ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া ও পেকুয়ায় এনজিওগুলো মানছে না সরকারি নির্দেশনা

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া (কক্সবাজার) ::  কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়ে জীবিকা হারানো গ্রামীণ এলাকার শ্রমজীবী ও হতদরিদ্র পরিবারগুলো বর্তমানে এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তির চাপে অনেকটাই দিশেহারা। করোনা পরিস্থিতির কারণে এসব পরিবারগুলোর কর্তারা মাঠে-ঘাটে কোন কাজ-কর্ম না পেয়ে ঘরবন্দি জীবন-যাপন করছেন। এই পরিস্থিতিতে পরিবার সদস্যদের দু-বেলা ভাতের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। তার ওপর এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধের চাপে অনেকটাই চিড়েচ্যাপ্টা হওয়ার মতোই অবস্থা হতদরিদ্র ও শ্রমজীবী পরিবারগুলোর।

অবশ্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন চলতি জুন মাস পর্যন্ত এনজিওগুলোর সবধরণের ঋণের কিস্তি টাকা মাঠপর্যায় থেকে উত্তোলন বন্ধ রাখতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এর পরও কিছুসংখ্যক এনজিও সরকারী এই নির্দেশনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতিদিনই মাঠপর্যায়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ঋণের কিস্তির টাকা তুলতে। এতে বিভিন্নস্থানে গ্রামীণ সচেতন লোকজনের সঙ্গে এনজিও মাঠকর্মীর মধ্যে বাদানুবাদের ঘটনাও ঘটছে। অনেক সময় সচেতন লোকজন তাৎক্ষণিক বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তার কানে পৌঁছাচ্ছেন এমন খবর শোনা মাত্রই সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মী আইনি ঝামেলায় পড়ার ভয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করছেন। গত কয়েকসপ্তাহ ধরে প্রশাসনের নির্দেশনার সঙ্গে লুকোচুরি খেলায় মত্ত রয়েছেন এনজিওগুলোর মাঠকর্মীরা। পৌরসভা ছাড়াও চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামে বর্তমানে এই অবস্থা বিরাজমান।

সচেতন যুবক বরইতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক মারুফুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘করোনা সংকটের সময় কর্মহারা দরিদ্র পরিবারগুলোর কাছ থেকে চলতি জুন মাস পর্যন্ত এনজিও ঋণের কিস্তির টাকা আদায় না করতে উপজেলা প্রশাসন থেকে লিখিতভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশনা মানছেন না এনজিওগুলো। বৃহস্পতিবার সকালে ইউনিয়নের তেইল্লাকাটা গ্রামে ঋণের কিস্তির টাকা তুলতে আসেন এনজিও সংস্থা আশার কর্মীরা। এ সময় তাদেরকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় চলতি মাস পর্যন্ত কিস্তি না তোলার নির্দেশনা রয়েছে প্রশাসনের। এর পরও তার সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন আশার কর্মীরা। পরে ইউএনও’র দপ্তরে খবর পৌঁছানোর বিষয়টি আঁচ করতে পেরে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন ওই কর্মীরা।

একই তথ্য দেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন মঞ্চ সদস্য জালাল উদ্দিন। তিনি জানান, চকরিয়া পৌরসভায় বর্তমানে ১৪ দিনের লকডাউন কর্মসূচী চলছে। কিন্তু এনজিও সংস্থা গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাকের কর্মীরা সকালে কিস্তির টাকা তুলতে আসেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাহারিয়া ঘোনার খামার পাড়ায়। এ সময় তাদেরকে সরকারি নির্দেশনা মনে করিয়ে দিলেও বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে জোরপূর্বক কিস্তির টাকা আদায় করেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত সটকে পড়েন তারা।’

একই অবস্থা চলছে জেলার পেকুয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নেও। সেখানেও কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবী ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর কাছ থেকে প্রতিনিয়ত ঋণের কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য বেশ চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন পেকুয়ার সচেতন নাগরিক সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন।

করোনাকালে চলতি জুন মাস পর্যন্ত ঋণের কিস্তির টাকা আদায় বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা এনজিও সমন্বয়কারী মোহাম্মদ নোমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়টি স্ব স্ব এনজিওকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরও কোন এনজিও যদি জোরপূর্বক কিস্তির টাকা আদায় বা চাপ প্রয়োগ করে থাকেন তা খুবই দুঃখজনক। অন্তত চলতি জুন মাস পর্যন্ত ঋণের কিস্তির টাকা আদায় বন্ধ রাখতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘করোনার এই সময়ে মানুষ অনেকটা কর্মহীন। তাই চলতি জুন মাস পর্যন্ত গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠির কাছ থেকে সব এনজিও এবং সমবায় সমিতি ঋণের বিপরীতে কিস্তির টাকা আদায় করতে পারবে না মর্মে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। তারই আলোকে চলতি মাসের শুরুতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এনজিওগুলোকে।’

ইউএনও বলেন, ‘নির্দেশনা অমান্য করে যেসব এনজিও গ্রামে গ্রামে কিস্তির টাকা তুলতে যাচ্ছেন, সেসব এনজিওর খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও যদি কিস্তির টাকা তুলতে গিয়ে কোন এনজিও কর্মী অনাকাঙ্খিত ঘটনার শিকার হন, তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কোন ধরণের আইনী সহায়তা দেওয়া হবে না। একইসাথে স্ব স্ব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এলাকায় যে কোন এনজিও কর্মী ঋণের কিস্তির টাকা তুলতে গেলে আটক করে আমাকে খবর দিতে।

ছোটন কান্তি নাথ

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

তারিখ-১১ জুন ২০২০ইং।

মোবাইল-০১৮২০০৩১৪৩৫।

পাঠকের মতামত: