নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারর গেটওয়ে বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা। আগামী ১১ এপ্রিল চকরিয়া পৌরসভার নির্বাচন। আরও একমাস সময় বাকী রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে পৌর শহরে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ। অপর দিকে চলছে এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীর বিরোদ্ধে বিষোদগার ও বাদ-প্রতিবাদ।
সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাট-বাজার ও চায়ের দোকানগুলোতে চলছে নির্বাচনি আলোচনা সমালোচনা। ইতিমধ্যেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ৯টি ওয়ার্ডে শুরু করেছে গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা। আগামী পৌর নির্বাচনে কে হচ্ছেন পৌরপিতা। এনিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বর্তমানে কাউন্সিলর প্রার্থীরা মাঠে ময়দানে নির্বাচনি তৎপরতা অব্যাহত রাখলেও মেয়র প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দলের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান ঢাকায় অবস্থানরত মেয়র প্রার্থীরা। ঢাকার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৬ মেয়র প্রার্থী। গত দুইদিনে উপজেলা নির্বাচনি অফিস থেকে ১২ নারী ও পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। স্ব-স্ব কাউন্সিলর প্রার্থী সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। যারা সংগ্রহ করেছেন, তারা হলেন, বর্তমান মেয়র ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন জয়নাল, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওয়ালিদ মিল্টন।
এদিকে পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আবাস পাওয়া যাচ্ছে। পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে করছে সমালোচনা ও বিষোদগার। এতে নির্বাচনি মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে ভোটারদের মাঝে।
সোমবার রাত দশটার দিকে চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর রেজাউল করিম নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীকে নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জায়গা জমি বিরোধের জেরধরে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরকেও আসামী করা হয়েছে। মূলত তার জনপ্রিয়তায় ঈর্শান্তি হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছেন তার ও পরিবারের বিরোদ্ধে। নির্বাচনি মাঠকে বির্তকিত করে তুলেছে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারী দুই কাউন্সিলর প্রার্থী জড়িত রয়েছেন বলে দাবী করেন রেজাউল করিম।
অপরদিকে মঙ্গলবার বিকালে ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আবছার বাদশা ও সাইফুল ইসলাম বর্তমান কাউন্সিলর রেজাউল করিমের নানা অপকর্ম নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা বলেন, রেজাউল করিম নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এলাকার যুব সমাজের হাতে মাদক তুলে দিয়েছেন তিনি।২নং ওয়ার্ডের শতশত যুবক নেশাগ্রস্থ হয়েছে। যা এলাকার সচেতন মহলের সবাই অবগত রয়েছেন।
কাউন্সিলার রেজাউল জমি দখল, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, উন্নয়ন কাজের নামে লুটপাট চালিয়েছেন গত পাঁচটি বছর। গত পাঁচ বছর ধরে ২নং ওয়ার্ডের সারারণ ও খেটে খাওয়া মানুষ গুলো তার হাতে জিম্মী ছিলো। তার অত্যাচার নির্যাতনে হাফিয়ে উঠেছে এলাকার মানুষ। এবারের নির্বাচনে মানুষ পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনই বর্তমান কাউন্সিলর রেজাউল করিম জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীকে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে দাবী করছেন কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আবছার বাদশা ও সাইফুল ইসলাম।
এদিকে চকরিয়া পৌরশহর নানা পোস্টারে ছেয়ে গেছে। শহরের সৌন্দর্য্যবর্ধন নষ্ট করেছে। বিশেষ করে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার সাটাঁনো হয়েছে। পরিণত হয়েছে ব্যানার-পোস্টারের শহরে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার নির্বাচনে ইচ্ছুক প্রাথীদের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১.২ ও ৩ থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন, লাকী আক্তার ও জশনে আরা বুলবুল। ৪.৫ ও ৬ থেকে রেজুত আরা বেগম, ফারহানা ইয়াছমিন। ৭.৮ ও ৯ থেকে সাঈদা ইয়াছমিন, সজরুন্নাহার বুলু ও আঞ্জুমান আরা বেগম।
অপরদিকে সাধারণ কাউন্সিলর পুরুষ পদে ১ নং ওয়ার্ড থেকে এম নুরুস শফি, ৩নং ওয়ার্ড থেকে এইচএম ইফতেকারুল ইসলাম, বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ বশিরুল আইযুব ও মো: আক্কাস আহামদ। ৪নং ওয়ার্ড থেকে জাফর আলম, ফজল করিম চৌধুরী ও বাদল কান্তি সুশীল। ৫নং ওয়ার্ড থেকে বর্তমান কাউন্সিলর ফোরকানুল ইসলাম তিতু ও মোহাম্মদ বেলাল। ৬নং ওয়ার্ড থেকে মোহাম্মদ এমরান, জয়নাল আবেদীন ও মো: এনামুল হক মঞ্জু। ৭নং ওয়ার্ড থেকে গিয়াস উদ্দিন। ৮নং ওয়ার্ড থেকে বর্তমান কাউন্সিলর মুজিবুল হক ও ৯নং ওয়ার্ড থেকে বর্তমান কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও জিয়া উদ্দিন বাবুল।
আগামী ১৮ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। আগামী ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে পৌরসভার নির্বাচন। তবে গতকাল পর্যন্ত মেয়র পদে কোন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।
পৌরশহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলিগলি ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে আছে। পৌরশহরের সৌন্দর্য ফেরাতে এরইমধ্যে উপজেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামসুল তাবরীজ ৮ মার্চের মধ্যে পোস্টার-ফেস্টুন অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। দির্দেশ দেওয়ার পরও এখনো পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার রয়ে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পোস্টার না সরালে আইনানুগ ব্যবস্থানা নেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামসুল তাবরীজ।
পাঠকের মতামত: