ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চকরিয়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও তহশিলদার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

চকরিয়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও কাকারা ভূমি অফিসের তহশিলদার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও সেবা গ্রহিতাদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ভূমি অফিসে এই দুই কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে খতিয়ান সৃজন, মনগড়া বিভিন্ন প্রতিবেদন দিয়ে ভুক্তভোগীদের হয়রানী করে আসছেন বলে দাবী করেছেন চকরিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মঈনুউদ্দিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগে জানান, চকরিয়া ভূমি অফিসে সার্ভেয়ার মশিউর রহমান যোগদান করার পর থেকে বিভিন্ন সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে খতিয়ান সৃজন, সার্ভেয়ার প্রতিবেদন ও নানা কাজে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে হয়রানি, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে আসছে বলে অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগীরা। কাগজপত্র সঠিক থাকলেও টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনে তিনি সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে সেবা গ্রহীতাদের হয়রানী করে যাচ্ছেন বলে এমনটা দাবী ভুক্তভোগীদের। এছাড়া সার্ভেয়ারের বিভিন্ন কাজে এসব অনিয়মের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন উমেদার কামাল।

চকরিয়া পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ভুক্তভোগী মো: মঈনু উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, চকরিয়া পৌরসভার লক্ষ্যারচর মৌজায় আমার পৈত্রিক ও ক্রয়কৃত নালিশী জমির বিএস ২৩৯ নম্বর খতিয়ানের মোট জমিতে ভূলবসত রেকর্ড হয় ৫.০৯ একর। যা করণিক ভূল মিচ মামলা নং ১২১/১৪-১৫ ইং মূলে উচ্চ আদালত মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অথচ মোট জমির পরিমাণ ভূল ৫.০৯ একর স্থলে ৪.৬৫ একর হয়ে সংশোধন করা হয়।

কিন্তু চকরিয়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোটা উৎকোচের বিনিময়ে চকরিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে মিচ মামলা ১২৩/২২-২৩ বাদী পক্ষকে খুশি করতে ভূলকৃত ৫.০৯ একর জমির হিসেব দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। আমার জমির কোন ধরণের কাগজপত্র সঠিকভাবে পর্যালোচনা না করে মনগড়া নিজের ইচ্ছে মতো একতরফাভাবে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে।

ভুক্তভোগী আরও জানান, বিএস ২৩৯ নম্বর খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক ছমন খাতুন থেকে এবং রেকর্ড মালিক লাল মিয়া ওয়ারিশগণ থেকে ১৯৯৪ সালের ১০ মার্চ রেজি: কবলা নং-৯২৪ খরিদ সূত্রে মালিক হয় আমার পিতা মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন। আমার পিতা জীবিত থাকাকালীন সময়ে অত্র দলিল মূলে নামজারী মামলা নং-১০০৮ (১) ১৭-১৮ ইং মূলে বিএস ৫৫৫৮/৬৩০০ দাগের ০.০৫ একর জমি নিয়ে ৩৫৭৬ নম্বর খতিয়ান সৃজন করেন। পরবর্তীতে সৃজিত ৩৫৭৬ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ৫৫৫৮/৬৩০০ দাগের জমিতে দেখতে পাই জমি আমার দখলে নেই। তাই বেদখলীয় জমি আপোষে বাদ দেয়ার জন্য চকরিয়া ভূমি অফিসে মিচ মামলার বাদী মোহাম্মদ হোসেন গং নামজারী আপিল মামলা নং-১১৬/২১ ইং দায়ের করেন।

বর্তমানে কক্সবাজার এডিসি আদালতে রায় দেওয়ার পর্যায়ে রয়েছে মামলাটি। সেই প্রেক্ষিতে বেদখলীয় জমি বাদ দিয়ে দখলীয় জমি নিয়ে /প্রাপ্য জমির চেয়ে কম জমি নিয়ে বিএস ৫৫৬২ দাগের ০.০২৯২ একর, ৫৫৬৬ দাগের ০.০৪৩৩ একর মোট ০.০৭২৫ একর জমি নিয়ে অত্র বিরোধীয় সৃজিত ৩৯৫৯ নম্বর খতিয়ান আমার পিতার নামে সৃজন পূর্বক তথায় অদ্যবদি ভোগদখল রত আছি।

তাছাড়া উক্ত জমির নালিশী বিএস ২৩৯ নম্বর খতিয়ান থেকে ওয়ারিশসূত্রেও প্রাপ্ত হই ভুক্তভোগী। কোচপাড়া মৌজার ০.১০০০ একর নামজারি খতিয়ান করার জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিস হতে প্রতিবেদনের পর সার্ভেয়ারের কাছে গেলে সার্ভেয়ার তাকে রেকর্ডীয় মালিকের অংশ জমি নাই মর্মে জানায়।

তিনি উক্ত রেকর্ডীয় মালিক হতে সর্বপ্রথম খরিদা মালিক মর্মে চ্যালেঞ্জ করলে সার্ভেয়ার আমাকে বালাম খুলে বলেন এই যে দেখেন, আপনাকে যিনি জমি বিক্রি করেছেন তাহার নামে গোল দাগ দেওয়া আছে। পরবর্তীতে সার্ভেয়ারের সহযোগী উমেদার ছরওয়ার আমাকে একটা গোল দাগ কাটলে ভূমি অফিসের কর্মচারী আমিনের সাথে কামাল বাহিরে চলে যাই। তখন কামাল আমাকে বলেন এক লক্ষ চল্লিশ টাকা দিলে গোল চিহ্ন চলে যাবে। আমি যেহেতু মেয়ে বিয়ে দেবো তাই জমি বিক্রি করতেই হবে। তাই কামালকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে আগ্রহী হই।

অভিযোগ অস্বীকার চকরিয়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মশিউর রহমান বলেন, কোন ধরণের উৎকোচের বিনিময়ে প্রতিবেদন দেয়া হয় না। এখানে বাদী/বিবাদীর কাগজপত্র পর্যালোচনা ও সরেজমিন তদন্তপূর্বক মূলত প্রতিবেদন দেয়া হয়।
অভিযোগের ব্যাপারে তহশিলদার রফিকুল আলমের সাথে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া য়ায়নি।
চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: রাহাত উজ জামান বলেন, যে মামলার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে তা আগামী বুধবার দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি নির্বাচনের দায়িত্ব রযেছে বলে অবগত করেন। এছাড়াও তিনি আরো বলেন, তাহার দপ্তরে অনেক গুলো মামলা তদন্ত রয়েছে। এখন কোনটা বিষয়ে অভিযোগ তা সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছেন না বলে জানান।

পাঠকের মতামত: