নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত পৌরসভার চারজন ডিলারের মাধ্যমে বিশেষ ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) চাল-আটা বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত মুল্যে এসব চাল আটা বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও অধৈক পরিমাণ বিলি করে ‘ফুরিয়ে গেছে’ অজুহাতে ডিলাররা দুপুর বারোটার আগে বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এভাবে প্রতিদিন অবশিষ্ট থাকা চাল-আটা কৌশলে কালোবাজারে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রের পরিসংখ্যান মতে, গত ২৫ জুলাই থেকে শুরু হয়ে চলতি অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত দৈনিক ৬হাজার কেজি বা ছয় মেট্রিক টন করে চারজন ডিলার কমপক্ষে ৪৩৫ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করেছেন। আর দুপুরের পর মোকামে বিক্রি বন্ধ করে দিয়ে তাঁরা উল্লেখিত সময়ে অর্ধেকের বেশি প্রায় ২০০ মেট্রিক টন সরকারি মুল্যের ৩০ টাকা দামের চাল কালোবাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দামে বিক্রি করে অন্তত ২০ লাখ টাকা হরিলুট করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, চকরিয়া পৌরসভার চারটি পয়েন্টে ওএমএস চাল আটা বিক্রিতে নীতিমালা লঙ্ঘন হচ্ছে। পাশাপাশি যিনি চাল ক্রয় করতে আসবেন, তার টিপসই সংরক্ষন রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। পক্ষান্তরে ডিলাররা তৈরী করছেন টিপসই সংরক্ষন তালিকা। এছাড়া বরাদ্দ উত্তোলন ও বিপনণের ক্ষেত্রে চাহিদাপত্র দাখিলের নিয়ম থাকলেও তদারক কর্মকর্তাদের কাছে এসব বিষয় উপস্থাপন করা হচ্ছেনা।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা খাদ্য অফিসের দাযিত্বশীল কর্মকর্তা তপন মল্লিক ও খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ওসিএলএসডি যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে এসব চাল আটা বিক্রিতে অনিয়ম চলে এলেও ডিলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি নজরদারি না থাকায় গরিবদের জন্য বরাদ্দকৃত বেশিরভাগ চাল কালোবাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন অফিসের কর্মকর্তা ও কতিপয় ডিলাররা।
উপজেলা খাদ্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনার আলোকে গত ২৫ জুলাই থেকে চকরিয়া পৌরসভার বিজয় মঞ্চ, ভাঙ্গারমুখ, থানা সেন্টার ও পালাকাটা স্টেশন পয়েন্টে রশিদ আহমদ, ইয়ার মোহাম্মদ, বেলাল উদ্দিন বিজু ও নুরুল হক নামের চারজন ডিলার ওএমএস কর্মসুচির চাল আটা বিপনণের দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রতিদিন এসব ডিলার পয়েন্টে উত্তোলনকৃত চাল আটা সঠিকভাবে বিক্রি হচ্ছে কী না তা তদারক করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে চারজন কর্মকর্তাকে টেক অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব অনিয়মের সাথে ওইসব টেক অফিসাররা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
তাদের মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের একাডেমিক সুপারভাইজার রতন বিশ^াসকে চকরিয়া বিজয় মঞ্চ, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নাজমুল হোসেনকে ভাঙ্গারমুখ, আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা গণেশ যাদবকে থানা সেন্টার ও উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আমির হোসেন ইমনকে পালাকাটা পয়েন্টে তদারক কর্মকর্তা নিয়োগ দেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ।
সুত্রে জানা গেছে, কার্যক্রম শুরুর প্রথমদিকে উল্লেখিত টেক অফিসাররা নির্ধারিত পয়েন্টে গিয়ে ওএমএস চাল আটা বিক্রি কার্যক্রম তদারক করলেও একমাসের বেশি সময় ধরে তাঁরা যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে পারছেনা। ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রারণ কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন চকরিয়া থেকে বদলী হয়েছেন। অন্য টেক অফিসাররাও নিজের অফিসের দাপ্তরিক কাজে চাপের কারণে প্রায়সময় তদারকি করছেনা বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ সুযোগে ডিলাররা বরাদ্দের অধৈক পরিমাণ চাল আটা বিক্রি করে ‘ফুরিয়ে গেছে’ অজুহাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিদিন দুপুরের পর বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এতে বেশিরভাগ ভোক্তা সাধারণ চাল আটা না পেয়ে ফেরত চলে যেতে বাধ্য হন। আর তাতে অবশিষ্ট থাকা চাল আটা বিক্রি করা হচ্ছে কালোবাজারে।
তদারক কর্মকর্তা চকরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের একাডেমিক সুপারভাইজার রতন বিশ^াস বলেন, ইউএনও স্যার আমাকে তদারক কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন, এটা ঠিক। তবে আমি নিজের অফিসের দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিনই ওএমএস চাল আটা বিক্রি কার্যক্রম দেখভাল করতে পারছিনা। সপ্তাহে একবার পয়েন্টে যাই। ওইসময় ভোক্তা সাধারণের উপস্থিতি দেখি। তাদের মাঝে চাল আটাও বিক্রি করা হয়।
জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভার চারটি পয়েন্টে খাদ্য বিভাগের ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রির জন্য চারজন ডিলার রয়েছেন। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন চার ডিলারকে ৬ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। একজন ডিলার দেড় টন অর্থাৎ এক হাজার পাঁচশত কেজি চাল বরাদ্দ পান। একাধিক পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে আসা ব্যক্তিরা চাল পান ৫ কেজি করে। দুপুরের আগেই বলা হয় চাল ফুরিয়ে গেছে। এভাবে দেড়টন চালের অর্ধেক বিক্রি করে বাকি চাল কালোবাজারে চলে যাচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, উত্তোলনকৃত চাল আটা ডিলাররা সঠিকভাবে বিপণন করছেন। তাঁরা যাতে কোন ধরণের অনিয়ম করতে না পারে সেইজন্য ইউএনও স্যার চারজন কর্মকর্তাকে টেক অফিসার নিয়োগ দিয়েছেন। পাশাপাশি খাদ্য অফিস থেকেও আমি লোক পাঠিয়ে মনিটরিং করছি।
বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সুদত্ত চাকমা চকরিয়া নিউজকে বলেন, চকরিয়া পৌরসভা এলাকায় ওএমএস চাল আটা বিক্রিতে কিছু অনিয়মের তথ্য শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অনিয়ম অব্যবস্থাপনা যাতে ডিলাররা করতে না পারে সেইজন্য খাদ্য বিভাগের পক্ষথেকে বিকল্প উদ্যোগ নেয়ার চেষ্ঠা করছি।
পাঠকের মতামত: