স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :: দুর্নীতির অভিযোগে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ আমির হামজাকে বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একই পদে কর্মরত। চলতি সপ্তাহে তিনি চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে যোগদান করবেন। এদিকে পুণরায় তাঁর চকরিয়া হাসপাতালে আসার খবরে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে।
সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) মো. সাখাওয়াত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক আদেশে আমির হামজাকে ফের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়।
দুদক ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয় ২০১৯ সালের ২২ মে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান চালায়। আমির হামজার বিরুদ্ধে হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কর্মীর নাম-বেনামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে ১১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি দুদক তদন্ত শুরু করে। দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে অভিযান চালায়। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনিয়মের কাগজপত্রও জব্দ করা হয়।
আমির হামজা ২০০৬ সালে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে পরিসংখ্যানবিদ হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছর একই পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালের পর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনি একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। পদে কর্মকর্তা থাকার পরও তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যোগসাজশে হিসাব রক্ষক ও ক্যাশিয়ার পদেরও দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর পছন্দের ঠিকদারকে টেন্ডারের সিডিউলের শর্তাবলি আগে ভাগে জানিয়ে দিতেন।
অভিযানের সময় দুদক জানায়, চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিস্কারের নামে মাস্টাররোলে পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দেখিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ লাখ ৯৫ হাজার ও ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ লাখ টাকা আত্মসাত করেন। ২০০৩ সালে হাসপাতালে একটি জেনারেটর কেনা হয়। প্রায় ৪ বছরের মাথায় জেনারেটরটি বিকল হওয়ার পরও ১০ বছর পর চালু দেখিয়ে তেল কেনা বাবদ বহু টাকা লুটপাট করেন।
২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত লগবুক তৈরি না করে প্রতিবছর ২০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়। হাসপাতালের কর্মচারীদের ডরমিটরিতে বাড়ি ভাড়া কম দেখিয়ে এমএলএসএস নামে বরাদ্দ দিয়ে আমির হামজা ও অন্য একজন নার্স হাসপাতালের সরকারি বাসা ব্যবহার করতেন। এছাড়া ২০১৮-১৯ সালে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নতুন ভবনে নির্মাণাধীনের সময় হাসপাতাল এরিয়ার কিছু গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। এ সুযোগে আমির হামজা হাসপাতাল এলাকার সব গাছ কেটে সাবাড় করেছিলেন।
নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের দু’জন কর্মচারী বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগে দুদক তাঁর (আমির হামজা) বিষয়ে তদন্ত করছে। তিনি নিজেকে হাসপাতালের হর্তাকর্তা মনে করতেন। পুণরায় তাঁর ফিরে আসার খবরে আমরা শঙ্কিত।’
এ বিষয়ে আমির হামজার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
দুদক সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। হাসপাতালটিতে অভিযানের সময় আমি চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের অধীনে ছিলাম। খবর নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোভন দত্ত বলেন, ‘পরিসংখ্যানবিদ আমির হামজা রামু থেকে চকরিয়া পদায়ন করা হয়েছে সেটা আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনেছি। তিনি এখনো হাসপাতালে যোগদান করেননি।’
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি আমির হামজা রামু হাসপাতালে কর্মরত। তাঁকে চকরিয়ায় বদলি করা হয়েছে সেটি আমার জানা নেই।’
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘দুদক যদি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তাহলে তাঁকে বরখাস্ত করা হবে। আমি বিষয়টি দেখব।’
পাঠকের মতামত: