নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
গোপনে বাসায় প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারে পড়াচ্ছেন চকরিয়া উপজেলা সদরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক। স্কুলের ক্ষেত্রে নানা প্রলোভন ও পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে স্কুল কতৃপক্ষ ও প্রশাসন তেমন কঠোর অবস্থান না থাকায় স্কুলের নিয়মিত পাঠদানের সময়ে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে প্রকাশ্যেই প্রাইভেট পড়াচ্ছেন শিক্ষকরা।
প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস রোধে চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর আগে থেকে সব ধরনের কোচিং বন্ধের নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়ে সরকারের রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। আদালত ও মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশ অমান্য করে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অভিভাবকদের বাধ্য করছেন শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী জানান, স্কুলে না গেলেও সমস্যা নেই। কিন্তু প্রাইভেট না পড়লে বোর্ড পরীক্ষায় যেমন তেমন, স্কুলের পরীক্ষায় পাস করা সম্ভব নয়। প্রাইভেট না পড়লে ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের বাইরেও রাখা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘প্রাইভেট নীতিমালা ও কোচিং বন্ধে আদালত রায় দিয়েছেন। তবুও বন্ধ হচ্ছে না কোচিং বা প্রাইভেট। শিক্ষকরা সকাল-বিকাল কৌশলে প্রাইভেটে সময় দেয়। ক্লাসে মনোযোগসহকারে ভালোভাবে পড়ালে শিক্ষার্থীদের আর প্রাইভেট কিংবা কোচিং করতে হয় না। শিক্ষকরাই বাণিজ্য করতে ক্লাসে পড়া ফাঁকি দেন।’
গত কয়েকদিন সরেজমিনে ঘুরে চকরিয়া পৌর শহর ও বিভিন্ন ইউনিয়নে একাধিক শিক্ষককে প্রাইভেট পড়াতে দেখা গেছে। চকরিয়া মহিলা কলেজ ও কোরক বিদ্যাপীঠ, হাসপাতাল পাড়া,নিরিবিলি আবাসিক সংলগ্ন ভাড়া বাড়িতে দিনে রাতে কয়েকটি ব্যাচে প্রায় ৯শতাধিক ছাত্র ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ান। এমনকি চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ থেকে চকরিয়া গ্রামার স্কুল পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমিটারে মধ্যে অর্ধশতাধিক প্রাইভেট ও বানিজ্যিক কোচিং সেন্টার রয়েছে।
চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ,চকরিয়া গ্রামার স্কুল,চকরিয়া কলেজ, চকরিয়া মহিলা কলেজ, চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়, চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ জন শিক্ষক প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্যে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা ‘২০১২’ এর ১৩ অনুচ্ছেদের ‘ঙ’ ধারায় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধি ‘১৯৮৫’ এর অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে উল্লেখ থাকলেও নীতিমালার তোয়াক্কা করছেন না শিক্ষকরা।
চকরিয়া কমার্স কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল শওকতুল ইসলাম বলেন, রাত্রিকালীন কোচিং শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ালেখায় যেমন ক্ষতিকর তেমনি ছাত্রীদের নিরাপত্তায় মারাত্মক হুমকিস্বরুপ । যেখানে সারাদিন স্কুল শেষে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্লাসের পাঠগুলো নিজের মতো করে সময় নিয়ে নিজেকে তৈরি করার কথা সেখানে ঐ সময়টাতে কোচিং নামক ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করার পাশাপাশি পিতামাতার কষ্টে অর্জিত অর্থের ও অপচয় করতেছে । স্কুলের মতো শত শত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং নামক এই রাত্রিকালীন ব্যবসা শিক্ষার্থীদের তেমন কিছু শিখাতে না পারলেও ভালো আড্ডা বাজি, গ্রুপিং কিংবা ইভটিজিয়ের মতো জঘন্য কাজগুলোর দিকে শিক্ষার্থীদের ধাবিত করছে যার ফলস্বরুপ শিক্ষার্থীরা নিজেদের চরিত্র হননের পাশাপাশি মুখস্থ ও চুরি বিদ্যায় পারদর্শী হচ্ছে । যেটা গোটা জাতির জন্য ক্যানসার পরিণত হচ্ছে ।ছাত্রীদের যৌন হয়রানি সহ রাত্রিকালীন নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অবাধ বিচরণ ঘটছে। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও পড়ালেখার স্বার্থে রাত্রীকালিন এই কোচিং অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে, না হয় এটা দেশ ও জাতির জন্য হুমকি হয়ে দাড়াবে।
চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নুরুল আখের বলেন, রাত্রীকালীন কোচিং ভালো খারাপ অভিভাবকরা চিন্তা করবে,তারা নিরাপদ মনে করলে তাদের মেয়েদের কোচিং এ পাঠাবেন, অনিরাপদ মনে করলে পাঠাবে না, তবে রাত্রীকালীন কোচিং উচিত মনে করছি না।
পাঠকের মতামত: