ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় আলোচিত দেড়মাস বয়সের শিশু নওরিন হত্যা মামলাটি ছিল সাজানো নাটক

আদালতের কাছে জবানবন্দিতে জানালেন মা ছায়েরা খাতুন

চকরিয়ায় দেড়মাস বয়সের শিশু কন্যা লতিফা জন্নাত নওরিন। ফাইল ছবি

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

চকরিয়ায় দেড়মাস বয়সের শিশু লতিফা জন্নাত নওরিন হত্যা মামলাটি অবশেষে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আদালতে মামলার বাদী মারা যাওয়া শিশুটির মাতা ছায়েরা খাতুন জবানবন্দিতে বলেছে, তাঁর শিশু মেয়ে নওরিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। কিন্তু বসতভিটার বিরোধের জেরে গত চারমাস আগে তাঁর নিকট আত্মীয় গিয়াস উদ্দিন পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তাকে বাদি বানিয়ে শিশুটিকে আঁছাড় মেরে হত্যার অভিযোগে চকরিয়া থানায় মামলাটি করেছিলেন।

আসামি পক্ষের লোকজন জানান, বাদি ছায়েরা খাতুন চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিয়ে জবানবন্দি দেয়ার পর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ওই মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামি আবু তাহের ও মো.মান্নানকে জামিনে মুক্তি দেন।

অপরদিকে বিরোধীয় জায়গার ব্যাপারে জামিনে আসা আবু তাহের বাদি হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের ১৪৪ ধারার নিষেধাজ্ঞার আদেশ উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার আসামি পক্ষের লোকজন জমি জবর দখল করে সেখানে পাকা দালান নির্মাণকাজ শুরু করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে দখলবাজদের ধাওয়া করে। তবে ওইসময় কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলে বিরোধীয় জমিটি স্থানীয় কাউন্সিলারদের জিম্মায় দিয়েছে পুলিশ। চকরিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের পালাকাটা খোন্দকার পাড়ায় ঘটেছে এ ঘটনাটি।

অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৮ সালেল ১৫ জানুয়ারী চকরিয়া পৌরসভার পালাকাটা খোন্দকার পাড়া গ্রামে আবু তাহের গংয়ের ভোগ দখলীয় বসতবাড়ি এলাকার সাহাব উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন গং ভাংচুর ও লুটপাটের মাধ্যমে গুড়িয়ে দেয়। এনিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আবু তাহের বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় মামলা (নং জিআর ২৩/১৮) দায়ের করেন।

ওই মামলা হতে পার পেতে অভিযুক্ত আসামী গিয়াস উদ্দিন ও রৌশনআরা পরিকল্পিতভাবে তাদের আত্বীয় কবির আহমদ ও ছায়েরা খাতুনের শিশু কন্যা লতিফা জন্নাত নওরিন (দেড়মাস ) নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে হাবিবুর রহমান ও আবু তাহের গংয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে চকরিয়া থানায় হত্যা মামলা (নং জিআর ২৭/১৮) দায়ের করেন।

ওই মামলায় নিরপরাধ আবু তাহের ও তার ভাতিজা মো: মন্নানকে আটক করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। সম্প্রতি মামলার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত চকরিয়ায় প্রেরণ করা হলে আদালত তা পর্যালোচনা করে স্বাভাবিক ও অসুস্থতার কারণে শিশুটির মৃত্যুর ঘটনাটি নিশ্চিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে আদালত মামলার বাদী ছায়েরা খাতুনকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।

আদেশের প্রেক্ষিতে বাদী ছায়েরা খাতুন গত ৩ মে হাজির হলে আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দিতে মামলার বাদী ছায়েরা খাতুন বলেন, মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনার সাথে অভিযুক্ত আসামীরা সংশ্লিষ্ট নয় এবং এই ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। ভিকটিম তাঁর শিশু মেয়েটি নিউমোনিয়া রোগে মারা যায়। ঘটনার সময় তাকে (বাদী) ফুসলিয়ে বাদি করে হত্যা মামলাটি করেন বলে তিনি আদালতে জানান।

বাদির বক্তব্য গ্রহনের পরবর্তীতে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলার আসামি জেল হাজতে থাকা আবু তাহের ও তার ভাতিজা মো: মন্নানকে গত ২২ মে জামিনে মুক্তি দেন।

মামলায় জামিনে আসা আবু তাহের ও তার ভাতিজা মো: মন্নান প্রথম পক্ষ হয়ে সাহাব উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিনসহ ৮জনের বিরুদ্ধে গত ১৭জানুয়ারী কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, কক্সবাজার-এ ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৪ ধারার এমআর মামলা (নং ৫২/১৮) দায়ের করেন। মামলায় আদালত বিবাদীগনকে বিরোধী ভূমিতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পযর্ন্ত প্রবেশে বারিত (নিষেধাজ্ঞা) করেন এবং ওসি চকরিয়া থানাকে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার নির্দেশ দেন।

কিন্তু মামলার বিবাদী সাহাব উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন গং আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার (২৪ মে) বিরোধীয় ভূমিতে পাকা দালান নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখে। বিষয়টি নিয়ে এমআর মামলার বাদী আবু তাহের ও তার ভাতিজা মন্নান চকরিয়া থানার ওসিকে অবহিত করেন।

চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আদালতের আদেশ লঙ্গন করে বিরোধীয় ভূমিতে স্থাপনা নির্মাণের খবর পেয়ে থানার এসআই আবদুল খালেক ও জুয়েল চৌধুরীর নেতৃত্বে সংগীয় পুলিশদল ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। তবে ওইসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।

ওসি বলেন, ঘটনার পর স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন, ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফোরকানুল ইসলাম তিতু ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রাজিয়া সোলতানা খুকুমনির মধ্যস্থতায় বিরোধীয় জায়গাটি আদালতের পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পযর্ন্ত কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ না করতে জিন্মায় দেয়া হয়েছে। #

পাঠকের মতামত: