কক্সবাজার প্রতিনিধি :চ করিয়ার হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে গঠিত একটি দালাল সিন্ডিকেটের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের কেউ ভয়ে মুখ খুলেন না, আবার কেউ সাহস করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেকটা ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এসব মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্ব গঠিত দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হারবাং ইউনিয়নের বাস স্টেশন, ভান্ডারীরডেবা, ইছাছড়ি, কোরবানিয়াঘোনা, নতুন বাজারসহ বিভিন্ন মাদক ও জুয়ার ডেরা থেকে মাসিক মাসোহারা হিসেবে আদায় করেন লক্ষাধিক টাকা। এতে হারবাং ও বরইতলী এলাকা দুটি বর্তমানে পরিণত হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী এবং জুয়াড়িদের স্বর্গরাজ্যে। এছাড়া হারবাং ইউনিয়নের উত্তর হারবাং এলাকার আব্দুল কাদেরের ২টি অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান থেকে মাসিক ৩ হাজার টাকা করে মোট ৬ হাজার টাকা চাঁদা নেয় বলে জানা যায়। একই ইউনিয়নের গয়ালমারা এলাকায় করিম কোম্পানীর মালিকানাধীন থ্রি-বিএম ও শামসুল আলম কোম্পানির মালিকানাধীন এসবিএম নামক অবৈধ ২টি ইটভাটা থেকে ৮০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যার অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর লিটনের মালিকানাধীন হারবাংস্থ উত্তর হারবাং ৯নং ওয়ার্ডে অবস্থিত সিগারেট ফ্যাক্টরি থেকে ঈদ সালামীর নামে হাতিয়ে নিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। তাছাড়া হারবাং ইউনিয়নের বিভিন্ন গাছ ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে মাসিক ৩০/৩৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম মুঠোফোনে গাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা দাবির একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়।
অন্যদিকে হারবাং নাথপাড়া বালি মহাল থেকে প্রতিমাসে ১৫/২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন বলে জানা যায়। এছাড়াও অভিযোগ পাওয়া গেছে, হারবাং ইউনিয়ন যুবলীগনেতা জাহেদুল আলম লিটনের মালিকানাধীন আল্লাহর দান অটো রাইচ মিল থেকে গত ঈদুল ফিতরের আগে টাকা না দিয়েই ১টি ৫০ কেজি ওজনের চাউলের বস্তা নিয়ে যান তিনি। এব্যাপারে কোর্ট থেকে একটি সিআর মামলার তদন্তের জন্য তাকে পাঠানো হলে তিনি ওই ভুক্তভোগী ব্যক্তির কাছ থেকে ২৪ হাজার টাকা উৎকোচ আদায় করার পরই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলমের চাঁদাবাজির ডানহাত হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন জেল ফেরত যুবদল ক্যাডার ও নাশকতাসহ একাধিক মামলার এজাহার নামীয় আসামী বরইতলী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল করিম। রেজাউল করিমের কাজ এলাকায় ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করা ও টার্গেট চিহ্নিত করা। পরে টার্গেট করা ব্যক্তিদের পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে এনে আদায় করা হয় টাকা।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত রেজাউল করিমের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, টাকা যাদের কাছ থেকে নিয়েছি তারাই বলতে পারবেন তাদের কাছ থেকে কি কারণে কত টাকা করে নিয়েছি।
হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ জানান, মাদকসহ বিভিন্ন স্পট থেকে আইসি জাহাঙ্গীর আলম চাঁদা আদায় করেন বলে শুনেছি। তিনি আসার পর থেকে হারবাংয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রকিব উর রাজা বলেন, বিষয়টি এখন অবগত হয়েছি। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: