বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সুন্দরবন এলাকায় অবস্থিত তিনশো একরের একটি চিংড়ি ঘের দখল করে নিয়েছে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। এই চিংড়ি ঘেরের মালিক বাংলাদেশ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড মোহাম্মদ ইউনুস। তিনি বর্তমানে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কর্মরত রয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে সর্ব প্রথম এই চিংড়ি ঘেরে সেমি ইনটেনসিভ বা আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ শুরু হয়েছিল।
চকরিয়া থানা পুলিশ ও স্হানীয় সুত্রে জানা গেছে গত সোমবার রাতে প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসী অস্ত্র সহ চকরিয়া সুন্দরবন তথা রামপুরা মৌজায় অবস্থিত গ্রামীণ ব্যাংকের তিনশো একরের ঐ চিংড়ি ঘেরে হানা দিয়ে ঘেরাও করে ফেলে।
এ সময় সন্ত্রাসীরা মুহুর্মুহু ফাঁকা গুলি বর্ষন করে চিংড়ি ঘেরে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে। পরে সন্ত্রাসীরা চিংড়ি ঘেরের কর্মচারীদের একত্রিত করে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা চিংড়ি ঘেরটি দখল করে নেয় এবং কর্মচারীদের তাড়িয়ে দেয়।
গ্রামীণ ব্যাংকের এই চিংড়ি ঘেরের ব্যবস্হাপক উৎপল কান্তি জানান, সন্ত্রাসীরা চিংড়ি ঘেরটি দখল করে নিয়ে কর্মচারীদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। প্রথমে তিনি চকরিয়া পেকুয়া আসনের এমপি জাফর আলমকে চিংড়ি ঘের দখলের ঘটনাটি অবহিত করলে এমপি জাফর আলম বিষয়টি দেখবেন বলে তাকে আশ্বাস দেন। কিন্তু কোন সুরাহা না পেয়ে চিংড়ি ঘেরের ব্যবস্হাপক উৎপল কান্তি চকরিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি চিংড়ি ঘের দখলের বিস্তারিত বর্ননা দেন। তিনি আরো জানান তিনিসহ ঐ চিংড়ি ঘেরে ১৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারী ছিল। সবাইকে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মী করে তাড়িয়ে দেয়। এসময় সন্ত্রাসীদের হাতে তখন প্রচুর অস্ত্র ছিল।
তিনি সন্ত্রাসীদের নাম বলতে অপারগতা প্রকাশ করে জানান গত ২৫ বছর ধরে তিনি ঐ চিংড়ি ঘেরে ব্যবস্হাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন এবং তিনশো একরের এই চিংড়ি ঘেরের মালিক নোবেল জয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান ড মোহাম্মদ ইউনুস। চিংড়ি ঘেরের সরকারি রাজস্ব সব কিছুই আপটুডেট আছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়া সুন্দরবনখ্যাত রামপুর মৌজার চিংড়ি জোনে এটি গ্রামীণ ব্যাংকের ঘের হিসেবে পরিচিত। অত্যাধুনিক চিংড়ি চাষের এটিই একমাত্র সরকার থেকে ইজারা নেওয়া কোনো বড় চিংড়ি প্রকল্প।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী জানান, চকরিয়ায় বিভিন্ন চিংড়ি ঘেরে প্রায়ই জবরদখল ও মাছ চুরির ঘটনা ঘটে। তবে রামপুর মৎস্য বিভাগের ইজারা দেওয়া এত বড় ঘের এই প্রথমবারের মতো জবরদখলের ঘটনা ঘটল।
মৎস্য অধিদপ্তরের কক্সবাজার আঞ্চলিক মৎস্য কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘রামপুর মৌজার সাত হাজার একর চিংড়ি জমির মধ্যে গ্রামীণ মৎস্য ফাউন্ডেশনকে ৩০০ একর ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালে ১৫ বছরের ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ইজারার মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে বর্তমানে গ্রামীণের সঙ্গে মৎস্য বিভাগের মামলা বিচারাধীন। ঘেরের দখল ঠিকই রয়েছে গ্রামীণ কর্তৃপক্ষের। অন্য কেউ জবরদখল করার খবর আমাদের জানা নেই।’
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাকের মোহাম্মদ জুবায়ের জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের তিনশো একরের ঐ চিংড়ি ঘের দখলের ঘটনা নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। থানার ওসি বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি।
পাঠকের মতামত: