এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের থমতলা রাস্তা থেকে দিনমজুর মাহমুদুল হক (প্রকাশ এমপি) গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধারের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া কী কারণে এবং কীভাবে বা কতজন মিলে ওই দিনমজুরকে খুনের পর তার মৃতদেহের পাশে মোবাইল সেন্ডেল পেলে রাখা হয়েছে তাও জানা যায়নি। ফলে দিনমজুরের মৃতদেহ উদ্ধারের পর এখনও খোলেনি খুনের রহস্য জট।
গত ২২ মার্চ সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পাহাড়ি রাস্তা থেকে মাহমুদুল হক’র (৪৪) নামের ওই যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে চকরিয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই জিয়াবুল হক (৪২) বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩০/১১৫, তারিখ-২২/৩/২০২১ইং
নিহত দিনমজুরের স্বজনদের বরাত দিয়ে চকরিয়া থানা পুলিশ জানায়, ২২ মার্চ সকালে মোঃ তামজিদ নামের এক কিশোরের মারফত খবর পেয়ে মাহমুদুল হককে পরিবারের লোকজন খুঁজতে বের হয়। এরপর ওইদিন সকালে তাদের বাড়ির একটু দূরের পাহাড়ি রাস্তায় ওই দিনমজুরের মৃতদেহের গলাকাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখান থেকে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও একজোড়া পায়ের সেন্ডেল জব্দ করা হয়। ঘটনার পর থেকেই নানান তথ্য উঠে আসছে। তদন্তও চলছে। কিন্তু কোনোভাবেই মনে হচ্ছে না এটি কোনো স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সম্ভব। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে কোনো প্রফেশনাল কিলার এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
তবে যেভাবেই হোক না কেনো ঘটনার রহস্য খুব শিগগিরই উদঘাটন হবে। তবে এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আঃ সায়েমের দাবি, সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারছেন না তারা। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ মাঠে নেমে কাজ করছে। তবে এখনও রহস্য উদঘাটন হয়নি। আশা করছি খুব শিগগিরই খুনের রহস্যের জট খুলবে।
এলাকাবাসি ও প্রতিবেশি লোকজনের কাছ থেকে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার পর পরই যাদের সাথে মাহমুদুল হকের গাছ কাটা নিয়ে দ্বন্দ ছিল এসব সন্দেভাজন পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে। তবে তারা পলাতক থাকলেও তাদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর নয় বলে অভিযোগ নিহতের ভাই জিয়াবুলের।
জিয়াবুল বলেন, ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় আমার ভাই খুটাখালী বাজারে আমাকে চা নাস্তা খাওয়ান। এসময় টাকা ধার চাইলে ৫ হাজার টাকাও দেন। তবে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বাড়িতে গিয়ে বাথরুমে যাবার কথা বলে আর ঘরে ফিরেনি।
জিয়াবুল বলতে থাকেন, কিন্তু পরদিন সকালে ঐ এলাকার জনৈক আমার খালার মারফত খবর পাই বড় ভাইয়ের মৃতদেহ রাস্তায় পড়ে আছে। এটা শুনার পর আমি ঘর থেকে বেরিয়ে ভাইকে খোঁজার জন্য প্রথমে তার বাড়ি ফুলছড়িস্থ ৪ নং প্লটে যায়। পরে ঘটনাস্থলে গেলে ভাইয়ের গলাকাটা দেহ পড়ে থাকতে দেখি।
এটা দেখে স্থানীয় মেম্বার জসিমকে খবর দিলে উনি এসে পুলিশকে ফোন দেন। কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি আমার ভাইকে খুন করা হয়েছে। জিয়াবুল বলেন, পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাটায়। লাশ গাড়িতে তোলার পর কোনো রকমে নিজেকে সামলে লাশের সাথে গাড়িতে বসে পড়ি।
তিনি বলেন, এ ঘটনার পর আমার বারবার মনে হচ্ছে, ভাইকে যেখানে খুন করা হয়েছে। সেখানকার পাশের বাড়ির জনৈক নারীর কারনে মাহমুদুল হককে খুন করা হয়েছে এবং কথিত নারী একাজ করতে পারে। তাকেই আমার বেশি সন্দেহ হয়। কারণ এ ঘটনার পর থেকে সন্দেহভাজনরা পালিয়ে গেছে।
জানতে চাইলে মৃত মাহমুদুল হকের স্ত্রী সাজেদা বেগম বলেন, স্বামী তিন সন্তান নিয়ে দিনমজুরের কাজ করে দু’বেলা খেয়ে না খেয়ে থাকতেন। অভাবের সংসার হওয়ায় আমি আমার তিন সন্তান নিয়ে ঘরের পাশে একটি দোকান দিই। এখানে দোকান করে কোনো মতে সংসার চালিয়ে তিন ছেলেকে নিয়ে থাকি। তিনি খুন হওয়ার দিন রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ঘরে আসছিলেন। আবার বাথরুমে যাবে বলে বের হয়ে যায়।
প্রতিবেশীর সঙ্গে গাছ কাটার দ্বন্দের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত দুই মাস পুর্বে গাছ কাটা নিয়ে এলাকার প্রভাবশালীদের সাথে তার বিকবিতন্ডা হয়। হয়ত এর জের ধরে তাকে খুন করা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম উদ্দীন বলেন, মাহমুদুল হক বিগত ৬/৭ বছর আগে পৈত্রিক বাড়ি সদরের ইসলামপুর নতুন অফিস মাদরাসা পাড়া থেকে ফুলছড়ি পাহাড়ি গ্রাম ৪নং প্লটে বাড়ি করেছে। তারা আর্থিকভাবে তত সচ্ছল না। যাদের সাথে তার দ্বন্দ তাদেরকে সন্দেহ করতেই পারে। কিন্তু আমার কথা হলো, পুলিশ যেহেতু তদন্ত করছে, আশা করছি খুব শিগগিরই রহস্য বের হবে।
ঘটনার পর পরই খুনের রহস্যে উদঘাটনে পৃথকভাবে তদন্তে নামেন থানা পুলিশ।কিন্তু তদন্তের স্বার্থে ঘটনার ১৫ দিন পরও কোনো তথ্য দিতে রাজি নয় তারা। তাদের দাবি, তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। খুব শিগগিরই মূল রহস্য প্রকাশ করা হবে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মুহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ঘটনার পর কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বেশ কিছু ক্লু নিয়ে তদন্ত টিম কাজ করছে। আশা করছি খুব শিগগিরই ঘটনা উন্মেচিত হবে। অপরাধী যেই হোক দুদিন দেরি হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে ধরা পড়বেই। আপরাধীদের পার পাওয়ার সুযোগ নেই বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
পাঠকের মতামত: