নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়ার উপকূলে চিংড়িঘের এলাকায় দিন দিন গরু-ছাগল, ভেড়া ও মহিষ পালন হ্রাস পাচ্ছে। চারণভূমির অভাব ও চুরির কারণে ঘের মালিক ও খামারিরা প্রতিনিয়ত পশুপালন থেকে সরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চকরিয়া উপকূলে সুন্দরবন রেঞ্জের অধীন ৪৫ হাজার একর প্যারাবন ছিল। সে প্যারাবনে যুগ যুগ ধরে স্থানীয় লোকজন মহিষ চরাতেন। আগে মহিষ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হতো না। এখন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েও পালিত মহিষ ও ভেড়া চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। ১৯৮০ সালের পর প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। এরই মধ্যে সুন্দরবন রেঞ্জের সিংহভাগ প্যারাবন উজাড় হয়ে গেছে। ফলে চিংড়ি উৎপাদন বাড়লেও কমেছে মহিষ পালন। ঘের মালিকরা সীমিত আকারে ভেড়া পালন করলেও চোরের উৎপাতে সেটিও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফ উদ্দিন জানিয়েছেন, বর্তমানে চকরিয়া সুন্দরবনের বহলতলী, চরণদ্বীপ, রিংভং, ছগিরশাহকাটা, রামপুর, বদরখালী, পশ্চিম বড়ভেওলা ও ঢেমুশিয়া এলাকায় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ মহিষ রয়েছে। এ ছাড়া ভেড়া রয়েছে প্রায় ১০ হাজার ২৮০টি। তিনি দাবি করেন, এক সময় চকরিয়া সুন্দরবন এলাকায় আরও বেশি মহিষ ও ভেড়া পালন করতেন ঘের মালিক ও স্থানীয় লোকজন। আগে সহনীয় মাত্রায় মহিষ-ভেড়া চুরি হলেও এখন চুরির মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে অনেক ঘের মালিক চোরের ভয়ে মহিষ ও ভেড়া পালনে আগ্রহ হারিয়েছেন। চারণভূমির অভাব ও চুরির কারণে ভেড়া ও মহিষ পালন দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় ঘের মালিক ও খামারিরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি দেশে মাংসের চাহিদা পূরণেও সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
চকরিয়া উপকূলের চিংড়িচাষি কক্সবাজার জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আবু তৈয়ব জানান, ভেড়া ও মহিষ বিচরণের জন্য চারণভূমি ও চুরি দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আন্তরিক হলে চকরিয়া সুন্দরবন মহিষ ও ভেড়া পালনের সম্ভাবনাময় একটি আঞ্চলে পরিণত হতো। তিনি দাবি করেন, বর্তমানে যে ১০ হাজারের মতো ভেড়া রয়েছে, সেগুলোর প্রতিটির বাজারমূল্য ১০ হাজার টাকা ধরলে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রায় তিন হাজার মহিষের প্রতিটির বাজারমূল্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ধরলে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু চারণভূমির অভাব ও চুরির কারণে চকরিয়া সুন্দরবনে মহিষ পালন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
স্থানীয় খামারি ও ঘের মালিকরা প্রতিবছর মহিষ ও ভেড়া পালন করে আগের মতো আয় করতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন সাহারবিল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেম্বার আব্দুল কাদের। তিনি জানান, আগে তাঁর ঘেরে ১৫-২০টি মহিষ ও অর্ধশতাধিক ভেড়া থাকলেও বর্তমানে কোনো মহিষ ও ভেড়া পালন করছেন না। তাঁর ভাষায়, মহিষ ও ভেড়া বিক্রয়যোগ্য হতে না হতেই চোরের দল রাতের আঁধারে হত্যার ভয় দেখিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে মহিষ ও ভেড়া লুট করে নিয়ে যায়। আইনগত কোনো সাহায়তাও পাওয়া যায় না।
ঘের মালিক ও চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সিআইপি জাফর আহমদ জানিয়েছেন, চরণদ্বীপ চিংড়িঘের এলাকা থেকে সম্প্রতি তাঁর মালিকানাধীন ২৮টি মহিষ রাতের বেলায় চুরি হয়। পরে পুলিশের তৎপরতায় ডুলাহাজারার রিজার্ভপাড়া থেকে ২৭টি মহিষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এভাবেই প্রতিনিয়ত মহিষ-ভেড়া চুরি অব্যাহত থাকায় ঘের মালিকরা অতিষ্ঠ হয়ে মহিষ-ভেড়া পালন ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
অথচ পরিকল্পিতভাবে মহিষ ও ভেড়া পালন করা হলে চকরিয়া সুন্দরবন থেকে বছরে এ খাতে ৫০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে দাবি করেন বেশির ভাগ ঘের মালিক।
চকরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহম্মদ আব্দুল জব্বার বলেন, উপকূলীয় এলাকায় মহিষ ও ভেড়া চুরি হয়। কিন্তু চুরির অভিযোগ নিয়ে কেউ আসে না। দুর্গম এলাকা হওয়ায় পুলিশের পক্ষে নিয়মিত টহল দেওয়াও সম্ভব হয় না। ফলে পেশাদার চোরের দল ওই এলাকা থেকে নিয়মিত মহিষ-ভেড়া চুরি করে থাকে। এর পরও খবর পেলে পুলিশ চুরি যাওয়া মহিষ-ভেড়া উদ্ধারে তৎপরতা চালায়। কিছু পশু উদ্ধার ও চোরকে আটকও করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: