নিজস্ব প্রতিবেদক ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিগত দিনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম এমএ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজের সভাপতিত্বে বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন হক জেসি চৌধুরী, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক চুট্টু। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা, চকরিয়া প্রেস কাবের সভাপতি এম আর মাহমুদসহ সরকারী-বেসরকারী দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা।
সভায় বিভিন্ন বক্তারা চকরিয়া উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তারা বলেন, অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে চকরিয়া উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। প্রতিনিয়ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি থানায় গিয়ে যথাযথ আইনি প্রতিকার পাচ্ছেন না। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ করে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পৌরশহরের চিরিঙ্গায় লাগানো কোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। অনেক ক্যামেরা চুরি হয়ে গেছে। এমনকি এসব ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে কারা রয়েছে তাও নিশ্চিত নয়। এই পরিস্থিতিতে পৌরশহর চিরিঙ্গা ছিনতাইকারী, মাদক কারবারি, টোকাইসহ উঠতি বয়সের অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীরাও নির্বিঘ্নেই ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ রকমারী মাদকের খোলা হাট ও ভ্রাম্যমাণে বীরদর্পে মাদকের কারবার করে যাচ্ছে। পুরো চকরিয়ায় মাদকের জোয়ারে ভাসলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। এ থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে সামনে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হবে সকলকে।
এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, অচিরেই চকরিয়াকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিক দিয়ে ভাল একটি ফলাফল উপহার দিতে সক্ষম হবে পুলিশ। এজন্য সর্বসাধারণের আন্তরিক সহায়তা কামনাসহ কোথায় কী অপরাধ হচ্ছে তা পুলিশকে জানানোর জন্য আহবান জানাচ্ছি।’
সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে কোন মূল্যে স্বাভাবিক রাখতে আমাদের সবাইকে স্ব স্ব জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। কোন সংস্থা বা দপ্তর একার পক্ষে এতবড় উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ কঠিন।
ইউএনও বলেন, আগামী চকরিয়া পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলবে। এজন্য পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। এছাড়াও অচল হয়ে পড়া চকরিয়া পৌরশহরের সিসি ক্যামেরাগুলোও সচল করা হবে। এসব ক্যামেরা প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করারও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম বলেন, ‘একটি আধুনিক চকরিয়া উপহার দিতে আসুন যার যার অবস্থান থেকে আমরা উদ্যোগী হই। যেখানে থাকবে না কোন ধরণের অপরাধ, মাদকের কারবার, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।’
এমপি বলেন, আজকের এই মাসিক সভায় যেসব অভিযোগ-অনুযোগ উত্থাপিত হয়েছে, আশা করি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বিষয়ের আলোকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। যে কোন মূল্যেই চকরিয়ার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। এজন্য যেখানে পুলিশের কঠোর ভূমিকার প্রয়োজন পড়বে, তাৎক্ষণিক সেই ব্যবস্থাই নিতে হবে।’
পাঠকের মতামত: