ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া-মহেশখালী সড়ক ধসে যাচ্ছে, ৪০টন মালামাল ভর্তি লরী চলাচল, মানছে না সড়ক বিভাগের নির্দেশনা –

mohesh-khali-lory-2-300x225নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :
মহেশখালীর প্রধান সড়ক দিয়ে অসহনীয় ওজনের গ্যাস পাইপ নিয়ে লরী চলাচলের কারণে ধসে পড়তে শুরু করেছে চকরিয়া বদরখালী সড়ক ও সদ্য নির্মিত মহেশখালীর প্রধান সড়কের বিভিন্ন অংশ ও কার্লভার্ট। ফলে যেকোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে মহেশখালীর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ি ও সাধারণ মানুষ। গ্যাস লাইনে কাজ করা কোম্পানীগুলোর দাবী সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে তারা পাইপ পরিবহন করছেন। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান নির্বাহী অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
ধসে পড়তে শুরু করেছে মহেশখালীর প্রধান সড়ক। মহেশখালীর ৪ লাখ মানুষের একমাত্র সড়কটি অতিরিক্ত ওজনের পাইন নিয়ে লরী চলাচল করায় এমনটি হচ্ছে বলে জানালেন স্থানীয় লোকজন ও সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গ্যাস লাইনের কাজ করছে পৃথক ৩টি কোম্পানী
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় সড়ক দিয়ে অন্তত ৩ টন ওজন মালামাল নিয়ে গাড়ী চলাচল করা যাবে। এখন একটি ১০ টন ওজনের ৪টি পাইপ নিয়ে প্রায় ৪০ টন মালামাল নিয়ে লরী চলাচল করছে। । যা সড়কের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেকগুন বেশী।  মহেশখালীর মানুষের দীর্ঘ দাবীর মুখে ২০০৭ সালে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দুর্বলভাবে কাজ হওয়ায় তা দুই বছরেই যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এর পরে ২০১৪ সালে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রধান সড়কটি কয়েক দফায় পুনঃ নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।স্থানীয় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক’র বিশেষ অনুরোধে সড়ক মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের মহেশখালীর উত্তর পাশের সর্বশেষ অংশটি পুনঃ নির্মাণের নির্দেশ দেয় সড়ক বিভাগকে। বর্তমানে ওই অংশের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। লরী চলাচলের কারণে নির্মিত ও নির্মিতব্য সড়ক এর অধিকাংশ অংশ ধসে পড়তে শুরু করেছে।
মহেশখালীর সোনার পাড়ার আমান উল্লাহ জানিয়েছেন, রাত ১০টার পর শুরু হয় লরী চলাচল। প্রতিদিন প্রায় ৪০টি লরী চলাচল করে। যার ফলে নির্মিত ও নির্মিতব্য সড়ক টলটলায়মান হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে লরীর চাকা দেবে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়ক টলটলায়মান হওয়া ও বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে।
কালারমারছড়া পান বাজার ব্যবসায়ি সমিতির নেতা মোহাম্মদ মিয়া জানান, আর কয়েকদিন লরী চলাচল করলেই মহেশখালীর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে মহেশখালীর সকল ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। গত দ্ইু বছরে খুব মজবুতভাবে নির্মাণ করা সড়কটি ভেঙ্গে পড়ায় আমরা আতংকিত।
মিজ্জিরপড়ার মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম ও দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে একটি কার্লভার্ট ভেঙ্গে পড়েছে। ওই ভাঙ্গা কার্লভার্টের উপর পাটতান দিয়ে তারা লরী চালাচ্ছে। যেকোন সময় আরো কার্লভাট ভেঙ্গে বড়ধরণের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পাইপগুলো নৌপথেও আনা যায় কিন্তু কর্মরত কোম্পানীগুলো অতি মুনাফার জন্য সড়ক দিয়েই পরিবহন করছেন। সড়কের কোন অংশে ভেঙ্গে গেলেও তা আমলে নিচ্ছেন না কোম্পানীর লোকজন। ইতোমধ্যে হোয়ানকের হরিয়ারছড়ার বড় ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়েছে। এখন গাড়ি চলাচল করেছে বীজের নিচ দিয়ে।
কর্মরত কোম্পানী দিপন গ্যাসের ম্যানেজার মোহাম্মদ ইউনুচ জানান, ৩টি কোম্পানী গ্যাস পাইপ লাইনের কাজ করছে। বর্তমানে মহেশখালীতে যা হচ্ছে তা সরকারের বড় উন্নয়ন প্রকল্প। এটি বাস্তবায়িত করতে হলে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হবে। যেখানে সড়ক ভেঙ্গে যায় তা মেরামত করা হচ্ছে দাবী করে তিনি বলেন, আর কিছু দিনের মধ্যে পাইপ সরবরাহ শেষ হবে। এতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। চট্টগ্রামের উন্নয়ন কাজে এ গ্যাস ব্যবহার হবে বলে তিনি জানান।
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মোশারফ হোসেন জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়েই লরী দিয়ে পাইপ পরিবহন করা হচ্ছে। সড়ক পথে আনা ছাড়া অন্য কোন পথ না থাকায় ক্ষতি হলেও সড়ক দিয়েই পরিবহন করতে হচ্ছে। এটি জাতীয় প্রকল্প দাবি করে তিনি বলেন, জনগণের দূর্ভোগ হলেও সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়–য়া জানান, অতিরিক্ত পাইপ নিয়ে লরী চালানোর অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। গ্যাস কোম্পানী গুলো নির্দেশনা না মানলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে।

পাঠকের মতামত: