ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া ভূমি অফিস ঘুষ-দুর্নীতি আখঁড়া

cloনিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::::
চকরিয়া উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে চলছে অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতি। এতে মাসে লাখ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেন হয়। কানুনগো, সার্ভেয়ার, তহসিলদার, অফিস সহকারী, জারিকারক, পিয়ন-দালাল সবাই ঘুষ লেনদেনের সঙ্গে কমবেশি জড়িত রয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিসের এই অবৈধ লেনদেনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কর্মচারী-দালাল সিন্ডিকেট। দুদকের গণশুনানীর পরও ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বরং ঘুষ আদায়ে সংশ্লিষ্টারা আরও কৌশলী হয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) চকরিয়া ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পল্লী বিদ্যুত অফিসে দুর্নীতি কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে দু’টি পৃথক মুখোমুখি গণশুনানী করেছে। এসব গণশুনানীতে চকরিয়া ভূমি অফিস, ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে ব্যাপক ঘুষ দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা উঠে আসে। অভিযোগ উঠেছে এসব গণশুনানীতে যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা পরবর্তীতে তাদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী বশিরুল আলম বলেছেন; চকরিয়া ভূমি অফিসের দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। দুদকের গণশুনারীর পরও ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ হয়নি, বরং উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) একটু কৌশলী হয়েছেন মাত্র। সরকারী কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ব্যাপারে দুদকের গণশুনানীতে অভিযোগ তোলায় আমাকে উপজেলা কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত যাছাই বাছাই কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এমন কি যারা দুদকের গণশুনানীতে সরকারী কর্মকতাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন; তাদের নানাভাবে হয়রানি, নাজেহাল করা হচ্ছে, হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ করায় উপজেলা ভূমি অফিসে বন্দোবস্ত পাওয়া জমির ফাইল গায়েবের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ঘুষ দিতে না পারলে একজনের জমি অন্যজনের নামে খতিয়ান করে দেয়া হয়। চকরিয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের মগবাজার এলাকার মোঃ মফিজুর রহমানের ছেলে মোঃ ওমর ফারুখ চকরিয়ায় অনুষ্ঠিত দুদকের গণশুনানীতে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, তার বাবার নামীয় জমির খতিয়ান সৃজনের জন্য তিনি সম্প্রতি ভূমি অফিসে গিয়েছিলেন। ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্টরা তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেছেন। ওই ঘুষের টাকা দিতে না পারায় তার জমিটির খতিয়ান সৃজন হয়নি। এদিকে ঘুষ-দুর্নীতি প্রতিরোধে চকরিয়ার সচেতন মহল ‘চকরিয়া দুর্নীতি বিরোধী গণমঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তুলেছে। ঘুষ বন্ধ করা না হলে যে কোনো দিন তারা কঠোর আন্দোলনে নামবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, নাম প্রস্তাব, সার্ভে রিপোর্ট, দাখিলা প্রহণ, পর্চা, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ, খাজনা দাখিল, খতিয়ান ইস্যু থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ঘুষ দিতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, কাননগো, সার্ভেয়ার, ইউনিয়ন তহসিলদার ও দালাল চক্র প্রতিদিন জমির মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একজন ভুক্তভোগি বলেছেন; দালালদের মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে অভিযোগ উঠলে অস্বীকার করতে সুবিধা হয়। অভিযোগ উঠলে বলে থাকেন ওই নামের কোন লোক আমাদের অফিসে নেই। ভুক্তভোগি জানান; চকরিয়ায় নিষ্কণ্ঠক জায়গা কিনলেও বিনা হয়রানিতে ওই জায়গার মালিক হওয়া কষ্টকর। যদি কোন খুঁত থাকে তা সারাতে পোহাতে হয় অন্তহীন দুর্ভোগ। প্রতিটি নামজারিতে কম করে ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষে তা ১লাখ টাকা পর্যন্ত উঠে। একজন ভুক্তভোগি জানান; খাজনা আদায়কালে ঘুষ নেয়ার জন্য নামজারির ফাইলে ইচ্ছা করে কাঠপেন্সিল দিয়ে একটি কাগজের সঙ্গে ‘রেকর্ডে মিল নেই’ কিংবা ‘দখল নাই’ মর্মে লিখে দেয়া হয়। যাতে প্রকৃত ভূমির মালিককে বিভ্রান্ত করা যায়। এ অজুহাতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ আদায় করে থাকেন। একই অবস্থা খাজনা দাখিলেও। খাজনা আদায়ের নামেও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
ঘুষ দুর্নীতি সম্পর্কে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিদারুল আলম বলেছেন; আমার অফিসে কোন ঘুষ লেনদেন হয়না। দালালদের টাকা দিয়ে থাকলে আমি কারো পকেট পাহারা দিতে পারবো না। তিনি পরোক্ষভাবে দুর্নীতির কথা স্বীকার করে বলেছেন; অবৈধ বালি উত্তোলনের মতো আরো কিছু অভিযান পরিচালনায় আমাদের অনেক টাকা খরচা হয়, এ টাকাগুলো কোত্থেকে দেবো। তার মতে ঘুষ দুর্নীতি ৭শত বছর ধরে চলে আসছে। এটি হঠাৎ বন্ধ হবে না, আস্তে আস্তে কমিয়ে আনতে হবে।

পাঠকের মতামত: