ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায়

চকরিয়ায় জনপ্রতিনিধিরা দুর্গাপুজার সমাপনী পর্যন্ত প্রতিটি মণ্ডপে দায়িত্ব পালন করবেন -জেলা প্রশাসক

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় এবছর ৪৪টি প্রতিমা ও ৪৮টি ঘটপুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে পূজামণ্ডপ গুলো বর্ণিল আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষথেকে সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশে পুজা উদযাপন নিশ্চিত করতে নেওয়া পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই অবস্থায় শারদীয় দুর্গাপুজার সার্বিক প্রস্তুতি ও আয়োজন দেখতে গতকাল শুক্রবার (২০ অক্টোবর) চকরিয়া পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।

তাঁর আগে শারদীয় দূর্গাপুজা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে গতকাল বিকালে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার ১ (চকরিয়া পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম।

চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো রাহাত উজ জামান এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও জেপি দেওয়ান, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা, চকরিয়া উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর। এছাড়া অনুষ্ঠানে সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) রাকিব উর রাজা, চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ, চকরিয়া উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান এসোসিয়েশন এর সভাপতি আজিমুল হক আজিম, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, সাধারণ সম্পাদক লায়ন মোহাম্মদ আলমগীর, চকরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবলা দেবনাথ, বিএমচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম জাহাঙ্গীর আলম, হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ, ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান, কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাহাব উদ্দিন, লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের মহিউদ্দিন মোহাম্মদ বুলেট, কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন, সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী, চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল হোছাইন চৌধুরী, বমুবিলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুরুল কাদের, পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারহানা আফরিন মুন্না, চকরিয়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মুকুল কান্তি দাশ সহ

সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম কর্মী, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সুচারুভাবে কাজ করছেন। মনে রাখতে হবে, ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ সবার। এখানে কোনধরনের সম্প্রীতি বিনষ্ট হোক আমরা চাইনা। সেইজন্য প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল সবাইকে সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করতে হবে।

জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান বলেন, আগামী চারদিন ২১ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চকরিয়া উপজেলার সকল ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের একটাই কাজ, সেটি হচ্ছে নিজের এলাকায় প্রতিটি পুজামণ্ডপ গুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা, তদারকি করা। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে আনসার বাহিনীর ও মণ্ডপ কমিটির লোকজন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পুজার সমাপনী পর্যন্ত যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। মনে রাখতে হবে কেউ দায়িত্ব অবহেলা করেছেন, কর্মকাণ্ডে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন, সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আসতে হবে। তাই অর্পিত দায়িত্ব সঠিক ও সুচারুভাবে পালন করুন।

জেলা প্রশাসক এসময় আরো বলেন, পুজা চলাকালে মণ্ডপগুলো কঠোর নিরাপত্তায় থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরায় সবকিছু মনিটরিং করা হবে। সেখানে কেউ পুজারীর সঙ্গে ইভটিজিং বা মাদক সেবন করে মাতলামি করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। সেইজন্য চকরিয়া উপজেলার দুর্গাপুজা উদযাপনে ইউএনও, এসিল্যান্ড ছাড়াও জেলা প্রশাসনের আরো একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

আইনশৃঙ্খলা সভায় জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, শারদীয় উৎসবে কোনধরনের বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। পুজারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সেইজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রুটিন মোতাবেক কাজ করবেন।

তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব বিয়ের সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন গুজব বা ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
পুলিশ সুপার চকরিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্টর উদ্বৃতি দিয়ে পুজার সমাপনী দিন পর্যন্ত স্থানীয় এমপি জাফর আলমকে এলাকায় থাকতে বিশেষ অনুরোধ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কক্সবাজার ১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, শারদীয় দুর্গাপুজা চকরিয়া পেকুয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। এখানে এমন কোন অপশক্তি নেই যে চাকরিয়া পেকুয়ায় দুর্গা পুজার অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। সেইজন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সকলস্থরের নেতাকর্মীকে মণ্ডপ পাহারা দিতে নির্দেশ দিয়েছি। আশাকরি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপদ পরিবেশে সম্প্রীতি উৎসব উদযাপন করবেন।

আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা শেষে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের কালিবাড়ি মন্দির ও হারবাং মল্রিকপাড়া মন্দিরে পুজারা আয়োজন পরিদর্শন করেন। রাতে কক্সবাজার ফেরার পথে তাঁরা চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে কেন্দ্রীয় হরিমন্দিরে পুজার আনুষ্ঠানিকতা পরিদর্শন করে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমূখর পরিবেশে পালন করতে আহবান জানান।

পাঠকের মতামত: