এম. জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
আগামী ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। কোরবানি আর বাকি মাত্র চার দিন। এরই মধ্যে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ছোটবড় অন্তত ২২ টি বাজারে একেবারে শেষমুহুর্তে জমে উঠছে কোরবানি পশুর হাট। উপজেলা সদরের আশপাশে হাটগুলোর অবস্থান হওয়ায় স্থানীয়দের পাশাপাশি জেলার বিভিন্নস্থান থেকে গাড়ি যোগে কোরবানি গরু আসতে শুরু করেছে হাটগুলোতে। অপরদিকে উপজেলার বড় বাজারগুলো থেকে স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি বিপুল পরিমান গরু প্রতিদিন চলে যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন প্রান্তের হাট-বাজার গুলোতে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় প্রশাসনের অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং অনুমোদন ছাড়া অন্তত ২২টি কোরবানি পশুর হাটে বেচাকেনা পুরোদমে জমে উঠেছে।
সরেজমিনে কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বেশিরভাগ কোরবানির পশুর হাটে বেড়েছে ক্রেতা সমাগম। স্থানীয় প্রশাসন থেকে সম্প্রতিসময়ে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানি পশুর হাটে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। তবু পশুর হাটে কেতা সাধারণ তা লঙ্ঘন করে চলছেন। পশুর হাটে চলাফেলায় অনেকের নেই শারীরিক দূরত্ব সম্পর্কে কোন ধারণা। ফলে শারীরিক দূরত্ব বিধি লঙ্ঘন করে কোরবানির পশুর হাট বাজারে গুলোতে ঘুরছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এবারের কোরবানি পশুর হাট-বাজারে মাঝারি সাইজের এক একটি গরু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ হাজার এবং বড় সাইজের গরু বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকার উপরে। গরুর পাশাপাশি এই হাটে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল ও মহিষ। একেকটি বড় আকারের খাসি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। অন্যান্য বাজারের তুলনায় ইলিশিয়া বাজারে এবারও সবচেয়ে বড় সাইজের গরুর দেখা মেলেছে । তবে বেশিরভাগ বাজারে স্থানীয় জাতের দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট বাজার ইজারাদাররা।
সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার বসে চকরিয়া পৌরসদরের ১নং ওয়ার্ডে অবস্তিত ঐতিহ্যবাহী বাজার ঘনশ্যামবাজার। এই বাজারটি উপজেলার প্রাচীন একটি বাজার। শুক্রবার বাজারে দেখা গেছে, কোরবানি উপলক্ষে পুরোবাজার জুড়ে মানুষ-গরু-ছাগল ও মহিষে একাকার। এদিন প্রচুর গরু ছাগল বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার ইজারাদার।
ঘনশ্যাম বাজার ইজারাদার পক্ষের পরিচালক রাজীফুল মোস্তফা বলেন, কোরবানি পশুর হাট ঘিরে আমরা বাজারে পশু বেচাকেনা নিবিগ্ন করতে সবধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিই। বিশেষ করে রাতের বেলায় যাতে গরু ছাগল বেচাকেনা করা যায় সেইজন্য লাইটিং এবং অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ দিয়ে বাজারে নিরাপত্তা জোরদার করি। ফলে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ে কোরবানি পশু বেচাকেনা নিয়ে দুচিন্তা মুক্ত থাকেন।
এদিকে ঈদের সময় ঘনিয়ে আসছে ততই বেশ জমে উঠেছে চকরিয়া পৌরসভার বাসটার্মিনাল, ঘনশ্যামবাজার, মগবাজার কমিউনিটি সেন্টার মাঠ, ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, সাহারবিল পরিষদ বাজার, বদরখালী বাজার, ডুলাহাজারা স্টেশন বাজার, খুটাখালী স্টেশন বাজার, হারবাং স্টেশন বাজার, বেতুয়া বাজার, বরইতলী গরুবাজারসহ অন্তত ২২টির বেশি কোরবানীর পশুর হাট। প্রতিবারের মতো এবারও সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসেছে ইলিশিয়া জমিলা বেগম স্কুল মাঠে। ইজারাদার পক্ষের লোকজন পশুর হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে সর্তক করতে মাইকিং করছেন। বলছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পশু বেচাকেনা করুন।
বর্তমান সময়ে চকরিয়া উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট ইলিশিয়া গরু বাজার। রোববার ও বৃহস্পতিবার সপ্তাহে দুইদিন বাজারটি বসে। এই বাজার থেকে অন্য সময়েও বিপুল পরিমাণ গরু ছাগল চট্টগ্রাম কক্সবাজারে সরবরাহ হয়ে থাকে।
ইলিশিা গরু বাজারের পরিচালক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, সারাবছর আমাদের বাজারে প্রচুর গরু ছাগল বিক্রি হয়ে থাকে। অন্য বাজারের তুলনায় আমরা গরু বিক্রিতে অতিরিক্ত টোল নিইনা, প্রশাসনের নির্ধারণ করে দেওয়া অংকে প্রতিটি গরু ছাগল থেকে হাসিল ( টোল) নিয়ে থাকি, সেই কারণে আমাদের বাজারে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ে আনুপাতিক হারে হাসিল দিয়ে গরু ছাগল বিক্রি করতে পারে। মুলত বাজার কমিটির দায়িত্বশীল ভুমিকায় সুন্দর পরিবেশে বাজারটি পরিচালিত হচ্ছে বলে দিনদিন আমাদের বাজারটি সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
রোববার ইলিশিয়া বাজারে কোরবানি গরু কিনতে দেখতে এসেছেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক চট্ট। তিনি জানালেন, জন্য গরু দেখতে এসেছেন দামে পোষালে আজই কিনবেন। তবে এই হাটে পশুর দাম অন্যান্য বাজারের চেয়ে তুলনামূলক একটু কম।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমন দেখা দেয়ায় কোরবানি পশুর হাটগুলোতে সবধরণের সুরক্ষামুলক উদ্যোগ নিতে আগে থেকে বাজার ইজারদার সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোরবানি পশু বেচাকেনায় যাতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় হয়রানির শিকার না হন সেইজন্য বাজার ইজারাদার সবাইকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। ##
পাঠকের মতামত: