এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় ইউনিয়ন বদরখালীতে ফুসলিয়ে নিজবাড়িতে বেড়াতে নেয়ার অজুহাতে অষ্ঠম শ্রেণীতে পড়ুয়া কিশোরী শ্যালিকাকে অপহরণ করেছে লম্পট দুলাভাই। এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীর বাবা হয়ে চকরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী এবং পরিস্থিতির শিকার বড়বোন বাদি স্বামীসহ পাঁচজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করলেও চারমাসে গ্রেফতার হয়নি মামলার কোন আসামি এবং উদ্ধার হয়নি ভিকটিম ওই ছাত্রী।
অপরদিকে মামলায় আসামি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িতে রেখে যাওয়া স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তানকে নানাভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে শাশুড় বাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে। এমনকি কয়েকদিন আগে মারধর করে ওই নারীকে স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে শাশুড় বাড়ির লোকজন। অবশ্য খবর পেয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই নারীকে তিন সন্তানসহ ফের বাড়িতে তুলে দিয়েছেন। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে চারমাস ধরে অর্ধাহারে অনাহারে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগী স্ত্রী ও তাঁর তিন শিশু সন্তান।
চকরিয়া থানায় গত ২৪ এপ্রিল দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরীতে বাদি বদরখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গোদামপাড়ার বাসিন্দা মৃত এরশাদ আলীর ছেলে এয়াকুব আলী (৫৫) বলেন, গত ২২ এপ্রিল রাত আনুমানিক সাড়ে সাতটার দিকে বড়মেয়ে পাখী আক্তারের স্বামী কাইছার ফুসলিয়ে একইগ্রামে নিজবাড়িতে বেড়াতে নেয়ার অজুহাতে অষ্ঠম শ্রেণীতে পড়ুয়া আমার ছোট মেয়ে ছাদিয়া আক্তাকে (১৫) অপহরণ করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, প্রথমে বেড়াতে নিয়ে গেছে মনে করছিলাম, কিন্তু পরদিন বড় মেয়ের বাড়িতে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি সেখানে আমার ছোট মেয়ে যায়নি। সেই কারণে ধারণা করছি, লম্পট কাইছার আমার ছোট মেয়েকে ফুসলিয়ে অপহরণ করেছে। বর্তমানে তাঁরা চট্টগ্রামের দিকে আছে। সেখানে আমার মেয়েকে আটকে রেখেছে লম্পট কাইছার।
এদিকে ছোটমেয়ে অপহরণের ঘটনায় বাবা এয়াকুব আলী চকরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করার খবর পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন স্বামী কাইছারের পরিবার সদস্যরা। একপর্যায়ে তাঁরা বাড়িতে রেখে যাওয়া কাইছারের স্ত্রী পাখী আক্তার ও তিন শিশুসন্তানকে নানাভাবে শাররীক নির্যাতন চালাতে শুরু করে। তাদেরকে জোরপুর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার জন্য হামলাও করেছে বেশ কয়েকবার। সর্বশেষ ১৫ জুন সকালে স্বামী কাইছারের বড়ভাই নুর কাদের, নুরুল আবছার, তাদের বাবা নুরুন্নবীসহ পরিবার সদস্যরা মিলে বাড়িতে ঢুকে মারধর শুরু করেন পাখী আক্তার ও তাঁর তিন শিশু সন্তানকে।
এসময় তাঁরা বাড়ি থেকে তিনভরি স্বর্ণালঙ্কার, কাপড়-চোপড় এবং মালামাল সমুহ লুটে নিয়ে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাপের বাড়ির লোকজন এসে ঘটনাস্থল থেকে আহতবস্থায় পাখী আক্তারকে উদ্ধার করে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় গত ২৬ জুন রোজার ঈদের পরদিন চকরিয়া থানায় একটি মামলা করেন আক্রান্ত পাখী আক্তার (২৫)। এজাহারে স্বামী কাইছার ও তাঁর পরিবারের পাঁচজনকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছেন বদরখালী পুলিশ ফাঁিড়র এসআই জাকির হোসেন।
এদিকে মামলাটি করার পর প্রায় চারমাস সময় অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখনো এজাহারনামীয় কোন আসামিকে গ্রেফতার এবং অপহরণের শিকার ওই ছাত্রীবে উদ্ধার করতে পারেনি। উল্টো মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে শ^াশুড় বাড়ির লোকজন বাড়িতে রেখে যাওয়া স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তানকে নির্যাতন চালানো অব্যাহত রেখেছে। কয়েকদিন আগে মারধর করে ওই নারীকে স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে শ^াশুড় বাড়ির লোকজন। অবশ্য খবর পেয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই নারীকে তিন সন্তানসহ ফের বাড়িতে তুলে দিয়েছেন।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) বদরখালী পুলিশ ফাঁিড়র এসআই জাকির হোসেন বলেন, মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হলেও শ^াশড়-শাশুড়ি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। স্বামীসহ অপর তিন আসামি ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকায় তাদেরকে গ্রেফতার করা যাচ্ছেনা। কয়েকদিন আগেও খবর পেয়ে আসামিদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি।
তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি বাদির (পাখী আক্তার) স্বামী কাইছার স্কুল পড়ুয়া শ্যালিকাকে নিয়ে চট্টগ্রামে আছেন বলে জানতে পেরেছি। তাঁর সম্ভাব্যতা সনাক্ত পুর্বক গ্রেফতারের চেষ্ঠা চলছে। বাদিকেও বলেছি, চট্টগ্রামের কোন এলাকায় তাঁরা বসবাস করছেন সেটি নিশ্চিত করতে পারলেই আমরা অভিযানে যাবো।
এদিকে অপহৃত স্কুল ছাত্রীর বাবা এয়াকুব আলী জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে এবং লম্পট স্বামী কাইছারের সন্ধান দিতে পারলে পরিবারের পক্ষথেকে সন্ধানদাতাকে উপযুক্ত পুরস্কার দেবেন। সেইজন্য তিনি প্রশাসনের পাশাপাশি হৃদয়বান সকল নাগরিকের সহযোগিতা চেয়েছেন।
।
পাঠকের মতামত: