ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া পৌর শহরে বেহাল সড়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

প্রথম শ্রেণির পৌরসভা কক্সবাজারের চকরিয়া শহরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো সড়কে একেবারে চলাচলই করা যাচ্ছে না। বড় বড় গর্ত হয়ে সেখানে গভীর খাদে পরিণত

হয়েছে। আবার কোনো সড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনার স্তুপ এবং পানি জমে থাকায় দুর্বিষহ অবস্থায় পড়েছেন চিরিঙ্গার মানুষ। এসব সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করলেও কারোরই যেন ভ্রুক্ষেপ নেই। এই অবস্থায় চলতি বর্ষা মৌসুমে পৌরবাসীর জন্য নেই কোনো সুখবর।

জানা গেছে, পৌরসদরের বালিকা বিদ্যালয় সড়ক, পেৌরসভা সড়ক, ওয়াপদা সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, চিরিঙ্গা নাথপাড়া সড়ক, চিরিঙ্গা-ফুলতলা সড়ক, বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়কগুলোর অবস্থা একেবারেই বেহাল।

তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, গত দেড়বছর ধরে চকরিয়া পৌরসভার সবকটি ওয়ার্ডের সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কাজ অনেকটা শেষের পথে। এই অবস্থায় বিভিন্ন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। এরই মধ্যে বর্ষা মৌসুম চলে আসায় কোনো কোনো সড়কে পানি জমে থাকছে। এতে মানুষের কষ্টও হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘চকরিয়া পৌরসভার সবকটি ওয়ার্ডে একযোগে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে আরসিসি ও বিটুমিন দিয়ে প্রশস্ত সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। আর এসব সড়কের পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে কয়েক ফুট দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের ড্রেন। বিশেষ করে এই ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের কারণেই মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। বিষয়টি আমি নিজেও অনুধাবন করতে পারছি।’

মেয়র বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়ার জন্য আমি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর যে সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছি, তাতে আনুমানিক আগামী ৫০ বছর পর্যন্ত পৌরবাসীকে আগেকার কষ্ট ভোগ করতে হবে না। বিশেষ করে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় পুরো ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এই ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হলেই আমূল পরিবর্তন হবে চকরিয়া পৌরশহর ও আবাসিক এলাকাগুলো।’

সরেজমিন দেখা গেছে, চকরিয়া পৌরসভায় যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম পুরাতন বিমানবন্দর সড়কে বর্তমানে হাঁটু পরিমাণ পানিতে সয়লাব হয়ে রয়েছে। বৃষ্টির পানি গিয়ে ড্রেনের ময়লার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে ওই এলাকায়। এতে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী লোকজন এবং আবাসিক মহিলা কলেজ, চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে। অনেক সময় ময়লা পানির ওপর চলাচল করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগেও পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণকে।

সরকারি হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বছরের পর বছর ধরে এই সড়কটি একেবারে বেহাল অবস্থায় পতিত রয়েছে। ওই সড়কে রয়েছে সাবেক পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম হায়দারের বাড়িও। কিন্তু তিনি যখন মেয়র ছিলেন, সেসময়ও এই সড়কটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ করতে সক্ষম হননি। তবে বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী এই সড়ককে একটি আধুনিক মানের সড়ক এবং প্রস্থ বাড়াতে প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদন করেছেন। অচিরেই এই সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হবে বলেও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে সরকারি বালিকা বিদ্যালয় সড়কটি আরসিসির হলেও বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে থেকে পূর্বাংশে মহাসড়কের মাথা পর্যন্ত পায়ে হেঁটে চলাচল করার একেবারে কোনো উপায় নেই। সড়কটির মাত্র কয়েকশ গজের মধ্যেই বিদ্যালয়ের সীমানা দেওয়াল লাগোয়া অংশে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় সেসব ময়লা-আবর্জনা পুরো সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। এতে দুর্গন্ধে নাক চেপেও সেই এলাকা মাড়ানো সম্ভব হয় না পৌরবাসীর।

চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফরিদা ইয়াছমিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে তাঁর শিশু সন্তানকে নিয়ে বিদ্যাপীঠে যেতে হয়। কিন্তু সড়কের যে অবস্থা তা দেখে পুরো শরীর ভারী হয়ে উঠে। ড্রেনের ময়লা সড়কে ওঠে পড়ায় পায়ে হাঁটা তো দূরের কথা, দুর্গন্ধে রিকশা বা টমটমে যেতেও ঘেন্না লাগে। তাই আপাতত আমার সন্তানকে বিদ্যালয়েও পাঠাচ্ছি না।’

চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আখের চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘জেলার আলোচিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নার্সারি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অন্তত ৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। তারা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে থাকে। কিন্তু দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানিতে ভাসা সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। তাই পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিতে।’

পাঠকের মতামত: