নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি এবং প্রত্যক্ষভাবে দেশবিরোধী অপর্কমে জড়িত ছিলেন চকরিয়া-পেকুয়া (অবিভক্ত চকরিয়া উপজেলা) উপজেলার অন্তত ৬৬জন রাজাকার। যাদের একটি তালিকা জেলা প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ড থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সংরক্ষিত রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া পাকিস্তানী দোসর তথা এসব রাজাকার পরিবারের অনেকে বর্তমানে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে ঘাঁপতি মেরে ঢুকে পড়েছে। তাদের অনেকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন তথা নৌকা প্রতীক পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর এইদিনে স্বাধীনতাকামী মানুষের দাবি, অন্তত পক্ষে চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন তথা নৌকা প্রতীক দেয়ার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে ইচ্ছুক আগ্রহীদের পারিবারিক পরিচিতি ভালো ভাবে যাছাই বাছাই করতে হবে। তাই প্রার্থী তালিকা চুড়ান্ত করার আগে সবাইকে বিষয়টি দেখতে হবে।
চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার প্রাপ্ত তালিকায় রাজাকার হিসেবে যাদের নাম আছে, তাঁরা হলেন রওশন আলী, পিতা-হোসেন আলী, কালিয়ারা ঘোনা। জামানুল মোস্তাফা, পিতা-ফজল আহাম্মেদ, হাজিয়ান। বদরুজ্জামান, পিতা-ইমদাদ আহাম্মেদ, পালাকাটা। মোহাম্মাদুল হক, পিতা-এম আহাম্মেদ, কাকার সাং। ইদ্রিস আহাম্মেদ, পিতা-আলী মিয়া, চিরিঙ্গা। আব্বাস আহাম্মেদ, পিতা-শফিক আহাম্মেদ, কাহারিয়া ঘোনা। এজালার আহাম্মেদ, পিতা-আবদুস সোবহান। নুরুল ইসলাম, পিতা-আব্দুল হাকিম, বেহুলা মানিক চর। কামাল উদ্দিন, পিতা-আবদুস সোবহান, পালাকাটা। রশিদ আহাম্মেদ,পিতা-আলী মদন, কালাকাটা। কবির আহাম্মেদ, পিতা-মনিরুজ্জামান, লইখারচর। বাচ্চু মিয়া, পিতা-আলী মিয়া, হাজিয়া। আমির হোসেন, পিতা-তাইজোমগোলাল, চকোরিয়া। ওসমান গণি, পিতা-শাহ আহাম্মেদ, মগনামা। হোসেন আলী, পিতা-সাইদ আহাম্মেদ, লইখারচর। মুস্তাফিজুর রহমান, পিতা-ফকির মোহাম্মদ, পেকুয়া। কামাল উদ্দিন, পিতা-আমির হোসেন, বড় বাকিয়া। করিম দাদা, পিতা-সুলতান আহাম্মেদ, বড় বাকিয়া। নেজামুল হক, পিতা-আহাম্মেদুর রহমান, কাকরা। সাইফুল হক, পিতা-আবুল ফজর সিকদার, পেকুয়া। মোহাম্মদ হোসেন, পিতা-কাজী খুল্ল্যা মিয়া, বড় বাকিয়া। বদিউল আলম, পিতা-হাবিবুর রহমান, বড় বাকিয়া। ইউনুস আলী, পিতা-মীর মদিউজ্জামান, সিরাজপুর। ইকবাল হোসেন, পিতা-মুস্তাফিজুর রহমান, কাকারা। আকবার আহাম্মেদ, পিতা-সেনায়েত আলী, বড় বাকিয়া। দলিলুর রহমান, পিতা-ইসমাইল সিকদার, বেহুলা মানিক চর। জাফর আহাম্মেদ, পিতা-আলতাফ হোসেন, খিল সদর। মুজাহার আলী, পিতা-ওবাইদুল হাকিম, পাহড়চান্দা। মনিরুজ্জামান, পিতা-আলী হোসেন সিকদার, লইখারচর। নুরুল আবসার, পিতা-আব্দুর রশিদ, বেহুলা মানিক চর। শামসুল আলম, পিতা-ওয়াকিল আহাম্মেদ, মঘনামা। নুরুজ্জামান, পিতা-হাজী সেকেন্দার, মাইজঘোনা। সাইফুদ্দিন, পিতা-ডা. ফারুক আহাম্মেদ, হারবাং। আলী আহাম্মেদ, পিতা-কালা মিয়া, বদরখালী। আবু তালেব, পিতা-শফিকুর রহমান, বদরখালী। ইমাম শরীফ, পিতা-সুরা মিয়া, হারবাং। আকবার আহাম্মেদ, পিতা-ফজল করিম, বেহুলা মানিক চর। ফরিদ আলম, পিতা-ফারুক আহমেদ সিকদার, কাইজারবিল। রশিদ আহাম্মেদ, পিতা-বদরুজ্জামান, কাকরা। আবু তাহের, পিতা-মীর আবদুস সোবহান, কালাকটি। নাজির আহাম্মেদ , পিতা-আজিজ উল্লাহ, কাইজারবিল। আবদুস সামাদ, পিতা-করিমদাদ, বেহুলা মানিক চর। নুরুল আলম, পিতা-মুজাহার মিয়া, বদরখীল। আব্দুল হাসেম, পিতা-সাইদ আহম্মেদ, মেহারনামা। সিরাজ উল্লাহ হোসেন, পিতা-এম আহাম্মেদ, খুতাখালি। গোরা মিয়া, পিতা-আবুল ফজল, লুতাম। সবুর আহাম্মেদ, পিতা-চান মল্লিক, মেদাকাচালুয়া। জাফর আহাম্মেদ, পিতা-আবদুস সামাদ, উজানটিয়া। আহাম্মেদ হোসেন, পিতা-আব্দুর রশিদ, সিকদারপুর। সাকির আহাম্মেদ, পিতা-মীর আব্দুল জলিল, উত্তর লইখারচর। আবু আহাম্মেদ, পিতা-বদিউজ্জামান, বদরখালী। মনির আহাম্মেদ, পিতা-ওয়াজুদ্দিন, বদরখিল। নুরুল আলম, পিতা-সুলতান আহাম্মেদ, চিরাঙ্গা। নুরুল কবির, পিতা-সুলতান আহাম্মেদ, চিরাঙ্গা। শামসুল হুদা, পিতা-আশরাফ আলী, হাজিয়ান। আবুল হোসেন, পিতা-সাইদ আহাম্মেদ, মোহর নগর। নুরুজ্জামান, পিতা-এজাহারুল হক, বদরখালী। শফিকুর রহমান, পিতা-আকবার আলী, বদরখালী। নুরুল আবসার, পিতা-এম হক, মাইজপাড়া। আহাম্মেদ হোসেন, পিতা-আব্দুর রশিদ, সাহেরগঞ্জ। মোক্তার আলী, পিতা-এজাহারুল হক, মগনামা। সেলিম উল্লাহ, পিতা-আব্দুল হাকিম সওদাগর, কুটাখালী। আনোয়ার হোসেন, পিতা-ইয়াকুব আলী, বেলনা মানিক চর। আনোয়ার হোসেন, পিতা-আবুল আহাম্মেদ, বদরখালী। আনোয়ার হোসেন, পিতা-এম জামান, বেহুলা মানিক চর। নুরুল আনোয়ার, পিতা-আবু তাহের, কাকরা।
প্রসঙ্গত: কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১৪ সালে প্রকাশিত বিজয় স্মারকে রাজাকারদের নাম তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ.এস. এম. সামছুল আরেফিনের লেখায় এই বিজয় স্মারকে বলা হয়, বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি দলিল পত্রাদির সহযোগিতায় রাজাকারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। স্থানীয় জেলা কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে রক্ষিত নথিপত্র যাচাই করা হয়। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার রাজাকারের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এখানে শুধু কক্সবাজার জেলার তালিকা দেয়া হয়েছে। এই তালিকায় রাজাকারদের পরিচিতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রবল প্রতিপক্ষ হিসেবে শুধু রাজাকার নয়, পাকিস্থান বাহিনীর সহযোগিতাকারি, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, আলবদর, আল-সামস, মুজাহিদসহ আরো অনেকে সক্রিয় ছিলো। কিন্তু তালিকার সুবিধার্থে ঐ সকল ব্যক্তিকে ভাগ করে বিভিন্ন দলিলে যাদের সুষ্পষ্টভাবে রাজাকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজাকার বাহিনীতে যারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তারা একটি সরকারি প্রক্রিয়ায় রিক্রুট হয়েছিলেন, তারা একটি নিয়মিত বাহিনীর সদস্য ছিলেন এবং তারা একটি শপথ নামায় স্বাক্ষর করে ও স্বল্পকালীন একটি প্রশিক্ষণ সমাপ্ত কইর্ে কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন।
এই তালিকায় কক্সবাজার জেলার তৎকালীন ৭ উপজেলায় রাজাকারের সংখ্যা ৭১০ জন। তালিকাভুক্ত সব রাজাকারদের ঠিকানা দেয়া দেয়া রয়েছে তৎকালীন সময়ের ঠিকানা অনুযায়ী।
প্রথম দিন ছাপানো হয়েছিল রামু উপজেলার ১৩৭ জন রাজাকারের তালিকা। দ্বিতীয় দিন কক্সবাজার সদর উপজেলার ১৫৬ জন রাজাকার ছাপা হয়। তৃতীয় দিন প্রকাশ করা হয় উখিয়া উপজেলার ১৩৫ জন রাজারকারের তালিকা। চতুর্থ দিন কুতুদিয়া উপজেলার ১৩০ জন রাজাকারের নাম প্রকাশ হয়েছে। এবার দেয়া হয়েছে বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলার (চকরিয়া-পেকুয়া) ৬৬ জন রাজাকারের তালিকা। ক্রমান্বয়ে পরবর্তিতে বাকি ২ উপজেলার রাজাকারদের তালিকা দেয়া হবে। ##
পাঠকের মতামত: