নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
চকরিয়া উপজেলা সদরে গড়ে উঠা জামায়াত সমর্থিত সর্বপ্রথম বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জমজম হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে নেতৃত্ব ও চেয়ার দখলে রাখার লড়াইয়ের এখনো অবসান হয়নি। উল্টো ত্রিপক্ষের মধ্যে বিরোধ দিনদিন তুঙ্গে উঠেছে শুরু করেছে। এমনকি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায় উপেক্ষা করে বর্তমানে পেশিশক্তির কবলে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যে কোন মুহুর্তে ব্যাপক সংঘর্ষের আশংকায় রোগী ও রোগীর স্বজনরা চরম আতংকের মধ্যে রয়েছে। মাঝে মধ্যে হাসপাতাল এলাকায় পুলিশ টহর জোরদার করা হয়েছে। গত দু দিনে চকরিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে দু-পক্ষের লোকজন পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের উভয়ের বক্তব্য লিখিত আকারে প্রকাশ করেছে। কিন্তু তার সুরাহার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতাল ও তার আশপাশের এলাকায় বহিরাগত লোকজন ঘুরা ফিরা দেখা যাচ্ছে। আশংকা করা হচ্ছে জমজম হাসপাতাল দখল নিয়ে প্রভাবশালী দু-পক্ষই নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে স্ব স্ব বলয় সৃষ্টি করে যাচেছ।
চকরিয়ায় ৬০ শয্যা বিশিষ্ট বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে গ্র“পিং ও অবৈধভাবে পদ দখলের চেষ্টাসহ চলছে নানা অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে। প্রভাবশালী একপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের রায় উপেক্ষা করে এমডি পদে দায়িত্বে থাকা গোলাম কবির পেশিশক্তির বলয়ে অদ্যবধি স্বপদে বহাল থাকায় প্রতিষ্ঠানটির সেবা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নানাভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা.এসএম শওকত ওসমানের অনুসারী পক্ষ।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে চকরিয়া সরকারি হাসপাতাল সড়কের উত্তর পার্শ্বে স্বল্প পরিসরে অস্থায়ীভাবে একটি ভবনে যাত্রা শুরু করে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান চকরিয়া জম জম হাসপাতাল। ২০০০-০১ সালের দিকে মাতামুহুরী সেতুর দক্ষিনে নিজস্ব ভবনে এটি বৃহত্তর পরিসরে চালু হয়। বর্তমানে এটি ৬০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। শুরু থেকে দীর্ঘকাল বেশ ভালভাবেই চলছিল হাসপাতালটি। মাঝ পথে শুরু হয় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির নের্তৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে কলহ। এ কলহ ক্রমশ তীব্র আকার ধারণ করে। হাসপাতালের মুল অর্থাৎ রেজিষ্টার্ড শেয়ার হোল্ডার ৫০ জন, আর কো-শেয়ার হোল্ডার ২৫ জন।
হাসপাতালের বর্তমান পরিস্থিতি গত শুক্রবার বিকালে অভিজাত রেস্তোরা ডায়মন্ড হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলেছেন শেয়ার হোল্ডার ড. মহিউদ্দিন, ইঞ্জনিয়ার মো: নুর হোসেন, প্রফেসর রিদুয়ানুল হক, এডভোকেট নুরুল ইসলাম, এহছানুল আনোয়ার, শামসুদ্দিন, আবদুল করিম, ডা: এম এ হাসেম, সাংবাদিক ্িজএম আশেক উলাহ ও ডা: মো: রোকন উদ্দিনসহ আরো অনেকে। এসব শেয়ার হোল্ডাররা বলেন, হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠান লগ্ন থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন ডা: মাহবুব কামাল চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন আকতার আহমদ। এমডির পদ থেকে কৌশলে আকতার আহমদকে অপসারণ করা হলে ২০১৪ থেকে ১৬ সালের জন্য এমডি নির্বাচিত হন মুল শেয়ার হোল্ডার গোলাম কবির।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও জানান, ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে আবারও ডা: মাহবুব কামাল চৌধুরী সভাপতি হন এবং অস্থায়ী এমডি হন গোলাম কবির ও প্রফেসর রিদুয়ান (পরিচালক) অর্থ হন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় এ কমিটি একমাসের মধ্যে একজন বেতনভুক্ত এমডি নিয়োগ দেবেন এবং ভেতনভুক্ত এমডি যিনি হবেন তিনি একজন চিকিৎসকও হবেন। এইজন্য অস্থায়ী এমডি গোলাম কবিরকে নিয়মানুযায়ী নিযোগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ সহ যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয় পর্যদ হতে। কিন্ত অভিযোগ উঠেছে, গোলাম কবির তার এমডি পদ হতে সরে দাড়াতে না রাজ, তাই তিনি তার অবস্থানকে পাকাপুক্ত করতে বেতনভুক্ত এমডি নিয়োগ দিতে কোন বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেননি। এ নিয়ে শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে শুরুহয় বিরোধ। পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করায় পর্ষদের চেয়ারম্যান মাহবুব কামাল চৌধুরী উক্ত পর্ষদ থেকে পদত্যাগের চেষ্টা করেন। কিন্তু সিংহভাগ শিয়ার হোল্ডারদের অনুরোধে তিনি পদত্যাগ করেননি।
এদিকে এমডি গোলাম কবির ব্যাপক দূর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেওয়ায় পরিচালনা পরির্ষদ তার নিকট হতে আর্থিক লেনদেনের ক্ষমতা খর্ব করেন। হাসপাতালের বেশিরভাগ শেয়ার হোল্ডারের দাবী, গোলাম কবিরের নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক দুর্নীতিতে প্রতিষ্টানটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তার নিকট থেকে আর্থিক ক্ষমতা খর্ব করার ঘটনাটি হাইকোট পর্যন্ত গড়িয়েছেন তিনি। আর্থিক এখাতিয়ার খর্বের বৈধতা চালেঞ্জ করে তার পক্ষে হাইকোর্ট বিভাগে রিট দাখিল করেন সিরাজুল ইসলাম গং।
হাসপাতালের শেয়ার হোল্ডার সাংবাদিক জিএম আশেক উলাহ জানান, মহামান্য হাইকোর্টে দায়েরকৃত ওইরিট তাদের বিপক্ষে (রিটকারীদের বিপক্ষে) রায় দিলে তারা আবার আপীল বিভাগের আশ্রয় নেয়। সেখানেও তারা আইনীভাবে হেরে যায়। কিন্তু সর্বোচ্ছ আদালতের নির্দেশও অমান্য করে গোলাম কবির স্বপদে বহাল থাকতে অপচেষ্টা করে।
ডা: মো: রোকন উদ্দিন জানান, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পেশিশক্তির দিয়ে অবৈধভাবে হাসপাতালের এমডি পদে বহাল রয়েছেন গোলাম কবির।
জানা গেছে, চলতিবছরের গত ৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার হাসপাতালের সিংহভাগ শেয়ার হোল্ডার বর্তমান অবৈধ এমডি গোলাম কবিরকে হাসপাতাল থেকে বের করে দিলে বিষয়টি চকরিয়া থানা পর্যন্ত গড়ালে থানার ওসি মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী হাসপাতালের অবৈধ এমডি গোলাম কবিরকে বাদ দিয়ে সৃষ্ট তিনটি গ্র“প হতে ২জন করে ৬জনকে একমাসের জন্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তারা ১৭ ফেব্রয়ারি হতে আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্বপালন করবেন। ওই পরিচালনা পরিষদ এক মাসের মধ্যে একটি নির্বাচন দেবেন, নির্বাচনে বিজয়ীরাই হাসপাতাল পরিচালনা করবেন।
হাসপাতালের সিংহভাগ শেয়ার হোল্ডার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সিদ্ধান্তের পরও জোর করে স্বপদে বহাল রয়েছেন গোলাম কবির। অধিকাংশ শেয়ার হোল্ডারদের মতে, গোলাম কবিরে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ফলে হাসপাতালের শেয়ার হোল্ডার ও কো-শেয়াররা তিন গ্র“পে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, কেবল মাত্র এমডি পদ দখলে রাখতে তিনি নানা শঠামীর আশ্রয় নেন। অবৈধভাবে এমডি পদে বহাল থাকতে গোলাম কবির বেপরোয়া অর্থ ব্যবহার করছেন প্রতিষ্ঠানের।
পাঠকের মতামত: