতের বিগ স্টোন টমেটো ক্ষেত দেখতে এসেছিলেন দোহাজারী চাষী কল্যাণ বীজ ভান্ডারের মালিক আবদুল মালেক, বাঁশখালী মাইজভান্ডার বীজ বিতানের মালিক মো.ফোরকান, রাঙ্গামাটির বাঙ্গালখালীয়া এলাকার মায়ের দোয়া বীজ বিতানের মালিক আবু বক্কর (ছালেক)।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনপ্রিয় বীজ উৎপাদন ও বিপণন প্রতিষ্ঠান শহীদ এগ্রো সীড ফার্মের কর্ণধার মো.শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান শুরু থেকে সবসময় গুনগতমান সম্পন্ন ভালোমানের বীজ উৎপাদনপুর্বক বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করে আসছে। পাশাপাশি আমরা কৃষকের আর্থিক উন্নতিসাধনের বিষয়টি মাথায় রেখে বীজ বিপনণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করি। কারণ খারাপ বীজের কারণে কৃষক যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তেমনি ওইপ্রতিষ্ঠানের উপরও কৃষকের আস্থা উঠে যায়।
তিনি বলেন, গেলবছর নতুন জাতের বিগ স্টোন টমেটো আমরা পরীক্ষামুলক বাজারজাত করি। যাছাই-বাছাই করতে করতে পুরো একটিবছর সময় লেগেছে কৃষকদের কাছে নতুন জাতের এই বীজটি পৌঁছাতে। পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে এবছর কৃষকেরা বিগ স্টোন বীজ রোপন বাম্পার ফলন পেয়ে আশাতীত সাফল্য পেয়েছে। সতিই চকরিয়ার মৌলভীরচর বিলে বিগ স্টোন টমেটো ক্ষেত সরেজমিনে দেখে নিজেকে অনুপ্রাণিত করছি, একটু দেরীতে হলেও কৃষকদের মাঝে একটি ভালোমানের বীজ পৌঁছাতে পারলাম।
সবজি বীজ বিশেষজ্ঞ শহীদুল ইসলাম জানালেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানে টমেটো বীজ ছাড়াও বিগম্যান জাতের করলা, নবান্ন জাতের চিচিঙ্গা, ট্রিগার জাতের ঢেঁড়শ, মরিচ ১৭০৫, হিরো ১৭০১, গ্রীণমানি জাতের বেগুন, টমেটো ১০৮১ ও লাল বাদশা, সষা শাহেনশাহ, জীবন ও ময়নাগ্রীণ অনেক আগে থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এভাবে আগামীতেও কৃষকদের জন্য আরো ভালোমানের কিছু বীজ উপহার দিতে কাজ করছেন বলে জানান শহীদুল ইসলাম।
পাঠকের মতামত: