ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় জালিয়াতি খতিয়ান সৃজনে হিন্দু পরিবারকে বসতি থেকে উচ্ছেদে পায়ঁতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে জালিয়াতির খতিয়ান সৃজনের মাধ্যমে একটি হিন্দু পরিবারকে বসতি থেকে উচ্ছেদে পায়ঁতারা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি জায়গার দখলচেষ্ঠার বাঁধা দুর করতে গৃহকর্তাকে সাজানো মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় আতঙ্কিত গৃহকর্তা কাঞ্চন সম্রাট বিপ্লব নাথ বাদি হয়ে সর্বশেষ ১৯ অক্টোবর চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি সিআর মামলা (নং ৮৮৯) রুজু করেছেন। মামলায় হারবাং ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বড়ুয়াপাড়া গ্রামের মৃত রজনী বড়ুয়ার ছেলে সুনীল বড়ুয়া, রনজিত বড়ুয়ার ছেলে জয়ন্ত বড়ুয়া এবং সুনীল বড়ুয়ার ছেলে খোকন বড়ুয়াসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। অপরদিকে মামলার বাদি কাঞ্চন সম্রাট বিপ্লব নাথ হারবাং ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের নাথপাড়া গ্রামের সুনীল কান্তি নাথের ছেলে।

আদালতের বিচারক বাদির নালিশী মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তপুর্বক প্রতিবেদন দিতে চকরিয়া থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। থানার ওসি মামলার অভিযোগটি তদন্তের জন্য এসআই মানিক কুমারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। বাদি কাঞ্চন নাথ দাবি করেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা মানিক কুমার বর্তমানে দুর্গাপুজার ছুটিতে রয়েছেন। সেই সুযোগে অভিযুক্ত আসামিরা ভাড়াটে দুর্বৃত্ত জড়ো করে হামলা চালিয়ে বসতি থেকে তাঁর পরিবারকে উচ্ছেদে অপচেষ্ঠা চালাচ্ছেন। এ অবস্থার কারণে চরম আতঙ্কে ভুগছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।

মামলার আর্জিতে বাদি কাঞ্চন সম্রাট বিপ্লব নাথ জয় দাবি করেন, চকরিয়া উপজেলার হারবাং মৌজার বিএস ৩০৪৩ দাগের সাত শতক জায়গা পুর্বপুরুষের সম্পত্তির অংশিদার হিসেবে মালিক তাঁর পরিবার। ২০১৬ সালের ২০ জুলাই চকরিয়া উপজেলা ভুমি অফিস থেকে উল্লেখিত ৭ শতক জমির বিপরীতে বাদির নামে খতিয়ানও (নং ৩৩১৩) সৃজিত হয়েছে। উল্লেখিত জমিতে বসতঘর নির্মাণ করে বাদির পরিবার শান্তিপুর্ণভাবে ভোগদখলে রয়েছেন। কিন্তু দুর্লোভের বশবর্তী হয়ে প্রায় ১০-১২বছর আগে থেকে পাশের বড়ুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অভিযুক্ত আসামিরা বাদির (কাঞ্চন নাথ) বৈধ ওই ৭ শতক জায়গা দখলে মেতে উঠে।

বাদি কাঞ্চন নাথ অভিযোগ করেছেন, দশবছর আগে আমার ওয়ারিশী উল্লেখিত জায়গা জবরদখলে বাঁধা দুর করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আসামিরা আমাকে চট্টগ্রামের একটি অস্ত্র মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করিয়ে জেলহাজতে পাঠান। আমি জেলে গেলে সেইসুযোগে আসামিরা একটি জালিয়াতি খতিয়ান সৃজনের মাধ্যমে আমার বসতঘরের ওই জায়গা দখলের অপচেষ্ঠা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে আপীল আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইর্কোট অস্ত্র মামলাটি খারিজ করে দিলে আমি কারামুক্ত হই।

কারাগার থেকে বের হয়ে পরবর্তীতে সুনীল বড়ুয়ার জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত খতিয়ানটি (নং ২৪৭৮) বাতিল চেয়ে চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার কার্যালয়ে একটি মিচ মামলা (৪৬/১০) দায়ের করি। জমির বিপরীতে কাগজপত্র পর্যালোচনা ও দীর্ঘ শুনানী শেষে ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) রোকসিন্দা ফারহানা আদেশে সুনীল বড়ুয়ার ওই খতিয়ান বাতিল করে দেন।

গৃহকর্তা কাঞ্চন নাথ বলেন, চকরিয়া উপজেলা ভুমি অফিসে জালিয়াতির খতিয়ানটি বাতিল করলে ওইসময় অভিযুক্ত সুনীল বড়ুয়া আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) দপ্তরে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আপীলকারীর তদবির না থাকায় অভিযোগটি বিনা তদবিরে খারিজ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)।

ভুক্তভোগী কাঞ্চন নাথ জয় অভিযোগ তুলেছেন, বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও দীর্ঘ বারবছর ধরে তিনি জায়গার মালিকানা নিয়ে আইনী লড়াই করেছেন। সব আদালতে কাগজপত্র পর্যালোচনা শেষে তিনি জায়গার বৈধ মালিক তা প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও জালিয়াতির খতিয়ান এবং পেশিশত্তিতে বলীয়ান হয়ে অভিযুক্ত সুনীল বড়ুয়া ভাড়াটে দুর্বৃত্ত জড়ো করে হামলা চালিয়ে আমার পরিবারকে বসতি থেকে উচ্ছেদে পায়ঁতারা চালাচ্ছে। এমনকি জায়গার দখলচেষ্ঠার বাঁধা দুর করতে আমাকে আগের মতো সাজানো মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে আমি বর্তমানে চরম আতঙ্কে ভুগছি।

 

পাঠকের মতামত: